|| অর্থবাজার প্রতিবেদন, ঢাকা ||
করোনা অভিঘাতে বিপর্যস্ত অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতেও রাস্ট্রের খরচ বাড়ানো হলো গেল অর্থবছরের থেকে ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ। সেই হিসাবে ২০২০-২১ অর্থ বছরে রাষ্ট্রের আয়-ব্যয়ের হিসাব তথা বাজেটের আকার দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রের ২০২০-২১ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত এই হিসাব উপস্থাপন করেন। এরআগে জাতীয় এই বাজেট মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয় এবং রাস্ট্রপ্রতি আবদুল হামিদ তাতে অনুস্বাক্ষর করেন।
এমন এক সময়ে সরকারকে এই বাজেট দিতে হলো যখন কিনা প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস সংক্রমণে বিপর্যস্ত বিশ্ব অর্থনীতি। দেশের সামনেও গভীর এক অনিশ্চয়তা। আর এ্ই বিবেচনা থেকে এবারের বাজেটের শিরোনাম করা হয়েছে ‘অর্থনেতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথ পরিক্রমা’।
করোনা সংক্রমণ এড়াতে সীমিত সংখ্যক সংসদ সদস্যকে নিয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় অনুষ্ঠিত হয় এবারের বাজেট অধিবেশন; অধিবেশন কক্ষে সংসদ সদস্যদের বসতে হয়েছে দূরত্ব রেখে, মুখে মাস্ক আর হাতে গ্লাভস পরে। আগের বছরগুলোতে বাজেট দেওয়ার আগে অর্থমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে অধিবেশন কক্ষে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার তা হয়নি।
নতুন অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত এই ব্যয় বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১৩.২৪ শতাংশ বেশি। টাকার হিসাবে এই অংক দেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ১৭ দশমিক ৯ শতাংশের সমান।
বিদায়ী তথা ২০১৯-২০ অর্থবছরে মুস্তফা কামালের দেওয়া বাজেটের আকার ছিল ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটের ১৮ শতাংশ বেশি এবং জিডিপির ১৮ দশমিক ৩ শতাংশের সমান।
বৃহস্পতিবার বিকালে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরে আয়-ব্যয়ের প্রস্তাবিত হিসাব বা বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী।
উন্নয়ন খরচ
এবারের বাজেটে উন্নয়ন খরচ ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৫ হাজার ০৪৩ কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত উন্নয়ন ব্যায় থেকে প্রায় ৬ দশমিক ২৭ শতাংশ বেশি। মোট্ উন্নয়ন খরচের মধ্যে রাষ্ট্রের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবাযনে খরচ হবে ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা।যা ইতোমধ্যেই অনুমোদন করেছে সরকার।
রাষ্ট্র ও সরকারের পরিচালন খরচ তথা অনুন্নয়ন ব্যয়
নতুন অর্থবছরে রাষ্ট্র ও সরকারের পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৪৮ হাজার ১৮০ কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত অনুন্নয়ন বাজেটের চেয়ে প্রায় ১৮ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে ৬৫ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধেই যাবে, যা মোট অনুন্নয়ন ব্যয়ের প্রায় ১৯ শতাংশ।
আয় আসবে যেসব খাত থেকে
রাজস্ব ও বিদেশি অনুদান থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে মোট ৩ লাখ ৮২ হাজার ১৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে জনগনের কাছ থেকে কর ও ভ্যাট বাবদ রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। এই অংক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত রাজস্ব আয়ের থেকে সাড়ে ৮ শতাংশ বেশি।
মোট রাজস্ব আয়ের মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে কর হিসেবে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে। যা মোট বাজেটের ৫৮ শতাংশের বেশি।
মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে, ১ লাখ ২৫ হাজার ১৬২ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে।বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এই পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৯ হাজার ৮৪৬ কোটি টাকা।
আয়কর ও মুনাফায় আরোপিত কর থেকে রাজস্ব আসবে ১ লাখ ৩ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা। বিদায়ী সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা।
অন্যদিকে প্রস্তাবিত নতুন বাজেটে আমদানি শুল্ক থেকে ৩৭ হাজার ৮০৭ কোটি টাকা, সম্পূরক শুল্ক থেকে ৫৭ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা, রপ্তানি শুল্ক থেকে ৫৫ কোটি টাকা, আবগারি শুল্ক থেকে ৩ হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা এবং অন্যান্য কর ও শুল্ক থেকে ১ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলছেন, সঙ্কট দীর্ঘ হলে ক্ষতির মাত্রাও বাড়বে। তারপরও নতুন অর্থবছরের সম্ভাব্য ব্যয়ের ৬৬ শতাংশ রাজস্ব খাত থেকে পাওয়ার আশা করা হচ্ছে।
বিদেশি অনুদান
প্রস্তাবিত বাজেটে বিদেশি অনুদান পাওয়ার আশা করা হচ্ছে ৪ হাজার ১৩ কোটি টাকা।
বাজেট ঘাটতি মেটাতে সম্ভাব্য সহায়ক ঋণখাত
নতুন বাজেটে আয় ও ব্যয়ের হিসাবে সামগ্রিক ঘাটতি থাকছে প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৬ শতাংশের মত। অর্থমন্ত্রী জানান, সাধারণত ঘাটতির পরিমাণ ৫ শতাংশের মধ্যে রেখে বাজেট প্রণয়নের চেষ্টা হলেও এবার তা সম্ভব হয়নি।
এবারের বাজেটের বিশাল এই ঘাটতি মেটাতে বিদেশ থেকে ৮০ হাজার ১৭ কোটি টাকা এবং দেশীয় উৎস থেকে ১ লাখ ৯ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা ঋণ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
দেশীয় উৎসের মধ্যে ব্যাংক থেকে ঋন নেওয়া হবে ৮৪ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে নেওয়া হবে আরও ৫ হাজার কোটি টাকা।
মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধি
বিদায়ী অর্থবছরের ৮ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হলেও কোভিড-১৯ দুর্যোগের মধ্যে তা সংশোধন করে ৫ দশমিক ২ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। করোনা অভিঘাত মেনেই অর্থমন্ত্রীর আশা নিত্যপণ্যের দাম তথা মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৪ শতাংশের মধ্যে আটকে রেখে বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ২ শতাংশ অর্জন করা সম্ভব হবে।
আরো তথ্য আসছে…