যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা ফ্রিডম হাউসের প্রতিবেদন
|| বার্তা সারাবেলা ||
রাজনৈতিক অধিকার চর্চা ও নাগরিক স্বাধীনতার দিক থেকে বাংলাদেশ একটি ‘আংশিক স্বাধীন’ রাষ্ট্র। বাকস্বাধীনতা নিয়ে কাজ করিয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংগঠন ফ্রিডম হাউসের ২০২১ সালের প্রতিবেদনে এমনটাই বলা হয়েছে, বিশ্বের ২১০টি দেশের মধ্যে ‘আংশিক স্বাধীন’ রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে তলানিতেই বাংলাদেশের অবস্থান।
রাজনৈতিক অধিকার চর্চ্চা আর নাগরিক স্বাধীনতার প্রশ্নে ১ থেকে ১০০ স্কোর ধরে সূচক নির্ধারণ করেছে ফ্রিডম হাউস। এই সুচককে স্বাধীনতা, রাজনৈতিক অধিকার ও নাগরিক স্বাধীনতা এই ধরণে ভাগ করা হয়েছে। আর এই স্কোরের অর্থ ধরা হয়েছে ‘স্বাধীন নয়’, ‘আংশিক স্বাধীন’ ও ‘স্বাধীন’ এই তিন পর্যায়ে।
প্রতিবেদনের বলা হচ্ছে, যেসব দেশ ও অঞ্চলের স্কোর গড়ে ১ থেকে ৩৪ এর মধ্যে, তাদের ‘স্বাধীন নয় (not free)’, ৩৫ থেকে ৭১ হলে তাদের ‘আংশিক স্বাধীন (partly free)’ এবং ৭২ এর বেশি হলে তাদেরকে ‘স্বাধীন (free)’ রাষ্ট্র হিসেবে ধরা হচ্ছে।

এই মানদণ্ডে এ বছর বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়িয়েছে একশ’র মধ্যে ৩৯। এর মধ্যে বাংলাদেশ রাজনৈতিক অধিকারের প্রশ্নে বাংলাদেশ পেয়েছে ৪০-এ ১৫ এবং নাগরিক স্বাধীনতায় পেয়েছে ৬০ এর মধ্যে ২৪। আর এই স্কোর মতো রাজনৈতিক অধিকার ও নাগরিক স্বাধীনতার চর্চ্চার সুযোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি ‘আংশিক স্বাধীন’ রাষ্ট্র।
২০২১ সালে বাংলাদেশের স্কোর ৩৯। যা গত বছর অর্থাৎ ২০২০ সালেও ছিল একই অর্থাৎ ৩৯। এর আগের বছর ২০১৮ সালে এই স্কোর ছিল ৪৫ এবং ২০১৭ সালে ছিল ৪৭।
বাংলাদেশ সরকারের প্রত্যাখ্যান
এদিকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ফ্রিডম হাউসের এই প্রতিবেদনকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করা হয়েছে। সরকারের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, “রিপোর্টটি অ্যাবসুলেটলি বায়াসড ও আনসাবস্টেনশিয়েটড (পুরোপুরি পক্ষপাতমূলক ও ভিত্তিহীন)।”
এদিকে তিব্বত অঞ্চল, সিরিয়া ও দক্ষিণ সুদান ১ স্কোর নিয়ে, ইরিত্রিয়া ২ স্কোর নিয়ে, উত্তর কোরিয়া ৩ স্কোর, সোমালিয়া ও সৌদি আরব ৭ স্কোর নিয়ে ‘স্বাধীন নয়’ দেশের তালিকায় নিচের দিকে রয়েছে।



দক্ষিণ এশিয়ায় ২৭ স্কোর নিয়ে আফগানিস্তান, ২৭ ও ২৮ স্কোর নিয়ে যথাক্রমে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর অঞ্চল ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর অঞ্চল ‘স্বাধীন নয়’ তালিকায়। আর ৩৭ স্কোর নিয়ে পাকিস্তান ‘আংশিক স্বাধীন’ দেশের তালিকায় তলানিতে স্থান পেয়েছে। এরপরেই রয়েছে বাংলাদেশের অবস্থান (স্কোর ৩৯)।
তবে সবচেয়ে ‘স্বাধীন’ দেশ হিসাবে তালিকায় রয়েছে সুইডেন, নরওয়ে ও ফিনল্যান্ড (যাদের স্কোর ১০০)। এরপরে ৯৯ স্কোর নিয়ে আছে নিউজিল্যান্ড, ৯৮ স্কোর নিয়ে আছে কানাডা, উরুগুয়ে ও নেদারল্যান্ড।
এছাড়া ক্ষমতাধর দেশগুলোর মধ্যে জার্মানির স্কোর ৯৪, যুক্তরাজ্যের স্কোর ৯৩, ফ্রান্সের স্কোর ৯০, যুক্তরাষ্ট্রের স্কোর ৮৩, ভারতের স্কোর ৬৭, তুরস্কের স্কোর ৩২, রাশিয়ার স্কোর ৩২, ইরানের স্কোর ১৬, এবং চীনের স্কোর ৯।
কীভাবে মূল্যায়ন এই স্বাধীনতার?



ফ্রিডম হাউসের গবেষণা প্রতিবেদনে রাজনৈতিক অধিকার ও নাগরিক স্বাধীনতা এই দুটি বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক অধিকারের মধ্যে রয়েছে নির্বাচনী ব্যবস্থা ও স্বচ্ছতা, রাজনৈতিক প্লুরালিজম বা বহুত্ববাদ ও রাজনীতিতে অংশগ্রহণের সুযোগ, সরকারের কার্যকারিতা, নীতি-নির্ধারণী ব্যবস্থা, ক্ষমতার ব্যবহার ও স্বচ্ছতা সম্পর্কিত নানা বিষয়।
অন্যদিকে নাগরিক স্বাধীনতার মধ্যে রয়েছে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও বিশ্বাস, মানবাধিকার সংস্থাসহ সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর ভূমিকা, আইনের শাসন ও বিচার ব্যবস্থা, ব্যক্তি স্বাধীনতা। এসব বিষয় পর্যালোচনা করে এমন মূল্যায়ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ফ্রিডম হাউস কর্তৃপক্ষ।