|| সারাবেলা প্রতিবেদন, ঢাকা ||
বাবার খুনের প্রায় ছয় বছর পর ১৯৮১ সালের ১৭ই মে দেশে ফেরেন শেখ হাসিনা। ১৯৭৫ সালের ১৫ই অগাস্ট যেদিন বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়, শেখ হাসিনা তখন তার ছোট বোন শেখ রেহানা, স্বামী ও দুই সন্তানসহ ছিলেন তখনকার পশ্চিম জার্মানিতে। ফলে তারা প্রাণে বেঁচে যান।
পশ্চিম জার্মানি থেকেই স্ত্রী শেখ হাসিনা, শ্যালিকা শেখ রেহানা এবং শিশু পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ও শিশু কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেনের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা এবং প্রাণ রক্ষার জন্য ভারত সরকারের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন পরমাণু বিজ্ঞানী এম এ ওয়াজেদ মিয়া।
সেই কঠিন সময়ে তাদের হাতে যথেষ্ট টাকা ছিল না। শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা মাত্র ২৫ ডলার সঙ্গে নিয়ে দেশ থেকে জার্মানি গিয়েছিলেন।
২৪শে অগাস্ট সকালে ভারতীয় দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা তাদের ফ্রাঙ্কফুর্ট বিমানবন্দরে নিয়ে যান। তবে তাদের যাত্রার বিষয়টি সে সময় গোপন রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।
![](https://i0.wp.com/www.sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/05/Hasina-Return-05.jpg?resize=377%2C420&ssl=1)
এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইটে ২৫শে অগাস্ট সকালে দিল্লি পৌঁছান শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, ওয়াজেদ মিয়া এবং তাদের দুই সন্তান। বিমানবন্দর থেকে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় নয়া দিল্লির ডিফেন্স কলোনির একটি বাসায়। ওই বাসায় ছিল একটি ড্রইং-কাম-ডাইনিং রুম এবং দুটো শয়নকক্ষ। ওই বাড়ির বাইরে না যাওয়া, সেখানকার কারো কাছে পরিচয় না দেওয়া এবং দিল্লির কারো সঙ্গে যোগাযোগ না রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল তাদের।
ভারতে তখন জরুরি অবস্থা চলছে। বাংলাদেশ সম্পর্কে তেমন কোনো খবরাখবর ভারতের পত্রিকায় ছাপা হচ্ছে না। কাজেই তখনকার বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে এক রকম অন্ধকারে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে।
দিল্লিতে পৌঁছানোর দুই সপ্তাহ পর ওয়াজেদ মিয়া এবং শেখ হাসিনা ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বাসায় যান। সেখানেই শেখ হাসিনা ১৫ই অগাস্ট ঘটে যাওয়া পুরো ঘটনা জানতে পারেন। এরপর শেখ হাসিনাকে ইন্ডিয়া গেইটের কাছে পান্ডারা পার্কের ‘সি’ ব্লকে একটি ফ্ল্যাট দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার জন্য দুজন নিরাপত্তরক্ষীও দেওযা হয়।
ওয়াজেদ মিয়াকে ১৯৭৫ সালের ১লা অক্টোবর ভারতের পরমাণু শক্তি বিভাগে ফেলোশিপ দেওয়া হয়। ১৯৭৬ সালের ২৪শে জুলাই শেখ রেহানার বিয়ে হয় লন্ডনপ্রবাসী শফিক সিদ্দিকের সঙ্গে। কিন্তু শেখ হাসিনা এবং তার স্বামী ওই বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেননি।
১৯৭৯ ও ১৯৮০ সালে আওয়ামী লীগের কয়েকজন সিনিয়র নেতা বিভিন্ন সময় দিল্লি যান তাদের খোঁজ-খবর নিতে। আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাক কাবুল যাওয়ার সময় এবং সেখান থেকে ফেরার সময় তাদের সঙ্গে দেখা করেন।
![](https://i0.wp.com/www.sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/05/pm-Hasina-Home-Coming.jpg?resize=295%2C429&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/www.sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/05/pm-Hasina-Home-Coming.jpg?resize=295%2C429&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/www.sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/05/pm-Hasina-Home-Coming.jpg?resize=295%2C429&ssl=1)
আওয়ামী লীগ নেতা জিল্লুর রহমান, আব্দুস সামাদ আজাদ, তৎকালীন যুবলীগ নেতা আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের তৎকালীন যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী দিল্লিতে যান। তাদের সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নিতে রাজি করানো।
১৯৮০ সালের ৪ঠা এপ্রিল শেখ হাসিনা নিজের সন্তানদের নিয়ে লন্ডনে যান রেহানার সঙ্গে দেখা করতে। পরের বছর ১৬ই ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে থাকা অবস্থায় তিনি খবর পান, ১৩ থেকে ১৫ই ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে তাকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়েছে। এর এক সপ্তাহ পরে আওয়ামী লীগের সেই সময়ের শীর্ষ নেতারা দিল্লি যান।
