সিনহা হত্যাকে ‌‌‌‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ হিসেবেই দেখছে সেনা ও পুলিশ বাহিনী

সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের হত্যাকে ‘বিচ্ছিন্ন’ ঘটনা হিসেবে দাবি করে সেনা-পুলিশের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে দুই বাহিনীর মধ্যে পারস্পরিক আস্থা অটুট রাখার ঘোষণা দিলেন সেনা ও পুলিশ প্রধান। বললেন, এই হত্যার সঙ্গে যে বা যারা জড়িত তাদেরকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। এর দায় কোনভাবেই গোটা বাহিনীর ওপর পড়বে না।

|| সারাবেলা প্রতিবেদন, ঢাকা ||

সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের হত্যাকে ‘বিচ্ছিন্ন’ ঘটনা হিসেবে দাবি করে সেনা-পুলিশের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে দুই বাহিনীর মধ্যে পারস্পরিক আস্থা অটুট রাখার ঘোষণা দিলেন সেনা ও পুলিশ প্রধান। বললেন, এই হত্যার সঙ্গে যে বা যারা জড়িত তাদেরকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। এর দায় কোনভাবেই গোটা বাহিনীর ওপর পড়বে না।

এদিকে আমাদের কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, জেলার সেনাবাহিনীর বাংলো জলতরঙ্গে বুধবার সিনহা হত্যাকান্ড ও উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন সেনা ও পুলিশ বাহিনীর দুই প্রধান যথাক্রমে জেনারেল আজিজ আহমেদ ও বেনজীর আহমেদ।

উল্লেখ্য, গত ৩১শে জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর অব: সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ। বুধবার যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসে দুই বাহিনীর প্রধান জানালেন, কক্সবাজারে পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের নিহত হওয়াকে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ হিসেবেই দেখেছে সেনাবাহিনী ও পুলিশ।

দু’জনই জানালেন, এই ঘটনায় দায়ী হিসেবে যে বা যারা চিহ্নিত হবে, তারাই শাস্তি পাবে। এর দায় বাহিনীর উপর পড়বে না। একইসঙ্গে বললেন, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উসকানি দিয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশের মধ্যে সম্পর্কে যেন কেউ চিড় ধরাতে না পারে, সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।

এদিকে সিনহাকে হত্যা করা নিয়ে যে ব্যাখ্যা পুলিশ দিয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে মঙ্গলবারই তদন্ত দল তাদের কাজ শুরু করেছে। এদিকে সিনহার বোন নয়জন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যামামলা করেছেন। নিহত রাশেদের মাকে ফোন করে এই হত্যার সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সিনহা মোহাম্মদ রাশেদের হত্যা নিয়ে দেশজুড়ে বিভিন্ন মহলে বিস্তর আলোচনা সমালোচনার মধ্যে বুধবার কক্সবাজারে গিয়ে সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ এবং পুলিশ মহা পরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ। এরপর কক্সবাজারের সেনাবাহিনীর বাংলো জলতরঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে করেন তারা।

সংবাদ সম্মেলনে জেনারেল আজিজ বলেন, “যে ঘটনাটা ঘটেছে, সেজন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মর্মাহত এবং পুলিশ বাহিনী মর্মাহত। যে মেসেজটা আমরা দিতে চাই তা হচ্ছে- আমরা এটাকে একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসাবে দেখতে চাই। আমাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে একটা জিনিস আমরা নিশ্চিত করতে চাই, যে ঘটনাটা ঘটেছে ওই ঘটনার সঙ্গে যে যে সম্পৃক্ত থাকবে, ইনকোয়ারি টিম যাদেরকে চিহ্নিত করবে, তারা সেই দোষের প্রায়শ্চিত্ত করবে। তদন্তে যাদের নাম আসবে তাদের সবাইকে বিচারের মুখোমুখী করা হবে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।’

