|| সারাবেলা প্রতিবেদন||
আমাদের পাঠ্যবইয়ের সঙ্গে বাস্তবতার যোগসূত্র নেই জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, বাস্তবতার সঙ্গে মিল নেই বলেই বড় বড় ডিগ্রি অর্জন করলেও বাস্তবে তা কাজে আসছে না। এ কারণেই শিক্ষা ব্যবস্থাকে বাস্তবভিত্তিক করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে পাঠ্যপুস্তকে ‘বড় পরিবর্তন’ আসছে বলেও জানান তিনি। বলেন, সবাইকে শিক্ষার আওতায় আনার লক্ষ্য ‘পূরণ হওয়ায়’ সরকার এখন এর মানের দিকে নজর দিচ্ছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা নির্বাচনী ইশতেহারে সব পর্যায়ের শিক্ষায় মানোন্নয়নের কথা বলেছি। শিক্ষায় মান উন্নয়ন করতে কারিকুলামে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছি। শিক্ষক নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ খুব জরুরি, আমরা সে বিষয়েও কাজ করছি। একই সঙ্গে লাগসই প্রযুক্তির ব্যবহার করছি।
বুধবার ঢাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এডুকেশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েন অব বাংলাদেশ (ইরাব) এর ‘বেস্ট রিপোটিং অ্যাওয়ার্ড’ বিতরণ ও অভিষেক অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি সরকারের এসব পরিকল্পনার কথা জানান।
মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করাকেই এখন বড় চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দীপু মনি বলেন, “একসময় চ্যালেঞ্জ ছিল সবাইকে শিক্ষার আওতায় আনা, বর্তমানে সেটি সফল হওয়ায় এখন মানসম্মত শিক্ষার দিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। মানসম্মত শিক্ষার মাধ্যমে আমাদের ছেলেমেয়েদের মানবতা, দেশপ্রেম, অভিজ্ঞ করে তোলা হবে। এ জন্য শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তকে বড় পরিবর্তন আনা হচ্ছে।”
একই সঙ্গে চিকিৎসা ও আইনের ডিগ্রিধারী দীপু মনি মনে করেন, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ‘অতিমাত্রায় পরীক্ষার ব্যবস্থা’ তৈরি করা হয়েছে, যা শুধু শিক্ষার্থী নয়, অভিভাবকদের ওপরও বাড়তি চাপ তৈরি করছে। পরীক্ষাকেই মূল্যায়নের একমাত্র ব্যবস্থা বলে অনেকে মনে করেন। সবাই শুধু জিপিএ-৫ পেতে দৌড়াচ্ছে। জিপিএ-৫ এর মোহে দৌড়াতে গিয়ে শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক চাপ বাড়ছে।
এখান থেকে বেরিয়ে আসতে পরীক্ষা ও সনদ নির্ভরতা কমিয়ে পাঠদানকে আনন্দদায়ক করার চেষ্টা হচ্ছে বলেও জানান মন্ত্রী। বলেন, এটি করতে হলে যে শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তা ও মর্যাদাও জরুরি, সে কথা স্বীকার করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “বর্তমানে আমরা এটি নিয়ে কাজ করছি। এ বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে পারলে শিক্ষকরা আরো দায়িত্বশীল হয়ে উঠবেন। পড়ালেখা শুধু পুস্তকভিত্তিক না করে দক্ষতামুখী করে তোলা হবে।”
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। অন্যান্যের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আকরাম আল হোসেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর কোনো সরকারই সেভাবে শিক্ষায় গুরুত্ব দেয়নি। গত কয়েক বছরে শিক্ষার যে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে তা তারই কন্যার কারণে।
সিনিয়র সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন বলেন, আমরা প্রাথমিক শিক্ষার বিভিন্ন সূচকে এগিয়ে যাচ্ছি। শিক্ষায় বড় ধরনের বিপ্লব সাধিত হয়েছে। সামনে ৩৫ হাজার প্রাথমিকশিক্ষক নিয়োগ করতে যাচ্ছি। আগামীতে আমরা গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারবো।
কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব আমিনুল ইসলাম খান বলেন, সাধারণ শিক্ষার মধ্যেও আমরা কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা নিয়ে আসতে চাই। আমরা দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে চাই। যাতে সবাই কর্মমুখী হবে। সে লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার।
মাউশি মহাপরিচালক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, শিক্ষার অগ্রগতির ক্ষেত্রে দুই পক্ষের বোঝাপড়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে শিক্ষা বিটের সাংবাদিকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।
জুরি বোর্ডের বিচারে এ বছর তিনজন ইরাব বেস্ট রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড-২০২০ লাভ করেন। তারা হলেন- কালের কণ্ঠের শরীফুল আলম সুমন, ডেইলি সানের সোলাইমান সালমান এবং বণিক বার্তার সাইফ সুজন।
এ ছাড়া জুরি বোর্ডের সদস্য ছিলেন ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির হেড অব নিউজ আশিষ সৈকত, প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক শরীফুজ্জামান পিন্টু, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইব্রাহিম বিন হারুণ।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম বলেন, পুরস্কৃত করার মধ্য দিয়ে শিক্ষা সাংবাদিকদের কাজের স্বীকৃতি এবং আরও ভালো কাজের অনুপ্রেরণা জোগাবে। পেশাদারিত্বের প্রতি অবিচল থেকে সাংবাদিকরা কাজ করবেন। তাহলেই সাংবাদিকতার উদ্দেশ্য পুরণ হবে।
ইরাব সাধারণ সম্পাদক শরিফুল আলম সুমন অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর, বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড, এনসিটিবি, ইউজিসিসহ শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন দফতর প্রধান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান, শিক্ষক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও অভিভাবকরাও উপস্থিত ছিলেন।