|| সারাবেলা প্রতিনিধি, ঢাকা ||
পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে স্বাধীন ‘পুলিশ অভিযোগ তদন্ত কমিশন’ (‘পুলিশ কমপ্লেইন্ট ইনভেস্টিগেশন কমিশন’-পিসিআইসি) গঠন করতে সরকারসংশ্লিষ্টদেরকে লিগ্যাল নোটিশ দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার বাংলাদেল সুপ্রিম কোর্টের ৫৩ জন আইনজীবীর পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির নোটিশটি পাঠান।
আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব এবং পুলিশ মহাপরিদর্শককে এই নোটিশ পাঠানো হয়েছে। নোটিশে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী গঠনের উদ্দেশ্য ও ইতিহাস, পুলিশের গৌরবময় অর্জন ও তাদের শৃংখলা বিধানের আইনি কাঠামো সম্পর্কে তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে পুলিশ সদস্যদের মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধ ও অসদাচরণের বিবরণও দেয়া হয়েছে।
নোটিশের সঙ্গে ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত সময়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত পুলিশের মাধ্যমে সংঘটিত হয়েছে এমন ৫০০টি ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়, পুলিশের এসব ঘটনাসমূহ পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, পুলিশ বাহিনীর উল্লেখযোগ্য অংশ বিচারবহির্ভূ হত্যা, পুলিশী হেফাজতে অভিযুক্তের মৃত্যু, পুলিশী হেফাজতে নির্যাতন, গুম, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়, খুন, মারধর, হুমকি ও হয়রানি, ধর্ষণ, ইভটিজিং ও নারী নির্যাতন, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও লুটপাট, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, ঘুষ বাণিজ্য ও ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়, জমি দখল ও সম্পত্তি বিনষ্টকরণ, মাদক ব্যবসা ও উদ্ধার করা মাদক আত্মসাৎ, স্বেচ্ছাচারিতা ও আটক বাণিজ্য, অপরাধীদের আশ্রয়, প্রশ্রয় ও টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া, মামলা নিতে গড়িমসি ও মামলা তুলে নিতে চাপ দেওয়া, মিথ্যা ও পাল্টা মামলা দিয়ে হয়রানি, তদন্তে গাফিলতি, হয়রানি ও ঘুষ নেওয়া, সাংবাদিক নির্যাতন, কর্তব্যে অবহেলা, সাক্ষ্য-প্রমাণ বিনষ্টকরণ ও আসামীদের নাম বাদ দেয়া এবং নিয়োগ, পদায়ন ও পদোন্নতিতে দুর্নীতি— এমন মোট ১৮ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে।
নোটিশে বিদ্যমান আইনি কাঠামোর দুর্বলতা এবং পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে “স্বাধীন তদন্ত কমিশন” এর অভাবকে প্রধান কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে। বর্তমান আইনি কাঠামোতে পুলিশের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্তভার পুলিশের উপরেই ন্যস্ত। ফলে বিচারের প্রাথমিক ধাপ ‘তদন্ত’ সঠিক ও নিরপেক্ষভাবে করা সম্ভব হয় না।
সুূষ্ঠু তদন্ত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৫ (৩) ও ২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ব্যক্তির মৌলিক অধিকার জানিয়ে নোটিশে আরও বলা হয়, সাংবিধানিক এই অধিকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আগামী ৪ (চার) সপ্তাহের মধ্যে একটি স্বাধীন ‘পুলিশ অভিযোগ তদন্ত কমিশন’ (‘পুলিশ কমপ্লেইন্ট ইনভেস্টিগেশন কমিশন’ (পিসিআইসি) গঠন করতে করতে হবে। অন্যথায় পরবর্তী আইনী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
প্রস্তাবিত পুলিশ অধ্যাদেশ ২০০৭ এর ৭১ দফায় ‘পুলিশ কমপ্লেইন্ট কমিশন’ গঠনের বিধান ছিল। কিন্তু সেই অধ্যাদেশও আলোর মুখ দেখেনি। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আইনের উদ্ধৃতি দিয়ে পুলিশ কর্তৃক সংঘটিত অপরাধ তদন্ত করতে আলাদা কর্তৃপক্ষ/কমিশন গঠনের জোর তাগিদ দেয়া হয়েছে নোটিশে।
বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ডেনমার্ক, দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান, কেনিয়া, ত্রিনিদাদ এন্ড টোবাগো, স্পেন, আয়ারল্যান্ড, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, গ্রীস, সার্বিয়া, ক্রোয়েশিয়া, ফিনল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, হাঙ্গেরি, নরওয়ে, নেদারল্যান্ডস ও মাল্টাসহ বিশ্বের অনেক দেশেই স্বাধীন ও স্বতন্ত্র তদন্ত কমিশন কার্যকর আছে।
২০০৬ সালে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট বিখ্যাত প্রকাশ সিং বনাম ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া মামলায় পুলিশ ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য সাত দফা নির্দেশনা দেন উল্লেখ করে নোটিশে বলা হয়, এর মধ্যে অন্যতম ছিল একজন বিচারপতির নেতৃত্বে ‘পুলিশ কমপ্লেইন্ট অথরিটি’ গঠন। ভারত সরকার সর্বোচ্চ আদালতের এই নির্দেশনা মেনে ইতোমধ্যে ২৭ টি অঙ্গরাজ্যে ‘পুলিশ কমপ্লেইন্ট অথরিটি’ গঠন করেছে।
কিন্তু বাংলাদেশ সরকার এ ধরণের কমিশন বা কর্তৃপক্ষ গঠনের কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়নি। ক্ষেত্রবিশেষে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার, পুলিশ রিমান্ড ও পুলিশের পেশাদারিত্বের উন্নয়নে বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন।