সরকার পাশে আছে শঙ্কিত হবেন না বললেন প্রধানমন্ত্রী

“বাঙালি বীরের জাতি। নানা প্রতিকূলতা জয় করেই আমরা টিকে আছি। করোনাভাইরাসের এই মহামারীও আমরা ইনশাআল্লাহ মোকাবেলা করব।”-এমন প্রত্যয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের মানুষের উদ্দেশ্যে বলেছেন, শঙ্কিত হবেন না, সরকার আপনাদের পাশে আছে।

|| সারাবেলা প্রতিবেদন ||

“বাঙালি বীরের জাতি। নানা প্রতিকূলতা জয় করেই আমরা টিকে আছি। করোনাভাইরাসের এই মহামারীও আমরা ইনশাআল্লাহ মোকাবেলা করব।”-এমন প্রত্যয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের মানুষের উদ্দেশ্যে বলেছেন, শঙ্কিত হবেন না, সরকার আপনাদের পাশে আছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে সরকারের এমনি অবস্থান জানান তিনি।

এবার করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। এরইমধ্যে এসেছে বাঙালির অন্যতম আনন্দ উৎসব বাংলা নববর্ষ। মহামারীর কারণে বাঙালির সর্বজনীন উৎসব পহেলা বৈশাখে এবারও বাইরে কোনো অনুষ্ঠান করা যাচ্ছে না জানিয়ে সবাইকে ঘরে থেকেই আনন্দ করার পরামর্শ দেন সরকার প্রধান।

দেশের মানুষকে বাংলা নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে মহামারীকালে সবাইকে সাবধান থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলারও আহ্বান জানিয়েছেন সরকার প্রধান। একইসঙ্গে মহামারী মোকাবেলায় দেশবাসীকে সাহস জোগানোর পাশাপাশি সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপও ‍তুলে ধরেন তিনি।

বলেন, “সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানার পর প্রায় ১ কোটি ২৪ লাখ ৪২ হাজার নিম্নবিত্ত পরিবারের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। তাই শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। সরকার সব সময় আপনাদের পাশে রয়েছে।”

এদিকে ক্রমবর্ধমান সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে বুধবার থেকে সারাদেশে সাতদিনের জন্য শুরু হচ্ছে ‘কঠোর লকডাউন’। কল কারখানা, ব্যাংক ও শেয়ার বাজার খোলা থাকলেও ‘কঠোর’ এই লকডাউনে চলবে না কোন গণপরিবহন। বন্ধ থাকবে অফিস আদালত।

জীবন বাঁচাতে ‘কঠোর লকডাউনে’ আরোপিত এসব বিধি-নিষেধ মেনে চলতে সবার প্রতি অনুরোধ করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, “আপনারা দেখেছেন, কোনোভাবেই সংক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে না। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে তাই আমাদের আরও কিছু কঠোর ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে। আমি জানি এর ফলে অনেকেরই জীবন-জীবিকায় অসুবিধা হবে। কিন্তু আমাদের সকলকেই মনে রাখতে হবে – মানুষের জীবন সর্বাগ্রে। বেঁচে থাকলে আবার সব কিছু গুছিয়ে নিতে পারব।” তবে মানুষের জীবন রক্ষার পাশাপাশি অর্থনীতি যাতে সম্পূর্ণরূপে ভেঙে না পড়ে, সেদিকেও সরকারের নজর থাকার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনীতির উপর সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় গত বছর আমরা চারটি মূল কার্যক্রম নির্ধারণ করেছিলাম।

যেগুলো হচ্ছে:

১) সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি করা:

সরকরি ব্যয়ের ক্ষেত্রে ‘কর্মসৃজনকেই’ প্রাধান্য দেওয়া; 

২) আর্থিক সহায়তার প্যাকেজ প্রণয়ন:

অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরুজ্জীবিত করা, শ্রমিক-কর্মচারীদের কাজে বহাল রাখা এবং উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখা;

৩) সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি:

দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী জনগণ, দিনমজুর এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত জনসাধারণের মৌলিক চাহিদা পূরণে বিদ্যমান সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি;

৪) মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি করা:

অর্থনীতির বিরূপ প্রভাব উত্তরণে মুদ্রা সরবরাহ এমনভাবে বৃদ্ধি করা যেন মুদ্রাস্ফীতি না ঘটে।

এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রায় ১ লাখ ২৪ হাজার ৫৩ কোটি টাকার ২৩টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে। প্রায় আড়াই কোটি মানুষকে বিভিন্ন সরকারি সহায়তার আওতায় আনা হয়েছে। পল্লী অঞ্চলে কর্মসৃজনের জন্য ৮০৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা এবং রমজান ও আসছে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ৬৭২ কোটিরও বেশি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ভিজিএফ, টেস্ট রিলিফসহ বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বাড়ানো হয়েছে।

ঢাকাসহ সারা দেশের প্রতিটি জেলায় করোনাভাইরাস রোগীর চিকিৎসা সুবিধার আওতা বাড়ানোর পাশাপাশি সরকারি হাসপাতালগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ এবং বিদ্যমান আইসিইউ সুবিধা আরও বাড়ানো হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

গণ টিকাদান প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ইতোমধ্যেই ৫৬ লাখের বেশি মানুষকে প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া সম্পন্ন হয়েছে। যারা প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছেন তাদের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া শুরু হয়েছে। আমরা পর্যায়ক্রমে দেশের সকলকে টিকার আওতায় নিয়ে আসব। আমাদের সে প্রস্তুতি রয়েছে।” একইসঙ্গে সতর্ক করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু টিকা নিলেই যে সম্পূর্ণভাবে সুরক্ষিত হবেন, তেমনটা ভাববার কোন অবকাশ নেই। তাই টিকা নেওয়ার পরও স্বাস্থ্যবিধিও মেনে চলতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব আমাদের নিজের, পরিবারের সদস্যদের এবং প্রতিবেশীর সুরক্ষা প্রদানের। কাজেই ভিড় এড়িয়ে চলুন। বাইরে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করুন। ঘরে ফিরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে গরম পানির ভাঁপ নিন।”

সরকার যে ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করেছে, তা মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে মহামারীও নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে।

সংবাদ সারাদিন