|| সারাবেলা প্রতিবেদন, ঢাকা ||
রিজেন্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতাচুক্তি সই হওয়ার আগে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদ টিভি পর্দার বাইরে আর কোনভাবে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদকে দেখেননি বলে দাবি করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এছাড়া কোভিড-১৯ চিকিৎসা নিয়ে প্রতারণার মুখে রিজেন্ট হাসপাতাল সম্পর্কে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের’ নির্দেশেই মোহাম্মদ সাহেদের ওই হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন তারা। গত ২১শে মার্চ ওই সমঝোতা স্মারক সই হয়। এছাড়া করোনাভাইরাসের পরীক্ষা নিয়ে হাজারো মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা প্রতিষ্ঠান জেকেজি নিয়েও নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
শনিবার অধিদফতরের দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রিজেন্টের পাশাপাশি জেকেজি সম্পর্কে বলা হয়েছে, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান ওভাল গ্রুপ লিমিটেডের মালিক আরিফুল চৌধুরীর এই প্রতিষ্ঠান এর আগেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অনেক কাজ করেছে। এবারে এই দুর্যোগের মধ্যেও তারা এভাবে প্রতারণা করবে তা অধিদফতরের কর্মকর্তাদের ধারণায় ছিল না।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক ডা. মো. জাহাঙ্গীর কবিরের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “ইদানিং কোনো কোনো স্বার্থান্বেষী মহল কল্পিত ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে গণমাধ্যমকে বিভ্রান্ত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সুনাম নষ্ট করার প্রয়াস চালাচ্ছেন। রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক মো. সাহেদ করিমের বিরুদ্ধে এখন গণমাধ্যমে যেসব প্রতারণার খবর প্রকাশ হচ্ছে সে বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আগে থেকে কিছুই জানতো না।”
দেশে কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেলে কোনো বেসরকারি হাসপাতাল কোভিড রোগী ভর্তি করতে চাইছিল না। এমন পরিস্থিতিতে সাহেদ করিম রিজেন্ট হাসপাতাল উত্তরা ও মিরপুর শাখাকে কোভিড হাসপাতাল হিসেবে ডেডিকেটেড করার আগ্রহ জানায়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়, “মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল বিভাগ সমঝোতা স্মারক সই করার উদ্যোগ নেয়। ক্লিনিক দুটি সরেজমিনে পরিদর্শনের সময় চিকিৎসার উপযুক্ত পরিবেশ দেখলেও লাইসেন্স নবায়ন ছিল না। বেসরকারি পর্যায়ে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসায় অন্য বেসরকারি হাসপাতালগুলোকেও উৎসাহ দেওয়ার লক্ষ্যে লাইসেন্স নবায়নের শর্ত দিয়ে রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করা হয়।”
তবে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ’ বলতে ডা. জাহাঙ্গীর কবির গণমাধ্যমকে বলেন, “ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলতে এখানে বিশেষ কাউকে বোঝানো হয়নি। পুরো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ই আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।”
গেল ২১শে মার্চ সমঝোতা স্বারক সই হওয়ার আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সঙ্গে পরিচয় তো দূরের কথা টক শো’র বাইরে রিজেন্ট হাসপাতালমালিক মো. সাহেদকে তিনি দেখেননি বলেও দাবি করা হয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে। তবে সমঝোতা স্বারক সইয়ের পর বেশ কয়েকবার তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এসেছিলেন। এ সময় মো. সাহেদ তার সঙ্গে বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ আছে এবং তার ক্লিনিকগুলোয় কোন কোন বিশিষ্ট ব্যক্তির আক্রান্ত আত্মীয় ভর্তি আছেন সেসব কথা বলার চেষ্টা করতেন।”
