|| সারাবেলা প্রতিনিধি ||
এক প্রার্থীর হয়ে ভোটারদের তেল দিতে গিয়েছিলেন এক কর্মী। তেলসহ ওই কর্মীকে ধরে পুলিশে দেন স্থানীয় জনতা। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত তাঁকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। রোববার রাত ১১টার দিকে কুষ্টিয়া পৌরসভার বারখাদা ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে মাগুরাতে ভোটের মাঠে শুধুই আওয়ামী লীগ। এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ প্রার্থী অর্ধশত পথসভা করলেও প্রকাশ্যে কোনো সভা করতে পারেননি বিএনপির প্রার্থী। ভোটাররা বলছেন, এই পৌরসভায় শুধুই নৌকা।
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, এই পৌরসভার ভোটে ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী রবিউল ইসলাম। রবিউল বোতল প্রতীকে ভোট করছেন। রোববার রাতে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে তাঁর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যদের দিয়ে এলাকার নারী ভোটারদের মাঝে তেলের বোতল বিতরণ করছেন। রাত ৯টার দিকে রবিউলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য রিয়াজুল নারকেল তেলের বোতলসহ ধরা পড়েন।
ভ্রোম্যমাণ আদালত ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ১৬ই জানুয়ারি কুষ্টিয়া পৌরসভার নির্বাচনে ভোট হবে। বারখাদা ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদপ্রার্থী রবিউল ইসলাম বোতল প্রতীকে অংশ নিচ্ছেন। রবিউলের কর্মী রিয়াজুল নারী ভোটারদের বোতলভর্তি তেল দিতে গেলে তাকে হাতেনাতে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেন এলাকাবাসী।
দণ্ডপ্রাপ্ত রিয়াজুল ইসলাম ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী রবিউল ইসলামের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য। রবিউল কাউন্সিল পদে বোতল প্রতীকে নির্বাচন করছেন। রিয়াজুল বারখাদা পূর্বপাড়া এলাকায় মৃত শুকুর আলী ছেলে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন কুষ্টিয়া সদরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সবুজ হাসান।
কুষ্টিয়া সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সবুজ হাসান বলেন, রিয়াজুল ইসলাম পৌরসভা নির্বাচন আচরণ বিধিমালা ২০১৫–এর ১৭(ক) ধারা লঙ্ঘন করেছেন। এ কারণে তাঁকে দণ্ড দেওয়া হয়েছে। আর তাঁর কাছ থেকে ১৭৪ বোতল নারকেল তেলের বোতল জব্দ করা হয়।
এদিকে মাগুরা প্রতিনিধি জানান, মাগুরা পৌরসভা নির্বাচনে মাঠে এখন পর্যন্ত শুধুই নৌকার প্রার্থী প্রচারণায় রয়েছেন। কিন্তু প্রকাশ্যে কোনো সভা করতে পারেননি বিএনপির প্রার্থী।
ঢাকঢোল পিটিয়ে, নেতা-কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী। একই দিনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন বিএনপির প্রার্থী। তিনি এসেছিলেন একেবারেই দলবল ছাড়া। দলের পদধারী কোনো নেতা তাঁর সঙ্গে ছিলেন না। একই রকম অবস্থা ছিল ইসলামী আন্দোলন–সমর্থিত প্রার্থীর। এ পরিস্থিতি মাগুরা পৌরসভা নির্বাচনের।
মনোনয়নপত্র দাখিলের তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। দ্বিতীয় ধাপে ১৬ই জানুয়ারি জেলার একমাত্র পৌরসভায় ভোট গ্রহণ। তবে এত দিনেও প্রচারণার পরিস্থিতি বদলায়নি। ভোটের মাঠে একদিকে উৎসবের আমেজ, অন্যদিকে আতঙ্ক। আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রতিদিন একাধিক পথসভা-উঠান বৈঠক করছেন। এদিকে এখনো দলবল নিয়ে প্রকাশ্য প্রচারে দেখা যাচ্ছে না অন্য দুই দলের প্রার্থীকে।
এখানে নৌকা প্রতীকে লড়ছেন বর্তমান মেয়র জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খুরশীদ হায়দার (টুটুল)। তাঁর পক্ষে মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা। ব্যানার, পোস্টার থেকে শুরু করে প্রচারণার সব কৌশলেই এগিয়ে রয়েছে নৌকা।
আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলার জ্যেষ্ঠ নেতাদের নেতৃত্বে ওয়ার্ডভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা কমিটি হয়েছে। প্রতিদিন নেতা-কর্মী মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নৌকার জন্য ভোট চাইছেন। প্রতিদিন তিন–চারটি করে মোট অর্ধশত পথসভা, মতবিনিময় সভা করেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। তা ছাড়া স্থানীয় সাংসদও পুরো বিষয়টি নেপথ্যে থেকে নজরদারি করছেন। নির্বাচনের মাঠে এগিয়ে থাকলেও প্রচারণায় ঢিল বা প্রতিপক্ষকে ছাড় দিতে চান না তাঁরা।
ভিন্ন চিত্র বিরোধী শিবিরে। ধানের শীষের প্রার্থী হলেন সাবেক মেয়র জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ইকবাল আখতার খান (কাফুর)। দৃশ্যমান প্রচারণা দেখা যাচ্ছে না। আওয়ামী লীগ প্রার্থী যেখানে অর্ধশত পথসভা করেছেন, সেখানে প্রকাশ্যে একটিও সভা করতে পারেননি বিএনপির প্রার্থী। দল বেঁধে ভোট চাইতেও দেখা যাচ্ছে না ধানের শীষের কর্মীদের।
বিএনপির নেতারা বলছেন, নির্বাচনের আগমুহূর্তে মাঠে সক্রিয় অর্ধশতাধিক নেতা–কর্মীর নামে দুটি ‘মিথ্যা’ মামলা দিয়ে আগেই তাঁদের মাঠছাড়া করা হয়েছে। প্রকাশ্যে মাঠে নামার সাহস কেউ দেখাচ্ছেন না।
বিএনপির প্রার্থী ইকবাল আখতার খান বলেন, ‘নেতা–কর্মীদের হামলা–মামলাসহ নানাভাবে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। এমন বৈরী পরিস্থিতিতেও ভোটাররা ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে আমরা জিতব।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী খুরশীদ হায়দার বলেন, ‘উনি (ইকবাল আখতার) পালাবার পথ খুঁজছেন। দলের নেতা–কর্মীদের কাছেই অতিথি পাখি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন তিনি। কেবল নির্বাচন এলেই তাঁর দেখা মেলে। এই নির্বাচনে তাঁর দলের অনেক নেতা আমার পক্ষে কাজ করছেন। ফলে কাউকে হুমকি দেওয়ার প্রয়োজন নেই।’
মেয়র পদের আরেক প্রার্থী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মসিউর রহমানের প্রচারণাও তেমন নেই। এ বিষয়ে মসিউর রহমান মুঠোফোনে বলেন, ‘প্রকাশ্যে কাজ করতে গেলে কিছু জায়গায় বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন আমাদের কর্মীরা। তবে আমাদের কাজ চলছে। কিছুটা কৌশল অবলম্বন করে কাজ করছি আমরা।’