|| সারাবেলা প্রতিবেদন, ঢাকা ||
করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় সারাদেশে আগে থেকেই বহাল সাধারন ছুটির মেয়াদ বাড়িয়েছে সরকার। সোমবার নতুন এক আদেশে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই ছুটির মধ্যে ৬ই মে বুদ্ধ পূর্ণিমার সরকারি ছুটি, ৮ ও ৯ই মে এবং ১৪ ও ১৫ই মের সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোও অন্তর্ভুক্ত থাকায় প্রকারান্তরে ১৬ই মে পর্যন্ত এই ছুটি বহাল থাকবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সারাদেশে সব ধরণের গণপরিবহনও ১৬ই মে’র আগে না খোলার নির্দেশ দিয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। এদিকে ঈদকে সামনে রেখে আসছে ১০ই মে থেকে শর্ত সাপেক্ষে দেশের সকল শপিং মল খোলার অনুমতি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাড়ল সাধারন ছুটির মেয়াদ
সোমবার নতুন এক আদেশে সারাদেশে সাধারণ ছুটির মেয়াদ ১৬ই মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। একইসঙ্গে রোজার ঈদের ছুটিতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকার নির্দেশও দিয়েছে সরকার। এই আদেশ বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্যও প্রযোজ্য হবে কি না জানতে চাইলে জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, “সরকারি আদেশে শুধু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঈদের ছুটিতে কর্মস্থলে অবস্থানে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
তবে আরেক আদেশে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে এবার রোজার ঈদের সময়ও আন্তঃজেলা যাত্রী পরিবহন বন্ধ থাকবে। এছাড়া চলমান ‘সাধারণ ছুটির’ সময় এক জেলা থেকে আরেক জেলা এবং এক উপজেলা থেকে আরেক উপজেলায় জন সাধারণের চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফলে বেসরকারি চাকুরেদের ছুটি থাকলেও এবার ঈদের সময় বাড়ি যাওয়ার সুযোগ হবে না।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৫ মে বাংলাদেশে রোজার ঈদ হতে পারে, যা মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব।
সরকারের সবশেষ এই আদেশে শুধু ছুটির মেয়াদই বাড়ানো হয়নি দেওয়া হয়েছে নিচে উল্লেখিত নতুন এইসব নির্দেশনা:
- জরুরি সেবা যেমন- বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দর (স্থলবন্দর, নদীবন্দর ও সমুদ্রবন্দর) কার্যক্রম, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, ডাক সেবা এবং এ সংশ্লিষ্ট সেবা কাজে নিয়োজিত যানবাহন ও কর্মীরা সাধারণ ছুটির বাইরে থাকবেন।
- সড়ক ও নৌপথে সকল প্রকার পণ্য পরিবহনের কাজে নিয়োজিত ট্রাক, লরি, কার্গো ভেসেল চলাচল অব্যাহত থাকবে।
- কৃষিপণ্য, সার, কীটনাশক, খাদ্য, শিল্প পণ্য, রাষ্ট্রীয় প্রকল্পের মালামাল, কাঁচা বাজার, খাবার, ওষুধের দোকান, হাসপাতাল ও জরুরি সেবা এবং এসবের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের ক্ষেত্রে এ ছুটি প্রযোজ্য হবে না।
- চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও কর্মী এবং ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জাম বহনকারী যানবাহন ও কর্মী, গণমাধ্যমে (ইলেকট্রনিক ও প্রিন্টি মিডিয়া) নিয়োজিত কর্মীরা এ ছুটির আওতায় পড়বেন না।
- ঔষধশিল্প, উপৎপাদন ও রপ্তানিমুখী শিল্পসহ সকল কলকারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে চালু রাখতে পারবে। স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ প্রণীত ‘বিভিন্ন শিল্প কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণে নির্দেশনা’ প্রতিপালন নিশ্চিত করতে হবে।
- পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরবর্তীতে শিল্প-কারখানা, কৃষি এবং উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলো ও পরিবহন পর্যায়ক্রমে উন্মুক্ত করা হবে।
- ছুটির সময় কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা যাবে না।
- রমজান, ঈদ এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধা বিবেচনায় ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু রাখার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে।
- সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন অফিসগুলো প্রয়োজন অনুসারে খোলা রাখবে। সেইসঙ্গে তারা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারি করবে।
খুলছে না গণপরিবহন
সরকারের সাধারণ ছুটির বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সারাদেশে ইতোমধ্যেই বন্ধ থাকা গণপরিবহন চলাচলও আগামী ১৬ই মে পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত দিয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।



তবে জরুরি পরিষেবার বাহন; খাদ্যসহ সব ধরনের পণ্য, রাষ্ট্রীয় প্রকল্পের মালামাল, জ্বালানি, শিশুখাদ্য, ত্রাণ, কৃষিপণ্য, শিল্পপণ্য, সার ও কীটনাশক, পশুখাদ্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের উৎপাদিত পণ্য, দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত পণ্য এবং জীবনধারণের মৌলিক পণ্য পরিবহনের যানবাহন; ওষুধ, ওষুধশিল্প, চিকিৎসা সেবা ও চিকিৎসা বিষয়ক সামগ্রী বহনকারী গাড়ি এবং গণমাধ্যমের গাড়ি এ নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে। কিন্তু পণ্যবাহী যানবাহনে যাত্রী পরিবহন করা যাবে না বলে সতর্কও করে দেওয়া হয়েছে।
শর্ত সাপেক্ষে শপিং মল খুলছে ১০ই মে থেকে
রোজার ঈদ সামনে রেখে আগামী ১০ মে থেকে দোকান-পাট ও শপিং মল খোলার অনুমতি দিয়েছে সরকার। শর্ত সাপেক্ষে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সারাদেশের শপিং মলগুলো খোলা রাখা যাবে জানিয়ে জননিরাপত্তা বিভাগ, সুরক্ষা সেবা বিভাগ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং সব বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলা প্রশাসকদের সোমবার নির্দেশনা পাঠিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম-সচিব (জেলা ও মাঠ প্রশাসন অধিশাখা) মো. মুশফিকুর রহমান জানান, সারা দেশে হাট-বাজার, ব্যবসা কেন্দ্র, দোকানপাট ও শপিং মলগুলো সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টার পর্যন্ত সীমিত পরিসরে খোলা রাখা যাবে। তবে মানতে হবে নিচে উল্লেখিত শর্তগুলো:
- বড় শপিং মলের প্রবেশমুখে হাত ধোঁয়ার ব্যবস্থা ও স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
- শপিং মলে আসা যানবাহনকে অবশ্যই জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
- বেচাকেনার সময় ক্রেতা-বিক্রেতাদের পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে।
- দোকানপাট এবং শপিং মল বিকাল ৪টার মধ্যে অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।



উল্লেখ্য, দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের প্রেক্ষাপটে সরকার প্রথম দফায় ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সব অফিস আদালত বন্ধ ঘোষণা করে। সেই সঙ্গে সারা দেশে সব ধরনের যানবাহন চলাচলেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। পাশাপাশি সবাইকে যার যার বাড়িতে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়।
এরপর সেই ‘ছুটির’ মেয়াদ কয়েক দফায় ১৬ মে পর্যন্ত বাড়ানো হল। তবে এতদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়ায় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা বাড়িয়ে নতুন আদেশে বলা হয়েছে, ‘জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে আসা যাবে না।’
গেল ১৭ই মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার। স্থগিত হয়ে গেছে ১লা এপ্রিল থেকে অনুষ্ঠেয় এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। সবশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আগামী সেপ্টেম্বরের আগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হবে না।#