গেল ২১শে মার্চ স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার পর থেকে দেশের প্রথম কোভিড-১৯ চিকিৎসায় ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে নমুনা পরীক্ষা ও চিকিৎসা দিয়ে আসলেও প্রতারণার বিষয়টি ধরা পড়ে সম্প্রতি র্যাবের অভিযানে। পরে গণমাধ্যমকে র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কোভিড পরীক্ষার ভুয়া পরীক্ষাপ্রতিবেদন দিয়ে প্রায় ছয় হাজার মানুষের কাছ থেকে কোটি টাকারও বেশি হাতিয়ে নেওয়ার প্রমান তারা পেয়েছেন তাদের অভিযান ও অনুসন্ধানে।
র্যাবের অনুসন্ধানে নমুনা পরীক্ষার ভুয়া প্রতিবেদন ছাড়াও অভিযানে অনেক অনিয়মের প্রমাণ পেয়ে রিজেন্টের উত্তরা ও মিরপুর দুটি শাখাই সিলগালা করে দেয় র্যাব। পরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকেও উত্তরা ও মিরপুরের হাসপাতাল দুটি বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়।
প্রমাণিত এসব অভিযোগে র্যাবের করা মামলায় রিজেন্ট হাসপাতালের নয়জন কর্মকর্তা-কর্মচারী গ্রেফতার হলেও মালিক মোহাম্মদ সাহেদসহ তার বেশ কয়েকজন সহযোগীকে এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাদের ধরার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়ে আসছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।
জেকেজি নিয়ে যা বলা হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে
জোবেদা খাতুন হেলথ কেয়ারকে (জেকেজি) নমুনা সংগ্রহের অনুমতি কেন দেওয়া হয়েছে সে নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, ওভাল গ্রুপ লিমিটেড নামে একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানের মালিক হচ্ছেন জেকেজির প্রধান সমন্বয়ক আরিফুল চৌধুরী । এই ওভাল গ্রুপ ২০১৮ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা সপ্তাহ ২০১৮, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠান আয়োজনের দায়িত্ব পালন করে। করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পর আরিফুল হক জানান, জেকেজি গ্রুপ দক্ষিণ কোরিয়ার মডেলে বাংলাদেশে কিছু বুথ স্থাপন করতে চায়। এসব বুথের মাধ্যমে নমুনা সংগ্রহ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গবেষণাগারে সরবরাহ করা হবে। এজন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বা সরকারকে কোনো অর্থ দিতে হবে না।
আরিফুল হকের এমন প্রস্তাবে কর্তৃপক্ষের ধারণা হয় যেহেতু আগে থেকেই ওভাল গ্রুপ তাদের বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানের আয়োজন সফলভাবে সম্পন্ন করেছে এবং এবারের ধারণাটিও ভালো এবং কোভিড পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ বাড়ানোও দরকার- এই দুই বিবেচনায় জেকেজি গ্রুপকে বুথ স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে পরবর্তীতে প্রতারণার অভিযোগ ওঠায় বুথ পরিচালনার অনুমতি বাতিল করা হয়।”
এক্ষেত্রেও রিজেন্টের মতেই জেকেজিও প্রতারণা করতে পারে এমন ধারণা অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষের ছিল না বলেও জানানো হয়েছে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে। বলা হয়েছে, “দ্রুত কোভিড-১৯ স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণের মূল লক্ষ্য ও সদিচ্ছা নিয়েই জেকেজিকে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।”
প্রতারণার অভিযোগে জেকেজি হেলথ কেয়ারের প্রধান নির্বাহী (সিইও) আরিফুল চৌধুরীকে অবশ্য গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠাতে সক্ষম হয়েছে আইন শৃংখলা বাহিনী।
তবে এই দুই প্রতিষ্ঠানকে করোনাভাইরাসের চিকিৎসা ও নমুনা পরীক্ষার অনুমতি দেওয়াকে কেন্দ্র করে গোটা স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তাদের চরিত্র হননের চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “কেউ অপরাধ করলে তদন্তেই তা ধরা পড়বে এবং শাস্তি হবে। মিথ্যা তথ্য দিয়ে ব্যক্তির চরিত্র হনন এবং তাদের অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা কাম্য নয়।”