|| আদালত প্রতিবেদক, সংবাদ সারাবেলা ||
রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমকে অস্ত্র আইনের মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে আদালতের পর্যবেক্ষনে বলা হয়েছে, এই রায় তার মত ‘ধুরন্ধর’ ব্যক্তিদের জন্য একটি বার্তা।
সোমবার ঢাকার মহানগর ১ নম্বর বিশেষ ট্রাইবুনালের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েশ মামলার রায় ঘোষণা করবার পাশাপাশি এমন পর্যবেক্ষণ দেন।
এমএলএম ব্যবসা থেকে শুরু করে নানারকম জালিয়াতি-প্রতারণার খবর ঢেকে রাখতে নিয়মিত রাষ্ট্রিক ও গনমাধ্যমে সম্প্রচারিত নানা অনুষ্ঠানে ভিভিআইপিদের সঙ্গে নিজেকে উপস্থিত করতেন রিজেন্ট চেয়ারম্যান সাহেদ করিম। শুধু তাই নয়, সরকারের মন্ত্রী, এমপি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা এবং সরকারি আমলাসহ গনমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে তোলা অসংখ্য সেলফি ফেইসবুকে দিয়ে নিজেকেও তিনি ‘গুরুত্বপূর্ণ’ দেখাতে চাইতেন।
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে চিকিৎসার নামে প্রতারণা এবং জালিয়াতির মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিতে গিয়েই ফেঁসে যান সাহেদ করিম। অভিযোগ পেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালায় তার বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে। সেখানেই প্রকাশিত হয় তার দুর্বৃত্তপনার নানা নজির। এরপর অভিযোগ সুনির্দিষ্ট হওয়ায় তাকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরপর মুখ খুলতে শুরু করেন সাহেদের প্রতারণার শিকার অনেকেই।
গ্রেফতারের পর প্রথম মামলার রায়
সাহেদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া কয়েক ডজন মামলার মধ্যে উত্তরা পশ্চিম থানায় করা অস্ত্র আইনের মামলার রায়টাই তাঁর বিরুদ্ধে প্রথম কোন রায়। রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, “আমাদের এই সমাজে সাহেদের মতো ভদ্রবেশে অনেক লোক রয়েছে, যাদের জন্য এই মামলার রায় একটি বার্তা হিসেবে কাজ করবে।”
অস্ত্র আইনের ১৯ (এ) ধারায় সাহেদকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারক, যা এ আইনের সর্বোচ্চ সাজা। পাশাপাশি আরেকটি ধারায় সাহেদকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে রায়ে। তবে দুই ধারার সাজা একসঙ্গে কার্যকর হবে বলে তার ক্ষেত্রে যাবজ্জীবনই প্রযোজ্য হবে।
রায়ের পর যা বললেন সাহেদ
রায়ের পর সাহেদকে প্রিজন ভ্যানে তোলা হলে তিনি বলেন, ‘আমি ন্যায় বিচার পায়নি। আমি হাইকোর্টে আপিল করব। আমি এটার সাথে জড়িত না।’
‘প্রতারক’ সাহেদনামা
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার মধ্যেই গা ঢাকা দেন প্রতারক সাহেদ করিম। গত ১৫ই জুলাই ভোরে সাতক্ষীরার দেবহাটা সীমান্ত থেকে তাকে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নেয় গোয়েন্দা পুলিশ। রিমান্ডের মধ্যেই ১৮ই জুলাই রাতে তাকে নিয়ে উত্তরায় অভিযান চালিয়ে তার একটি গাড়ি থেকে গুলিসহ একটি পিস্তল এবং কিছু মাদক জব্দ করা হয়।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, “সাহেদ ২০ লাখ টাকা লোন নিয়ে গাড়িটি ক্রয় করেন। কিন্তু তিনি আদালতের কাছে তা স্বীকার করেননি। সাহেদ আদালতের কাছে মিথ্যা তথ্য দেন। তিনি অত্যন্ত চালাক ও ধুরন্ধর ব্যক্তি। গাড়িতে অস্ত্র রাখার বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় আদালতের কাছে তিনি কোনো অনুকম্পা পেতে পারেন না।”
এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী আবদুল্লাহ আবু রায়ের পর বলেন, “যে গাড়ি থেকে অস্ত্রটি উদ্ধার করা হয়েছে, তার মালিকানা যাচাই করে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে রায়ে। সাহেদ যে অপরাধী তা মামলার রায়ে প্রমাণিত হয়েছে। এ রায় সমাজে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।”
এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মো. সাইরুল ইসলাম গত ৩০শে জুলাই ঢাকার মহানগর হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়ার পর ২৭শে অগাস্ট অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার শুরু করেন আদালত। অভিযোগ গঠন থেকে মাত্র আট কার্যদিবসে এ মামলা রায়ের পর্যায়ে আসে।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আবু জানান, বাংলাদেশে এত কম সময়ে এর আগে আর কোনো ফৌজদারি মামলার রায় হয়নি।তবে এতো কমসময়ে কোন ফৌজদারি মামলার রায় হওয়া প্রসঙ্গে সাহেদের আইনজীবী মো. মনিরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, “মাত্র ৮ কার্যদিবসে মামলা শেষ হয়ে গেল। তাড়াহুড়ো বেশি হয়ে গেল। ন্যায়বিচার পেলাম না। রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে যাব।”