সেনা প্রধান এও বলেন, “এটার দায়-দায়িত্ব কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের ওপর বর্তাবে না। এখানে কোনো প্রতিষ্ঠান কাউকে সহযোগিতা করবে না আবার কারও বিপক্ষেও যাবে না।”

তিনি জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পুলিশ ও সেনাবাহিনী নিয়ে একটি জয়েন্ট ইনকোয়ারি টিম গঠন করে দেওয়া হয়েছে যারা মঙ্গলবার থেকেই কাজ শুরু করেছে।

তদন্ত দলের প্রতি বাংলাদেশ সেনা এবং পুলিশ বাহিনীর আস্থা আছে বলে জানান সেনা প্রধান।”

এই হত্যাকান্ড নিয়ে দুই বাহিনীর পারস্পরিক আস্থায় কোন ঘাটতি তৈরি হবে না বলে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আশ্বস্ত করেন সেনা ও পুলিশ প্রধান। সেনা প্রধান জেনারেল আজিজ বলেন, “বিগত ৫০ বছরে এই দেশে যে উন্নতি অগ্রগতি এসেছে, দেশি-বিদেশি যেসব ঝুঁকিগুলো এসেছে আমরা সশস্ত্রবাহিনী এবং পুলিশ অন্যান্য সংস্থাগুলোর মতো কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছি। আমাদের মধ্যে যে মিউচুয়াল ট্রাস্ট, কনফিডেন্ট অ্যান্ড কো-অপারেশন অনেক বছর ধরে তৈরি হয়েছে এটা অটুট থাকবে, এটাতে কোনো রকমের চিড় ধরে এমন কোনো কিছু সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেও হবে না এবং পুলিশ বাহিনী বলেছে তাদের মধ্য থেকেও হবে না।”

সেনা প্রধানের অবস্থানের সঙ্গে একমত জানিয়ে পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদও বলেন, “আমাদেরও একই কথা। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশে পুলিশের গত ৫০ বছর ধরে একসাথে কাজ করার ইতিহাস রয়েছে। গত ৫০ বছরে দেশের অনেক ক্রাইসিস মুহূর্তে এই দুটি বাহিনী কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছে। আমাদের মধ্যে একটা পরস্পরিক শ্রদ্ধা, বিশ্বাস এবং আস্থার সম্পর্ক রয়েছে। আমরাও একটাকে একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসাবে দেখি।”

তবে এই ঘটনাকে হাতিয়ার করে কেউ যেন সেনা-পুলিশ সম্পর্ক নষ্ট করতে না পারে, সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান জেনারেল আজিজ। বলেন, “এই ঘটনা নিয়ে সেনাবাহিনী এবং পুলিশের মধ্যে একটা অনাকাঙ্ক্ষিত কিংবা চিড় ধরানো বা ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি করার কোনো প্রয়াস যাতে কেউ না চালায়, আমরা সেটা সবাইকে অনুরোধ করবো। আমাদের সকলের চেষ্টা করা উচিৎ তদন্তটা যাতে নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু হয়। ঘটনাটি যেহেতু তদন্তাধীন তাই এ নিয়ে অন্য কোনো কথা না বলার কথা জানান সেনাপ্রধান।

অনেকে এই সুযোগে উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলছেন জানিয়ে পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদ বলেন, “আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশ সেনাবাহিনৗ এবং বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী অত্যন্ত দক্ষ, চৌকস একটি ফোর্স। এই সমস্ত উস্কানি দিয়ে তারা কখনও সফল হতে পারবে না।”

প্রশাসনের মাদক বিরোধী অভিযানে স্থানীয় সাংবাদিকদের সহযোগিতা চেয়ে বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘এলাকায় কারা মাদক ব্যবসা করে কারা মাদক পাচারে জড়িত আপনার জানেন। কারণ আপনারা এ এলাকার মানুষ। আপনারা তাদের চিহ্নিত করে প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে পারেন।’

সংবাদ সম্মেলনের পর মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে যান সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ ও পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন