|| সারাবেলা প্রতিবেদন, ঢাকা ||
বর্তমান বন্যা পরিস্থিতিকে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য কমপক্ষে ছয়মাসের খাদ্যসহায়তা ও পুনর্বাসনের জন্য দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে প্রাণ ও প্রকৃতি সুরক্ষা মঞ্চ।
প্রতিষ্ঠানটির আহ্বায়ক ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়, সরকারের পক্ষ থেকে বানভাসী মানুষকে রক্ষায় ত্রাণের ব্যবস্থা করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। তার ওপর বন্যা পরিস্থিতি অনেক জায়গাতেই ত্রাণ বিলিতে বাধাগ্রস্ত করছে। এই দুর্যোগে মানুষকে বাঁচিয়ে রাখাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, একেতো কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারির কারণে দেশের শ্রমজীবী, ভুমিহীন, দিনমজুরদের মত নিম্ন আয়ের মানুষরা খুবেই কষ্টে আছে। তার ওপর বন্যা মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে দেখা দিয়েছে। মানুষের জীবন-জীবিকা একেবারে চরমতর বিপর্যয়ে পড়েছে। দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটানোর মত খাবার সংকটের পাশাপাশি সুপেয় পানির হাহাকার পড়েছে। ক্ষেতের ফসল গবাদিপশু-পাখি ও মৎসখামারীদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। যা খাদ্য নিরাপত্তাকে ফেলেছে বড় রকমের হুমকিতে।
দেশের প্রায় এক তৃতীয়াংশ এলাকা এখন বন্যার পানিতে ডুবে আছে জানিয়ে প্রাণ ও প্রকৃতি সুরক্ষা মঞ্চ বলছে, ভারত থেকে আসা উজানি নদীর পানি আর বর্ষার বৃষ্টিতেই প্রতি বছর ভাটির দেশ ডুবে যায় বন্যায়। সরকারও বলছে, এবারের বন্যা হবে দীর্ঘস্থায়ী।বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, ১৯৯৮ সালের চেয়েও এবারের বন্যা ভয়াবহ রূপ নিতে যাচ্ছে। পানি বেশী উঁচুতে না উঠলেও পানি না সরে আটকে থাকবে মাঠেঘাটে। জনজীবন পড়বে দু:সহ এক পরিস্থিতিতে।
সাধারণত: জুন জুলাইয়ের বন্যা এক সপ্তাহ থেকে দশদিনের মত স্থায়ী হয়। মূলত: সিলেটের হাওড় এলাকা এবং ব্রহ্মপূত্র ও তিস্তা অববাহিকা জুড়ে এই বন্যা হয়। কিন্তু এবারে চট্টগ্রাম, পদ্মার পাড়ের জেলাগুলো, উত্তরাঞ্চলের আত্রাই অববাহিকায় পানি চলে এসেছে। শরীয়তপুর, মাদারীপুরেও বন্যার পানি পৌঁছেছে। এমনকি রাজধানী ঢাকাতেও পানি ঢুকতে শুরু করেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, রাজধানীও বন্যায় পড়তে যাচ্ছে।
উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে না হতেই এবারে আগস্ট-সেপ্টেম্বরের দিকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বন্যা বা জলাবদ্ধতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি হলে দেশের অর্ধেকেরও বেশী মানুষ দুর্ভোগে পড়বে।
প্রাণ ও প্রকৃতি সুরক্ষা মঞ্চসংশ্লিষ্টরা মনে করেন, ভাটির দেশ হিসেবে উজানের ঢলের পানি থেকে সৃষ্ট এমন বন্যা কোনভাবেই এড়ানো সম্ভব না। তার ওপর নদীবিনাশী বাঁধ, যেখানে-সেখানে স্লুইস-কালভার্ট-সেতু তৈরি করে অবকাঠামোকেন্দ্রিক যে উন্নয়ন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে তাতে বন্যা ফি বছর হচ্ছে দীর্ঘস্থায়ী। পানি সহজে সাগরে যেতে না পেরে আটকে যাচ্ছে দেশের মাঠঘাটে। যা বন্যার নামে তৈরি করছে জলাবদ্ধতা।
এই পরিস্থিতিতে উজানের দেশগুলোর সঙ্গে কার্যকর জলবায়ুতথ্য-উপাত্তের আগাম বিনিমিয়, যৌথভাবে পানি ব্যবস্থাপনায় গুরুত্ব দেওয়ার দাবিও করেছে প্রাণ ও প্রকৃতি সুরক্ষা মঞ্চ।