বঙ্গবন্ধুর খুনি মাজেেদের ফাঁসি কার্যকর

||সারাবেলা প্রতিবেদন, ঢাকা||
দীর্ঘদিন পালিয়ে থেকেও বাঁচতে পারলেন না বঙ্গবন্ধুর খুনি আবদুল মাজেদ। আজ থেকে প্রায় ৪৫ বছর আগে ১৫ই আগস্টের রাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যায় সরাসরি অংশ নেওয়ার দায়ে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে তাকে। রোববার প্রথম প্রহরে, অর্থাৎ ১২টা ১ মিনিটে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এতথ্য নিশ্চিত করেছেন কারাধক্ষ্য মাহবুবুল ইসলাম।
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত যে ছয় আসামি পালিয়ে ছিলেন, সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন মাজেদ তাদেরই একজন। অন্য খুনিদের মত মাজেদকেও ‘পুরস্কার হিসেবে’ সরকারি চাকরিতে উঁচু পদ দেওয়া হয়েছিল জিয়ার শাসনসময়ে।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর গত ৭ এপ্রিল ভোরে ঢাকার গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ৭২ বছর বয়সী মাজেদকে। দীর্ঘদিন পলাতক থেকে আপিলের সুযোগ হারানো মাজেদ রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করলে তাও খারিজ হয়ে যায়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর এই পলাতক খুনিকে গ্রেপ্তার করে শাস্তি নিশ্চিত করতে পারার বিষয়টি মুজিববর্ষে জাতির জন্য শ্রেষ্ঠ উপহার। এ বছরই স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছে বাংলাদেশ, যার সমাপ্তি ঘটবে ২০২১ সালের ২৬শে মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে তার পরিবারের বেশীর ভাগ সদস্যসহ হত্যার সময়ে বিদেশে থাকায় তার দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা প্রাণে বেঁচে যান। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেই ওই বছররে ১২ই নভেম্বর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে সরকার। ২রা অক্টোবর ধানমন্ডি থানায় মামলা করেন বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী মহিতুল ইসলাম।
১৯৯৮ সালের ৮ই নভেম্বর ঢাকার তখনকার জেলা ও দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুল এ মামলার রায়ে আবদুল মাজেদসহ ১৫ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। এরপর ২০০১ সালের ৩০শে এপ্রিল হাই কোর্টের রায়ে ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল থাকে। তাদের মধ্যে আসামি আজিজ পাশা ২০০২ সালে পালিয়ে থাকতেই জিম্বাবুয়েতে মারা যান।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০০৯ সালের ১৯শে নভেম্বর চূড়ান্ত রায়ে হাই কোর্টের সিদ্ধান্ত বহাল রাখলে পাঁচ আসামি রিভিউ আবেদন করেন। তা খারিজ হয়ে যাওয়ার পর ২০১০ সালের ২৮শে জানুয়ারি ফাঁসিতে ঝুলিয়ে আসামি সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, মহিউদ্দিন আহমদ (ল্যান্সার), এ কে বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিনের (আর্টিলারি) মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে আবদুল মাজেদ ছাড়াও খন্দকার আবদুর রশিদ, এ এম রাশেদ চৌধুরী, শরিফুল হক ডালিম, এসএইচএমবি নূর চৌধুরী, ও রিসালদার মোসলেম উদ্দিন খান সে সময় পালিয়ে ছিলেন। শেষ পর্যন্ত মাজেদ ধরা পড়ে ফাঁসিকাষ্ঠে গেলেও বাকিদের শাস্তি নিশ্চিত করার কাজটি বাকিই রয়ে গেল।
এই পাঁচ আসামির মধ্যে রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে এবং নূর চৌধুরীর কানাডায় আছেন। তাদের ফিরিয়ে আনতে সরকারের তরফ থেকে যোগাযোগ করা হলেও যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা সরকারের সাড়া মেলেনি।
আরেক আসামি মোসলেম উদ্দিন পাকিস্তানে আছেন বলে তথ্য ছিল ইন্টারপোলের বাংলাদেশ শাখা ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) কাছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের তরফ থেকে যোগাযোগ করা হলেও পাকিস্তান কোনো জবাব দেয়নি।
আর রশিদ ও ডালিম এখন কোথায় আছেন, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য এখনও জানতে পারেনি সরকার।#

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন