|| সারাবেলা প্রতিবেদন, ঢাকা ||
কারাগারেই মারা গেলেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বন্দী মুশতাক আহমেদ। গাজীপুরের কাশিমপুরের হাই সিকিউরিটি কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার মো. গিয়াস উদ্দিন জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাতে কারাভেতরেই মারা যান মুশতাক। সংশ্লিষ্ট মামলায় মুশতাকের বিচার হওয়ার কথা ছিলো।
৫৩ বছর বয়সী মুশতাকের কোনো রোগে ভোগার খবর পাওয়া যায়নি। কী কারণে তার মৃত্যু হয়েছে, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি।
কারা কর্মকর্তা গিয়াস বলেন, “রাত ৮টা ২০ মিনিটের দিকে হঠাৎ তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। দ্রুত তাকে শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেলে নেওয়া হলে ডাক্তার মৃত বলে জানান।” তার বয়স হয়েছিলো ৫৩ বছর। এরআগে অবশ্য মুশতাকের কোনো রোগশোকের তথ্য পাওয়া যায়নি। এবং কী কারণে তিনি মারা গেছেন তাও জানা যায়নি।
বাংলাদেশে কুমির চাষের অন্যতম্য উদ্যোক্তা মুশতাক আহমেদ নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানার ছোট বালাপুলের মানুষ। থাকতেন ঢাকার লালমাটিয়ায়। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অনলাইনে লেখালেখিতে বেশ সক্রিয় ছিলেন তিনি। এই লেখালেখিকে কেন্দ্র করেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় পড়েন তিনি।
করোনাভাইরাস সঙ্কটের মধ্যে গত বছরের ৬ই মে তাকে গ্রেফতার করে র্যাব। একইসঙ্গে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকেও গ্রেফতার করা হয়। পরদিন ৭ই মে ‘সরকারবিরোধী প্রচার ও গুজব ছড়ানোর’ অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তাদের বিরুদ্ধে রমনা থানায় মামলা করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা থানার এসআই জামশেদুল ইসলাম তখন বলেছিলেন, কার্টুনিস্ট কিশোর তার ‘আমি কিশোর’ নামের ফেইসবুক একাউন্টে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সরকারের ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন সমালোচনামূলক কার্টুন-পোস্টার পোস্ট করতেন। আর মুশতাক তার ফেইসবুক অ্যাকাউন্টে কিশোরের সেসব পোস্টের কয়েকটি শেয়ার করেন।
র্যাব-৩ এর ডিএডি আবু বকর সিদ্দিকের করা এই মামলায় রাষ্ট্রচিন্তার সংগঠন দিদারুল ভূইয়া এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নানকেও গ্রেফতার করা হয়েছিল। তবে পরে দিদারুল ও মিনহাজ মান্নান জামিনে মুক্তি পান।
মুশতাক ও কিশোরের পক্ষে বেশ কয়েকবার জামিনের আবেদন হলেও তা আদালতে নামঞ্জুর হয়। মুশতাককে গ্রেফতারের পর পাঠানো হয়েছিল ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে। সেখানে থেকে গেলো বছরের ২৪শে অগাস্ট তাকে কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়।
এই মামলায় আসামির তালিকায় মুশতাক, কিশোর, দিদার, মিনহাজের সঙ্গে আরও ছিলেন নেত্র নিউজের সম্পাদক সুইডেন প্রবাসী তাসনিম খলিল, জার্মানিতে থাকা ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক শাহেদ আলম, হাঙ্গেরি প্রবাসী জুলকারনাইন সায়ের খান (আল জাজিরার প্রতিবেদনের স্যামি), আশিক ইমরান, স্বপন ওয়াহিদ ও ফিলিপ শুমাখারও ছিলেন।
তবে তদন্তের পর পুলিশ শুধু মুশতাক, কিশোর ও দিদারকে আসামি করে এই মাসের শুরুতে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। বাকি আট আসামিকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা।
র্যাবের করা মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ফেইসবুক ব্যবহার করে জাতির জনক, মুক্তিযুদ্ধ, করোনাভাইরাস মহামারী সম্পর্কে গুজব, রাষ্ট্র/সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অভিপ্রায়ে অপপ্রচার বা বিভ্রান্তি ছড়ানো, অস্থিরতা-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারার অভিযোগ আনা হয়েছিল।
হোয়াটস অ্যাপ ও ফেইসবুক মেসেঞ্জারে কিশোর ও মুশতাকের সঙ্গে তাসনিম খলিল, জুলকারনাইন সায়ের খান, শাহেদ আলম, আসিফ মহিউদ্দিনের ‘ষড়যন্ত্রমূলক চ্যাটিংয়ের প্রমাণ’ পাওয়ার দাবিও করেছিল র্যাব।