|| সারাবেলা প্রতিবেদন, ঢাকা ||
নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে দেশের ৪২ বিশিষ্টজনের আনা অভিযোগ নাকচ করলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা। বললেন, এসব অভিযোগ আর কমিশনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি – এসবই অনভিপ্রেত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
নির্বাচনের প্রতি জনগণের আস্থা নেই বলে তোলা দাবির জবাবে সিইসি বলেছেন, জনগণ ভোটে এখনও উৎসাহী। ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ ভোট পড়ছে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও কোনো অনিয়মের কথা পর্যবেক্ষক বা গণমাধ্যম জানায়নি বলে দাবি তার।
কমিশনের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনে গত শনিবার রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে চিঠি দেন ৪২ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি। এর আগে তারা ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনও করেন।
রোববার নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী পাল্টা অভিযোগ এনে বলেন, কয়েকজন ব্যক্তি কমিশনের সঙ্গে ব্যবসা করতে না পেরে এই অভিযোগ তুলেছেন। তবে সে দিন সিইসি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে যেহেতু চিঠি দেয়া হয়েছে, তাই তার কিছু বলা ঠিক হবে না। এরই পাঁচ দিনের মাথায় বৃহস্পতিবার সিইসি এলেন সংবাদ সম্মেলনে। যদিও তিনি লিখিত বক্তব্য দেয়ার পর কোনো প্রশ্ন নেননি।
কমিশনের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তার মধ্যে আছে, আর্থিক অসদাচরণ, কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম, নিয়মবহির্ভূত বিলাসবহুল গাড়ির ব্যবহার, ইভিএম ক্রয়ে অনিয়ম, অংশীজনের মতামত উপেক্ষা, নির্বাচনি অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়া, রিটার্নিং কর্মকর্তা সাক্ষরিত ফলাফলের সঙ্গে কেন্দ্রের ফলাফলের অমিল।
এর প্রতিটিরই জবাব দেন সিইসি। বলেন, বিশিষ্টজনেরা যে অভিযোগ এনেছেন সবগুলোই অসত্য।
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে সরকারবিরোধীদের অভিযোগের শেষ নেই। ভোট নিরপেক্ষ করার বদলে কমিশন সরকারের হয়ে কাজ করে, এমন অভিযোগ হরহামেশা করে থাকের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। তাদের দাবি, সরকার সমর্থক ছাড়া অন্যদের ভোট দিতে দেয়া হয় না। ইভিএম আসার পরেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। ইভিএমে ভোটাররা তাদের পরিচয় শনাক্তে ফিঙ্গার প্রিন্ট দেয়ার পর ভোট দেয় সরকার সমর্থকরা।
বিশিষ্টজনরাও একই ধরনের অভিযোগ তোলার পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলন করে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। যদিও সরকারের মুখপাত্র তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিবৃতির খসড়া বিএনপির।
সিইসি তার বক্তব্যে সবগুলো অভিযোগ খণ্ডন করে দাবি করেন, প্রশিক্ষণ ব্যয়ে আর্থিক অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই। তিনি বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়ার দুর্নীতির যে অভিযোগ করা হয়েছে তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ভিত্তিহীন।
নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহারের অভিযোগের জবাবে নুরুল হুদা বলেন, তারা যে গাড়ি ব্যবহার করেন, সেটা একেবারেই সাধারণ মানের। ইভিএম ক্রয়ে অস্বচ্ছতার অভিযোগের জবাব দিয়ে সিইসি বলেন, ইভিএম কেনায় সরাসরি নির্বাচন কমিশন যুক্ত নয়। সেনাবাহিনীর মাধ্যমে এই যন্ত্র আমদানি করা হয়। টাকা সরাসরি সরকারি কোষাগার থেকে সেনাবাহিনীকে পরিশোধ করা হয়।
ইভিএম ব্যবহারে বিতর্কমুক্ত ভোট গ্রহণ ও দ্রুত ফলাফল দেয়া যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন সিইসি। বলেন, এই যন্ত্রের সুবিধা থাকায় ভারতসহ বিভিন্ন দেশ এখন ইভিএম ব্যবহার করছে।
জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে অসদাচরণের যে অভিযোগ আনা হয়েছে তাকেও অসত্য বলেন সিইসি। তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালের (জাতীয়) নির্বাচন বিদেশি কুটনীতিকরা পর্যবেক্ষণ করেছেন। নির্বাচন নিয়ে অভিযোগ তোলেননি। গণমাধ্যমও কোনো অভিযোগ করেনি।’
অনিয়মের কারণে বহু স্থানীয় নির্বাচন বাতিল করা হয়েছে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতি পদে দুই থেকে আট জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভোট পড়েছে ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ।’
অবশ্য চলতি বছর ঢাকায় তিনটি আসনে উপনির্বাচনে একটিতে তিন শতাংশের নিচে একটিতে ১০ শতাংশ এবং একটিতে ১৪ শতাংশ ভোট পড়ার কোনো ব্যাখ্যা দেননি সিইসি। সংবাদ সম্মেলনে তিন নির্বাচন কমিশনার ও কমিশন সচিব উপস্থিত ছিলেন। তবে নানা সময় কমিশনে ব্যতিক্রমী বক্তব্য নিয়ে আলোচিত নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার উপস্থিত ছিলেন না।