আব্দুল মালেক উকিল, ড. কামাল হোসেন, জিল্লুর রহমান, আব্দুল মান্নান, আব্দুস সামাদ, এম কোরবান আলী, বেগম জোহরা তাজউদ্দীন, স্বামী গোলাম আকবার চৌধুরীসহ বেগম সাজেদা চৌধুরী, আমির হোসেন আমু, বেগম আইভি রহমান, আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ ১৯৮১ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে দিল্লি পৌঁছান। শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ২৮শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কয়েকটি বৈঠক করেন তারা।
এরপর ড. কামাল হোসেন ও সাজেদা চৌধুরী ছাড়া সবাই ঢাকায় ফিরে আসেন। কামাল ও সাজেদার ওপর দায়িত্ব ছিল তারা শেখ হাসিনার ঢাকা ফেরার তারিখ চূড়ান্ত করবেন। তারা মার্চের দুটো সম্ভাব্য তারিখ প্রস্তাব করলেও তা নিয়ে ওয়াজেদ মিয়ার আপত্তি ছিল।
১৬ই মে শেখ হাসিনা ও তার মেয়ে দিল্লি থেকে একটি ফ্লাইটে কলকাতা পৌঁছান। ১৭ই মে বিকালে তারা কলকাতা থেকে ঢাকায় পৌঁছান। তাদের সঙ্গে ছিলেন আব্দুস সামাদ আজাদ ও এম কোরবান আলী।
![](https://i2.wp.com/www.sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/05/Hasina-Return-01.jpg?fit=700%2C412&ssl=1)
![](https://i2.wp.com/www.sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/05/Hasina-Return-01.jpg?fit=700%2C412&ssl=1)
![](https://i2.wp.com/www.sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/05/Hasina-Return-01.jpg?fit=700%2C412&ssl=1)
সেদিন দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া আর প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে হাজার হাজার জনতা জড়ো হয়েছিল তেজগাঁওয়ের পুরনো বিমানবন্দরে। ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয় বিমানবন্দর এলাকা। ‘হাসিনা তোমায় কথা দিলাম পিতৃ হত্যার বদলা নেব।’, ‘শেখ হাসিনার আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম’ স্লোগানে মুখরিত ছিল এলাকা।
বিমানবন্দর থেকে শেখ হাসিনাকে নিয়ে যাওয়া হয় মানিক মিয়া এভিনিউয়ে, সেখানে লাখো জনতার উপস্থিতিতে এক সমাবেশে শেখ হাসিনা বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে বলেছিলেন, “সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তার আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির জনকের হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই। আমার আর হারাবার কিছুই নেই। পিতা-মাতা, ভাই রাসেল সকলকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি। আমি আপনাদের মাঝেই তাদেরকে ফিরে পেতে চাই।”
![](https://i0.wp.com/www.sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/05/Hasina-Return-08-2.jpg?resize=324%2C322&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/www.sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/05/Hasina-Return-08-2.jpg?resize=324%2C322&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/www.sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/05/Hasina-Return-08-2.jpg?resize=324%2C322&ssl=1)
দিবসটি উপলক্ষে প্রতি বছর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আলোচনা সভা করা হলেও এবার করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে হচ্ছে না।
তবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে যথাযোগ্য মর্যাদায় শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালনের জন্য দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
শনিবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “দেশ ও জাতির কল্যাণে, গণতন্ত্রের উন্নয়নে ও আধুনিক উন্নত সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ায় অসামান্য অবদান রাখার জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনার সুন্দর জীবন ও দীর্ঘায়ু কামনা করে ঘরে বসেই পরম করুণাময়ের নিকট বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা করার জন্য আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী এবং দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
একই সাথে জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা প্রতিপালনের মধ্য দিয়ে করোনাভাইরাস সংকট মোকাবেলায় চলমান কর্মোদ্যোগকে আরও গতিশীল করে প্রিয় নেত্রীর প্রতি ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী এবং দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাই।”
তথ্যসূত্র: এম এ ওয়াজেদ মিয়ার লেখা ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ’।