সৌদি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের বৈঠক

শাহরিয়ার আলম আফ্রিকার দেশগুলোতে বাংলাদেশের 'কন্ট্রাক্ট ফার্মিং' এর বিষয়ে যৌথ বিনিয়োগের প্রস্তাব দিলে আদেল আল জুবায়ের তাকে স্বাগত জানান।

|| সাগর চৌধুরী, মধ্যপ্রাচ্য প্রতিনিধি ||

সৌদি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আদেল আল জুবাইরের সঙ্গে বৈঠক করলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। সাতই মার্চ সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়। এরআগে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পৌঁছলে সৌদি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান।

সৌদি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে বাংলাদেশের সকল জনগণকে আন্তরিক অভিনন্দন  জানান। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে গত এক দশকে বাংলাদেশের যে অভাবনীয় উন্নয়ন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে অর্জন তার ভূয়সী প্রশংসা করেন সৌদি প্রতিমন্ত্রী। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়াকে তিনি বর্তমান সরকারের সাফল্য হিসেবে উল্লেখ করেন।

এছাড়াও সৌদি আরব ও বাংলাদেশের মধ্যে যে ঐতিহাসিক ভাতৃপ্রতিম সম্পর্ক রয়েছে তা নতুন উচ্চতায় নিয়ে বহুমাত্রিকতার রূপ দিতে তিনি বাংলাদেশের সাথে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় জানান। এসময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন সৌদি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।  

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম প্রত্যাশা করেন, দুদেশের দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ-সৌদি আরবের সম্পর্ক আজ নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। এবং তা আগামি দিনে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুতে সমর্থন ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানোর মাধ্যমে আরও ঘনিষ্ঠ হবে।

শাহরিয়ার আলম সাম্প্রতিক সময়ে ইয়েমেনের হুতি কর্তৃক সৌদি আরবে হামলার তীব্র নিন্দা জানান ও সৌদি আরবের প্রতি বাংলাদেশের অব্যাহত সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। ইয়েমেন ইস্যুতে বাংলাদেশকে তাদের পাশে পাওয়া ও এর অব্যাহত সমর্থনের জন্য আদেল আল জুবাইর বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

বাংলাদেশের চমৎকার ব্যাবসায়িক পরিবেশের কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশের সাথে সৌদি আরবের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ বাড়াতে বিটুবি (বিজনেস টু বিজনেস) সংলাপের ওপর জোর দেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

তিনি বাংলাদেশের পিপিপিএ (পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ অথরিটি) ও সৌদি কর্তৃপক্ষের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের অনুরোধ জানান, যা সৌদি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য অবারিত সুযোগ তৈরি করবে।

সৌদি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, খুব শিগগিরই এই সমঝোতা স্মারক সই হবে যা সম্ভাব্য সৌদি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ বাড়াবে।  

শাহরিয়ার আলম আফ্রিকার দেশগুলোতে বাংলাদেশের ‘কন্ট্রাক্ট ফার্মিং’ এর বিষয়ে যৌথ বিনিয়োগের প্রস্তাব দিলে আদেল আল জুবায়ের তাকে স্বাগত জানান। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সৌদি আরবে বসবাসরত সকল বাংলাদেশীকে করোনাসময়ে বিনামূল্যে সুচিকিৎসা ও করোনা ভাইরাসের টিকা সুবিধা দেয়ায় সৌদি বাদশাহ ও যুবরাজের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান।  

শাহরিয়ার আলম ঢাকাস্থ সৌদি দূতাবাসে একজন কালচারাল অফিসার নিয়োগের গুরুত্বা দিয়ে বলেন এতে করে সেবা গ্রহীতারা তাঁদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নয়াদিল্লির পরিবর্তে বাংলাদেশ থেকে সত্যায়িত করতে পারবেন। দুদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীগণ যে সকল চুক্তি ও এমওইউ (সমঝোতা স্মারক) অপেক্ষায় রয়েছে তা ত্বরান্বিত করার বিষয়ে একমত হন। সৌদি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সাথে অত্যন্ত সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে উক্ত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম(বার), পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের মহাপরিচালক এফ এম বোরহান উদ্দিন এসময়ে উপস্থিত ছিলেন। 

এরআগে সকালে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ উপলক্ষে রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এরপর তিনি এ উপলক্ষে আয়োজিত ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় যোগ দেন। এছাড়া তিনি সন্ধ্যায় ওয়াশিংটনে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃক ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ উপলক্ষে আয়োজিত ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় যোগ দেন ও দিবসটির তাৎপর্য উল্লেখ করে বক্তৃতা করেন।  

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে সৌদি আরবে রয়েছেন। তিনি ৮ই মার্চ ওআইসির মহাসচিবের সঙ্গে জেদ্দায় বৈঠক করবেন।

সংবাদ সারাদিন