|| সারাবেলা প্রতিবেদন, ঢাকা ||
করোনায় মৃত্যু আর সংক্রমণ কোনটাই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না অন্য অনেক দেশের বাংলাদেশেও। গেল চব্বিশ ঘন্টায় দেশে নতুন করে এই ভাইরাস সংক্রমণে মারা গেছেন আরও ২২ জন। এর মধ্য দিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা এখন ৬৭২ জন। এছাড়া সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত একদিনে আরও ২ হাজার ৩৮১ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ায় দেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯ হাজার ৫৩৪ জনে।
এদিকে রোববার থেকে সারাদেশে গণ পরিবহণ চলাচলের অনুমতি দেওয়ায় সংক্রমণ বিস্তৃতির শঙ্কায় পড়েছে দেশের মানুষ। এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহেদ মালিক জানিয়েছেন, সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার অনুযায়ী সারা দেশকে লাল, হলুদ ও সবুজ এ্রই তিন জোনে ভাগ করতে যাচ্ছে সরকার।
লকডাউনের পর ‘সীমিত পরিসরে’ অফিস খোলার দ্বিতীয় দিন সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠক শেষে মন্ত্রী বলেন, “করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার অনুযায়ী সারা দেশকে রেড, গ্রিন ও ইয়োলো জোনে ভাগ করা হবে। আমাদের বিশেষজ্ঞ টিম নিয়ে গত পরশুদিন প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করেছি। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর সাথে বিস্তারিত এ বিষয়ে আলাপ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী পরামর্শ দিয়েছেন সে পরামর্শ অনুযায়ী আমরা আজ বসলাম।”
মন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শমত এখন একটি পরিকল্পনা তৈরি করা হবে।
পরিকল্পনাটি নীতিগতভাবে সোমবারের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “ আমরা এখন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা দিয়ে দেব। তখন মেয়র, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং আমরাও (স্বাস্থ্য) থাকব। সবাই মিলে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করব।”
পরিকল্পনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “আমাদের পরিকল্পনা এখন পর্যন্ত এটাই। এখন বিশেষজ্ঞরা তারা কীভাবে বাস্তবায়ন করবে বা জোনিং করবে সেটা তারা জানে।”
কীভাবে কোন সূচকের ভিত্তিতে জোন করা হবে সে সম্পর্কে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “এখনও জোন করা হয়নি। যখন করা হবে তখন জানতে পারবেন। ঢাকা, নারায়াণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রাম সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত হয়েছে। যদি কোনো জোন রেড হয়ে থাকে সেগুলোকে রেড করা হবে। তবে বাংলাদেশের অধিকাংশ জেলা ও উপজেলা এখনও অনেকাংশে ভালো আছে। আমরা সেটা ভালো রাখতে চাই। ভালো রাখার জন্যই আজকের এই সভা।”
এলাকাভিত্তিক লকডাউনের সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না প্রশ্ন করা হলে মন্ত্রী বলেন, “জোনিংয়ের মাধ্যমেই সব করা হবে। যে জোনের মধ্যে খুব বেশি সংক্রমিত হবে; ছোট্ট এলাকা, ঢাকার ভেতরে… ধরেন একটা ছোট্ট এলাকা-সেখানে হয়ত একটি এলাকাকে বলব যে, এই এলাকা বন্ধ থাকবে এই কয় দিনের জন্য। এভাবে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেবে, সেই অনুযায়ী আমরা কাজ করব।”
এই ভাগে ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ রেড জোনে পড়ছে কিনা জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “এ কাজ বিশেষজ্ঞরা করবে। তবে আমরা মনে করি রেড জোন হওয়া উচিত, কারণ এখানে তো অনেক সংক্রমিত।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যা বললেন
সংক্রমণের হার প্রতিদিনই বাড়ছে। পাশাপাশি করোনাভাইরাস পরীক্ষার হারও বাড়ছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, “আজকের (সোমবার) বৈঠকে আমরা কয়েকটা জোন মার্কিং করছি। যেমন, রেড, গ্রিন ও ইয়োলো। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ছিল এই জোনগুলোর মধ্যে রেড জোনকে কীভাবে গ্রিন জোন করা যায়, সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।”
তিনি এও বলেন, “স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে কিছু প্রস্তাবনা দেবেন। সেই প্রস্তাবনা আমরা খুব শিগগিরই বাস্তবায়ন করব। এছাড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে ইতোমধ্যে একটি নির্দেশনা দিয়েছেন যে, ২৫ শতাংশ কর্মকর্তার বেশি কেউ যেন একসাথে অফিসে না আসেন বা পর্যায়ক্রমে তারা যাতে অফিসে আসেন।”
গেল চব্বিশ ঘন্টায় মারা গেল ২২ জন
করোনা সংক্রমণে গেল চব্বিশ ঘন্টায় নতুন করে আরও ২২ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৬৭২ জন। এছাড়া একই সময়ে নমুন পরীক্ষায় করোনা উপস্থিতি মিলেছে আরও ২ হাজার ৩৮১ জনের মধ্যে। এ নিয়ে দেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এখন ৪৯ হাজার ৫৩৪ জন।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত অলাইন বুলেটিনে যুক্ত হয়ে প্রতিষ্ঠানটির অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা করোনা সংক্রমণের সবশেষ সরকারি এসব তথ্য জানান। তিনি বলের, সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন আরও ৮১৬ জন। সব মিলে এ পর্যন্ত মোট ১০ হাজার ৫৯৭ জন সুস্থ হয়ে উঠলেন।
মারা যাওয়াদের বিশ্লেষণাত্মক পরিসংখ্যান জানাতে গিয়ে নাসিমা সুলতানা বলেন, গত এক দিনে যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে ১৯ জন পুরুষ এবং ৩ জন নারী। তাদের মধ্যে ১১ জন ঢাকা বিভাগের, ৮ জন চট্টগ্রামের, ১ জন বরিশালের এবং ২ জন সিলেট বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। এই ২২ জনের মধ্যে দুইজনের বয়স ছিল ৮০ বছরের বেশি। এছাড়া ৭ জনের বয়স ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে, ৪ জন ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ৮ জন ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে এবং ১ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ছিল।
সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত দেশের ৫২টি পরীক্ষাগারে ১১ হাজার ৪৩৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে জানিয়ে ডা. নাসিমা বলেন, নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৮১ শতাংশ। শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় সুস্থতার হার ২১ দশমিক ৩৯ শতাংশ, মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে নেওয়া হয়েছে ৪৫৯ জনকে। বর্তমানে সারা দেশে আইসোলেশনে রয়েছেন ৬ হাজার ২১ জন রোগী।