|| সারাবেলা প্রতিবেদন ||
জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনসময়ে শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ দক্ষিণ এশিয়া গড়ে তুলতে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে একসঙ্গে কাজ করবার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের দুর্লভ এই আয়োজন উদযাপনের অষ্টম দিন বুধবার রাজধানীর জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের এই শুভ মুহূর্তে আমি দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং নীতি-নির্ধারকদের প্রতি একটি শান্তিপূর্ণ সমৃদ্ধ দক্ষিণ এশিয়া গড়ে তুলতে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি।”
দক্ষিণ এশিয়ার বিপুল জনসংখ্যার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তৃতায় বলেন, “এ অঞ্চলে যেমন সমস্যা রয়েছে, তেমনি রয়েছে প্রচুর সম্ভাবনা। আমাদের এ অঞ্চলের মানুষের রয়েছে অসম্ভব প্রাণশক্তি, উদ্ভাবন ক্ষমতা এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে জয় করে টিকে থাকার দক্ষতা। পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে প্রাপ্ত সম্পদকে কাজে লাগিয়ে আমরা সহজেই দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন ঘটাতে পারি। আমরা যদি আমাদের জনগণের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করি, তাহলে অবশ্যই দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বের মধ্যে অন্যতম সমৃদ্ধ অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। এই বিশ্বাস আমাদের আছে।”
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শুধু বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক মুক্তির জন্যই লড়াই করেননি। তিনি বিশ্বের সকল নিপীড়িত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির স্বপ্ন দেখতেন। তিনি শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থান এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে যে কোনো সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
সরকার বঙ্গবন্ধুর সেই ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার জন্য ‘নিরলসভাবে’ কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ইতোমধ্যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে ইনশাল্লাহ।”
জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর এ আয়োজন ঘিরে ঢাকা দক্ষিণ এশিয়ার মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “ইতোমধ্যে মালদ্বীপ এবং নেপালের মহামান্য রাষ্ট্রপতিদ্বয় এবং শ্রীলঙ্কার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই অনুষ্ঠানে যোগদান করেছেন। আজকের অনুষ্ঠানে ভুটানের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং আমাদের মাঝে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত রয়েছেন। তার উপস্থিতি এই অনুষ্ঠানকে মহিমান্বিত করেছে এবং আমরা নিজেকে সম্মানিত বোধ করছি।”
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দশ দিনের এই আয়োজনের অষ্টম দিনের আয়োজনে বুধবার সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং।
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং সম্পর্কে বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আজকে আমাদের সম্মানিত অতিথি ডা. লোটে শেরিং ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হতে চিকিৎসাবিদ্যায় গ্র্যাজুয়েশন করেছেন। কাজেই তিনি শুধু ভুটানের না তিনি বাংলাদেশেরও। আমরা তাকে সেইভাবেই দেখি। এবং এজন্য আমরা অত্যন্ত গর্বিত।” উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভুটানি ছাত্রছাত্রী বাংলাদেশে চিকিৎসাশাস্ত্রসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছে বলেও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এও জানান, বাংলাদেশ এবং ভুটানের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ, পর্যটন, শিক্ষা ইত্যাদি খাতে সহযোগিতা ক্রমাগত বাড়ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্রমবর্ধমান এই সহায়তার ক্ষেত্রগুলোকে আমরা আরও সংহত করতে চাই।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। স্মরণ করেন মুক্তিযুদ্ধের জাতীয় চার-নেতা, ৩০ লাখ শহীদ এবং দুই লাখ নির্যাতিত মা-বোনের কথা। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি জানান সালাম।
১৯৭৫ সালের ১৫ই অগাস্ট ঘাতকের নির্মম বুলেটে নিহত নিজের পরিবারের সদস্য এবং ওই রাতে নিহত সবাইকে গভীর বেদনা আর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রসঙ্গত বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দশ দিনের এই আয়োজনের প্রথম দিন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ, ১৯শে মার্চ শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে এবং ২২ মার্চ নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভাণ্ডারী প্যারেড গ্রাউন্ডের অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
আগামী ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।