|| বার্তা সারাবেলা ||
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া এবং জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি)-র মতো ইস্যু ইতোমধ্যেই ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবার দুই দেশের সম্পর্কে আরেকটি কাঁটা যুক্ত হতে যাচ্ছে। আর সেটি হচ্ছে অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণ।সম্প্রতি এমনসব তথ্য জানিয়ে একটি সংবাদবিশ্লেষন প্রকাশ করেছে ভারতের অন্যতম প্রভাবশালী বাংলা দৈনিক আনন্দ বাজার।
পত্রিকাটির ২৭শে জুলাইয়ের (সোমবার) অনলাইন সংস্করনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গা, ও এনআরস ‘র মতো ইস্যুতে ইতোমধ্যেই মোদী সরকারের সঙ্গে সদ্ভাব টিকিয়ে রাখা নিয়ে নিজদেশেই সমালোচনার মুখে পড়েছেন শেখ হাসিনা।
প্রতিবেদন বলছে, এমনতর সমালোচনার মধ্যেই অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণ ঘিরে ভারতে যে তৎপরতা শুরু হয়েছে, তাতে উদ্বেগ বেড়েছে হাসিনা সরকারের। আনন্দ বাজারের দাবি বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞদের একাংশ নাকি তাদেরকে জানিয়েছেন, রামমন্দির নির্মাণ ঘিরে ভারতে যে তোড়জোড় শুরু হয়েছে, তা হাসিনাবিরোধী, কট্টরপন্থী নেতাদের হাতের অস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে সর্বভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন বলেন, ‘‘ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যে সম্পর্ক, তা ঐতিহাসিক। শিকড়ের সম্পর্ক রয়েছে দু’দেশের মধ্যে। এটাকে (মন্দির নির্মাণ) সেই সম্পর্কে আঘাত হানতে দেব না। তা-ও ভারতের কাছে অনুরোধ, এমন কিছু ঘটতে দেওয়া যাবে না, যা কিনা দু’দেশের সুন্দর ও গভীর সম্পর্কে চিড় ধরাতে পারে।’’
এ ব্যাপারে দু’দেশেরই দায়িত্ব রয়েছে বলে জানিয়ে আবদুল মোমেন বলেন, ‘‘দুই দেশের কাছেই এই নীতি অখণ্ডনীয়। তাই আমার মনে হয়, দু’পক্ষকেই এমন ভাবে কাজ করে যেতে হবে। যাতে এই ভাঙন প্রতিহত করা যায়। আমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক টিকিয়ে রাখা ভারতের সামাজিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কোনও দেশের সরকারই একা এ ব্যাপারে কিছু করতে পারবে না। বরং সাধারণ মানুষ এবং সংবাদমাধ্যমকে এই প্রচেষ্টায় শামিল হতে হবে, যাতে পারস্পরিক সম্পর্ক সঠিক পথে এগোয় এবং উন্নয়নমূলক কাজই গুরুত্ব পায়।’’
অযোধ্যায় মন্দির নির্মাণ নিয়ে এই মুহূর্তে ভারতে যে তোড়জোড় চলছে, তা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মনে প্রভাব ফেলছে বলে মত কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদেরও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ আনন্দ বাজারকে বলেছেন, ‘‘১৯৭১ সালে দ্বিজাতি তত্ত্ব থেকে বেরিয়ে এসেছিল বাংলাদেশ। তার পর থেকে সম্প্রীতির রাজনীতিই দেখে এসেছি আমরা। কিন্তু এই ঘটনা একচ্ছত্র ব্যবস্থাকে আরও সুযোগ করে দেবে। সব কিছু দেখে মনে হচ্ছে, ভারত সেই দ্বিজাতি তত্ত্বের দিকেই এগোচ্ছে। আর এতেই অস্বস্তি বোধ করছি আমরা।’’
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক সরকারি প্রসিকিউটর এবং উগ্রপন্থা ও সন্ত্রাসবাদবিরুদ্ধ আইনজীবী ব্যারিষ্টার তুরিন আফরোজও আনন্দবাজারকে বলেছেন, “মন্দির নির্মাণ নিয়ে এই মাতামাতিতে আগামী দিনে বাংলাদেশে মৌলবাদীরা আরও মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। যখনই মৌলবাদীরা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, ভারত ও বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকেই সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এই ঘটনায় বাংলাদেশে একচ্ছত্রবাদীদের শিকড় আরও শক্ত হবে।’’
তবে মন্দির নির্মাণ নিয়ে মাতামাতি ইতোমধ্যেই ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে বলে মত কূটনীতিকদের একটি অংশ। যা জোর পেয়েছে, বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও ঢাকায় বিদায়ী ভারতীয় হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলির সঙ্গে হাসিনার দেখা না করা এবং ইমরান খানের সঙ্গে ফোনে তাঁর কথোপকথনের জেরে।
এও জানা গেছে, বিদায় নেওয়ার আগে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন রিভা গঙ্গোপাধ্যায় দাস। কিন্তু একাধিক বার অনুরোধ জানানো সত্ত্বেও তাঁর সঙ্গে দেখা করার সময় পাননি শেখ হাসিনা। যদিও করোনার থেকে সাবধানতা অবলম্বন করছেন বলেই হাসিনা তাঁর সঙ্গে দেখা করেননি বলে ঢাকার তরফে সাফাই দেওয়া হয়।
অন্য দিকে, গত সপ্তাহে শেখ হাসিনাকে ফোন করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। করোনা পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা করে দেখার পাশাপাশি, আলাপ আলোচনার মাধ্যমে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান বার করতে ইসলামাবাদে হাসিনাকে আমন্ত্রণও জানান তিনি।
কিন্তু পাকিস্তান থেকে ফোন এলে বাংলাদেশ সরকারের কীইবা করার আছে জানিয়ে আবদুল মোমেন বলেন, ‘‘পাকিস্তান আমাদের ফোন করলে তাতে দোষের কী? একটা ফোন নিয়ে এত সমস্যা কিসের? পৃথিবী তো একটাই। সেখানেই আমরা সকলে বাস করি। দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী ফোনে কথা বলবেন, তাতে এত প্রশ্ন কেন?’’ নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থে কিছু লোক ইচ্ছাকৃত ভাবে বিষয়টিকে মুখরোচক করে তুলছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।