|| সারাবেলা প্রতিবেদন, ঢাকা ||
করোনার আর্থিক অভিঘাতের মধ্যেই বাসভাড়া বাড়ছে প্রায় দ্বিগুণ। পরিবহণমালিকদের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত শনিবারের বৈঠকে দূরপাল্লা ও লোকাল বাসের ভাড়া ৮০ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি-বিআরটি এ‘র গণপরিবহণ ভাড়া নির্ধারণ কমিটি। এতে করে প্রতি কিলোমিটারের জন্য ৩ টাকা হারে ভাড়া গুণতে হবে যাত্রী সাধারণকে।
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১৬ সালের ১লা অক্টোবর থেকে রাজধানীতে বাসের ভাড়া নির্ধারিত রয়েছে প্রতি কিলোমিটারে এক টাকা ৭০ পয়সা। আর মিনিবাসের ভাড়া এক টাকা ৬০ পয়সা। এই হারের সঙ্গে ৮০ শতাংশ যোগ করলে ভাড়া দাঁড়ায় প্রতি কিলোমিটারে কমবেশী তিন টাকা।
তবে জনদূরত্ব দূরত্ব বজায় রাখতে প্রতি বাসে ৫০ ভাগ সিট খালি রাখতে হবে বিধায় ভাড়া সমন্বয় করতেই নতুন এই প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান ইউসূব আলী মোল্লা।
তিনি শনিবার বলেন, “প্রত্যেক বাসে ৫০ শতাংশ সিট খালি রাখতে হবে। সেই ক্ষেত্রে বাস মালিকরা লোকসানে পড়বে। আজকে বিআরটিএ’র গণপরিবহণ ভাড়া নির্ধারণ কমিটি সংশ্লিষ্ট সকলের উপস্থিতিতেই ৮০ শতাংশ ভাড়া নির্ধারণের সুপারিশ করেছি। অর্থাৎ ৫০ ভাগ যাত্রীর কাছ থেকে ৮০ ভাগ ভাড়া নেওয়া হবে।”
বাসভাড়া বর্তমানের প্রায় দ্বিগুণ করার ব্যাখ্যায় ইউসূব আলী মোল্লা বলেন, “৪০ সিটের বাসে ২০ জন যাত্রী থাকলে খালি সিটের ভাড়া যাত্রীদেরই দিতে হবে। সেই হিসাবে ভাড়া ৮০ শতাংশ করা হচ্ছে। আর এই বাড়তি ভাড়া করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি বিবেচনায় বাড়ানো হয়েছে। এটা সকল যাত্রী ও মালিকদের মেনে নিতে হবে।”
প্রতি কিলো মিটারে ভাড়া হচ্ছে কত
ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে বর্তমানে বাসের ক্ষেত্রে প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া গুণতে হচ্ছে এক টাকা ৭০ পয়সা। এর সঙ্গে প্রস্তাবিত ৮০ শতাংশ যোগ করলে যাত্রী সাধারণকে কিলোমিটার প্রতি ভাড়া গুণতে হবে তিন টাকা ছয় পয়সা। আর মিনিবাসের বর্তমান ভাড়া কিলোমিটারে রয়েছে এক টাকা ৬০ পয়সা। এর সঙ্গে বাড়তি ৮০ শতাংশ যোগ করলে ভাড়া পড়ছে দুই টাকা ৮৮ পয়সা।
অন্যদিকে ২০১৬ সালের ১৫ই মে থেকে কার্যকর আন্ত:জেলা তথা দূরপাল্লার ডিজেল চালিত বাসের ভাড়া হচ্ছে প্রতি কিলোমিটারে এক টাকা ৪২ পয়সা। এর সঙ্গে প্রস্তাবিত ৮০ শতাংশ যোগ করলে ভাড়া দাঁড়াচ্ছে কিলোমিটার প্রতি দুই টাকা ৫৫ পয়সা।
ভাড়া না বাড়ানোর দাবি যাত্রী কল্যাণ সমিতির
এদিকে গণপরিবহনের ভাড়া ৮০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এই দাবি জানান।
তিনি বলেন, ‘সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধের পদক্ষেপ না নিয়ে, জ্বালানি তেলের মূল্য না কমিয়ে, পরিবহনের চালক-শ্রমিকদের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ সম্পর্কিত কোনো প্রকার প্রশিক্ষণ না দিয়ে, গণপরিবহন চালুর মধ্য দিয়ে জনগণকে চরম ঝুঁকির মধ্যে ফেলা হচ্ছে। সড়কে নারকীয় পরিবেশের কোনো প্রকার উন্নতি ঘটানো ব্যতিরেকে উল্টো গণপরিবহনের ভাড়া বাড়িয়ে দিয়ে সরকার সড়কে নৈরাজ্য ও যাত্রী হয়রানি আরও বাড়ানোর সুযোগ তৈরি করেছে।’
মোজাম্মেল হক বলেন, ‘যেকোনো সংকটে বা অজুহাতে দেশে গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ালে তা স্বাভাবিক সময়ে কমানোর কোনো নজির নেই। সরকার এক লাফে ৮০ শতাংশ ভাড়া বর্ধিত করলেও প্রকৃতপক্ষে বাস মালিকরা নানা ছলচাতুরী করে ১২০ থেকে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত ভাড়া বাড়িয়ে দেবে।’
গণপরিবহনের বর্ধিত এই ভাড়া প্রত্যাহার করে রাষ্ট্রীয় ভর্তুকি দিয়ে বিদ্যমান ভাড়ায় জনসাধারণকে যাতায়াতের সুযোগ করে দেওয়ারও দাবি জানান বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
এখনি বাড়ছে না লঞ্চের ভাড়া
এখনকার ভাড়াতেই রোববার থেকে আপাতত লঞ্চ চলাচল শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। তবে ভাড়া বাড়বে কিনা- সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে একটি কারিগরি কমিটি গঠন করা হবে।
গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এক আদেশে সীমিত পরিসরে গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেওয়ার পরই স্বাস্থ্যবিধি মেনে নৌ যান চালাতে শুক্রবার লঞ্চ মালিকদের নিয়ে বৈঠক করে বিআইডব্লিউটিএ।
বাড়ছে না রেলের ভাড়া
এদিকে আপাতত শুধু আন্ত:নগর ট্রেন চালানোর মধ্য দিয়ে দুই মাস পর রোববার থেকে শুরু হচ্ছে রেল চলাচল। কাউন্টারে টিকিট মিলবে না জানিয়ে রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছেন, টিকিট পাওয়া যাবে শুধু অনলাইনে। শনিবার রেলভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী জানান, এই দফায় শুধু আন্ত:নগর ট্রেনগুলো ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চললেও ভাড়া বাড়বে না।
প্রসঙ্গত, আগামীকাল রোববার থেকে সীমিত আকারে গণপরিবহণ চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আর এতে যাত্রীদের দিতে হবে বাড়তি ভাড়া।
শনিবার বাস মালিকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. ইউসুব আলী মোল্লা বলেন, ‘ভাড়া ৮০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। বর্তমান যে ভাড়া তার সঙ্গে এ বাড়তি ভাড়া মিলিয়ে দেওয়া হবে।’