|| সারাবেলা প্রতিবেদন, ঢাকা ||
আওয়ামী লীগকে মুুক্তিযুদ্ধের দল জানিয়ে দলটিতে কোনভাবেই যেনো মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী, যুদ্ধাপরাধের দোসর ও সেনাশাসকদের গড়া রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা যোগ দিতে না পারে সেজন্য দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা।
নেতাকর্মীদের ‘আদর্শ নিয়ে’ রাজনীতি করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে এদিক ওদিক থেকে কিছু লোক জোটে এবং দলের ভেতরে এসে তারা নানা রকম অঘটন ঘটায়, অপকর্ম করে, যার বোঝাটা দলকে বয়ে নিয়ে বেড়াতে হয়। যে কারণে আমি বারবার শুরু থেকে আমাদের নেতাকর্মীদের হুঁশিয়ার করেছিলাম যে, এই ধরনের যারা… বিশেষ করে মিলিটারি ডিক্টেটরদের হাতে তৈরি করা যে সমস্ত রাজনৈতিক দল, সেগুলো যারা করে এসেছে বা যুদ্ধাপরাধীদের সাথে যারা ছিল, আমাদের দলে যেন তারা না আসে।”
এরা দলে এসে নানাভাবে দলেরই ক্ষতি করে এবং তারাই বিভিন্ন সময়ে অঘটন ঘটায় উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, “আমাদের ভালো ভালো নেতাকর্মীদের তারাই হত্যা করে। বাইরে আসে কি… দলের কোন্দল। কিন্তু খুঁজলে দেখা যায় যে এরা হয় এখান থেকে সেখান থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসেছে, বা তখন খুব ভালো ব্যবহার করে এমনভাবে চলে এসেছে যে আমাদের কেউ কেউ দল ভারি করার জন্য তাদেরকে কাছে টেনে নিয়েছে। কিন্তু এটা নেওয়া আমাদের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর।”
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রোববার আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা আয়োজিত আলোচনা সভায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে তিনি এমন সতর্কবার্তা দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের ‘একমাত্র’ আওয়ামী লীগই তৃণমূল পর্যন্ত সুসংগঠিত দল। সেভাবেই আদর্শের ভিত্তিতে সংগঠনকে গড়ে তুলতে হবে।
১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা এবং পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, “জাতির পিতা কাজ করে দেশকে এগিয়ে নিলেও কেউ কেউ জাতির জনকের সমালোচনায় মুখর ছিল। এত কিছুর পরও কিছু লোক তো… কোনো কিছুই নাকি হয়নি! কোনো উন্নয়নই নাকি হয়নি! কোনো কিছুই নাকি করেনি! সেই কথা বলা, লেখা এবং বিভ্রান্তি ছড়াতে শুরু করে। কেন? কোন উদ্দেশ্যে? কি কারণে? তার ফলাফল কী হয়েছিল?
তিনি বলেন, “অনেকে গণতন্ত্রের কথা তোলে। মার্শাল ল অর্ডিন্যান্স দিয়ে যখন সংবিধান স্থগিত করে দিয়ে, সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা কেউ দখল করে, তারা গণতন্ত্র দেয় কীভাবে? মার্শাল ল দিয়ে তো কখনো গণতন্ত্র হয় না। আইয়ুব খান যা করেছে, ইয়াহিয়া খান যা করেছে, জিয়াউর রহমানও তাই করেছে, এরশাদও তাই করেছে। গণতন্ত্র মুখে ছিল, কিন্তু বাস্তবে কী ছিল?”
পঁচাত্তর পরবর্তীতে সেনাশাসক জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ‘অগণিত নেতাকর্মীদের নির্মমভাবে হত্যা করেছে’ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী জানান, “সেই সাথে ওই সময় সেনাবাহিনীতে একটার পর একটা ক্যু হয়েছে, সেনাবাহিনীর হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে, জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছে, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে দিনে ৮টা/১০টা করে ফাঁসি হত যাদের চিৎকারে কারাগারের আকাশ বাতাস ভারী হত।”
শেখ হাসিনা বলেন, “জিয়াউর রহমান সারা দেশে একটা খুনের রাজত্ব কায়েম করেছিল। পাশাপাশি জাতির পিতার খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরষ্কৃত করেছিল। এখানে গণতন্ত্রটা কোথায়? মার্শাল ল দিয়ে যারা ক্ষমতায় আসে, তারা গণতন্ত্র দিতে পারে না।”
যারা ‘গণতন্ত্র নেই’ বলে সরকারের সমালোচনা করছে, তাদের দিকে ইংগিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের যারা বুদ্ধিজীবী, জ্ঞানীগুণী, অনেকেই গণতন্ত্র খুঁজে বেড়ান। কিন্তু… সেই ইমার্জেন্সি যখন জারি হয়, তখন অথবা এই রকম মিলিটারি ডিক্টেটর এলে, তখন তারা গণতন্ত্র পান, স্বাদ পান। কিন্তু গণতান্ত্রিক পরিবেশে তারা গণতন্ত্র পান না। অর্থাৎ তাদের চরিত্রটা হচ্ছে চাটুকারিতা করা, তোষামোদি করা। কারণ যারা এভাবে হঠাৎ করে ক্ষমতা দখল করে, তারা এই তোষামোদকারীদেরকে হায়ার করে। তারা সব সময় এইভাবে ব্যবহৃত হওয়ার জন্য তৈরি থাকে। কিন্তু সত্যিকারের গণতান্ত্রিক ধারা যখন থাকে, তখন এদের মূল্য থাকে না। কারণ যতই বুকে লিখে রাখুক ‘ইউজ মি’… গণতান্ত্রিক সরকার তাদের ব্যবহার করবে না। তাই তাদের চিৎকার ‘গণতন্ত্র নাই, এটা নাই, সেটা নাই’।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একমাত্র গণতান্ত্রিক সরকার থাকলেই দেশের মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করা, জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করা, তাদের খাবার জোগাড় করা, তাদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা, তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা সম্ভব। কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে মানুষের পাশে থেকে সাহায্য করায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানান সরকার প্রধান।
বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই আলোচনা সভায় দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়াসহ দলের কেন্দ্রীয়, মহানগরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
আর গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন তার কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ও প্রেস সচিব ইহসানুল করিমসহ ঊর্ধতন কর্মকর্তারা।