সরাকারি তালিকায় বাদ পড়ায় মৃত্যুতালিকায় নাম লেখালেন বীর মুক্তিযোদ্ধা

সকালে তালিকা টানানোর খবরটি সাহার আলী শোনেন দুপুরের ‍কিছুটা সময় আগে। এরপরপরই বৃহস্পতিবার দুপুরে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে মারা যান এই মুক্তিযোদ্ধা। সাহার আলী স্ত্রী, পাঁচ মেয়ে ও এক ছেলে রেখে গেছেন। রাষ্ট্র থেকে তাঁর মুক্তিযোদ্ধা গেজেট নম্বর-৩০৩৪।

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, নওগাঁ ||

সরাকারি তালিকায় নাম বাদ দেয়ায় মৃত্যুতালিকায় নাম লেখালেন ধামইরহাটের বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহার আলী। তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও স্বজনরা বলছেন, যে মানুষটি জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন। এতোদিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি-সুবিধা ভোগ করেছেন। হঠাৎ করেই সরকারসংশ্লিষ্টদের করা তালিকা থেকে বাদ পড়ার ধাক্কাটা সামলাতে পারেননি। তাই হয়তো মৃত্যুকেই বেছে নিয়েছেন এমন অপমান থেকে বাঁচতে।

নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। বৃহস্পতিবার (২৫শে ফেব্রুয়ারি) সকালে। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) গঠিত কমিটির করা এই প্রতিবেদন সাঁটিয়ে দেয়া হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অফিসের নোটিশ বোর্ডে। ওই তালিকায় বাদ দেয়া হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহার আলীর নাম। কারন হিসেবে বলা হয়, সাক্ষী ও মুক্তিযোদ্ধার দেয়া বক্তব্য সঠিকতা না পাওয়ায় কমিটির সভাপতি ও সদস্যদের সর্বসম্মতিক্রমে বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহার আলীর নাম বাদ দেয়া হয়েছে।

সকালে তালিকা টানানোর খবরটি সাহার আলী শোনেন দুপুরের ‍কিছুটা সময় আগে। এরপরপরই বৃহস্পতিবার দুপুরে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে মারা যান এই মুক্তিযোদ্ধা। সাহার আলী স্ত্রী, পাঁচ মেয়ে ও এক ছেলে রেখে গেছেন। রাষ্ট্র থেকে তাঁর মুক্তিযোদ্ধা গেজেট নম্বর-৩০৩৪।

প্রসঙ্গত চলতি মাসের ৬ই ফেব্রুয়ারি ধামইরহাট উপজেলার ৮৯ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার যাচাই-বাছাই সম্পন্ন করে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের গঠিত সংশ্লিষ্ট কমিটি। প্রতিবেদন ফরমে কমিটির সদস্যদের স্বাক্ষর চলতি মাসের ২২ তারিখে দেখানো হলেও তা প্রকাশ করা হয় ২৫শে বৃহস্পতিবার। এতে ৫৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম বাতিল করা হয়। বাতিলের তালিকায় ছিল বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহার আলীর নামও।

এদিকে, বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলার ধামইরহাট ইউনিয়নের অন্তর্গত নিজ গ্রাম নেউটা গোপাইডাঙ্গায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয় সাহার আলীকে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইউএনও গণপতি রায়, ধামইরহাট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নুরুল ইসলাম, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আবু তাহের, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ফরমুদ হোসেন প্রমুখ।

বাবাকে একজন  প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে সাহার আলীর ছেলে দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল -জামুকা কর্তৃক যাচাই-বাছাই প্রতিবেদনে বাতিল তালিকায় নাম থাকার কথা শুনে আমার বোনের বাড়ি সাহাপুর গ্রামে বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে স্ট্রোক করে মারা যান তিনি।’

সাহার আলীর যুদ্ধসময়ের সহযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ফরমুদ হোসেন জানান, ‘সাহার আলী ছিলেন একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। তাঁর নাম এভাবে তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি তিনি সহ্য করতে পারেননি। একজন মুক্তিযোদ্ধার ওপর এটি অবিচার বলে মনে করি।’

এ ব্যাপারে ধামইরহাটের ইউএনও ও মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটির সদস্য সচিব গণপতি রায় বলেন, ‘যাচাই-বাছাই প্রতিবেদন প্রকাশের সঙ্গে সাহার আলীর মৃত্যুর কোনো যোগসূত্র নেই। তিনি একজন বয়স্ক ব্যক্তি। অসুস্থতার কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া প্রকাশিত এই তালিকা চূড়ান্ত নয়। এটা প্রাথমিক তালিকা মাত্র। যাঁরা প্রাথমিক তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন, চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের আগে আপিল করবার সুযোগ রয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহার আলীর মৃত্যুর পর তাঁকে সরকারের পক্ষ থেকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।’

সংবাদ সারাদিন