|| সারাবেলা প্রতিবেদন, ঢাকা ||
পঁচাত্তরের ১৫ই অগাস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যায় খোন্দকার মোশতাকের সহযোগী ছিলেন জিয়াউর রহমান। এমনটা দাবি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বললেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে জড়িত ছিলেন।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রোববার বিকালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, “এই হত্যাকাণ্ডে সেইদিন কর্নেল ফারুক, কর্নেল রশীদ, মেজর হুদা, মেজর ডালিম, মেজর শাহরিয়ার, মেজর পাশা সামরিক অফিসার এরা সকলেই যেমন, মহিউদ্দিন, মাজেদ, মোসলেহউদ্দিন, রাশেদ, খায়রুজ্জামানসহ সকলেই জড়িত ছিল।”
কিন্তু এই সামরিক অফিসারদের কারা, কে মদদ দিয়েছিল এবং তাদের পেছনে কে ছিল- প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “আমার বাবার কেবিনেটেরই এক মন্ত্রী খোন্দকার মোশতাক, তার উচ্চাভিলাষ আর তার সহযোগী জিয়াউর রহমান, যে একজন মেজর ছিল, যাকে প্রমোশন দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মেজর জেনারেল বানিয়েছিলেন, সে এর সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে জড়িত ছিল। সেটা স্পষ্ট পাওয়া যায় এই হত্যাকাণ্ডের পর…কর্নেল ফারুক এবং কর্নেল রশীদ তারা একটা ইন্টারভিউ দেয়, যেখানে তারা স্পষ্ট বলে যে তাদের সঙ্গে জিয়াউর রহমান সম্পূর্ণভাবে জড়িত ছিল এবং তার মদদেই তারা এই ঘটনা ঘটাতে সক্ষম হয়েছে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “…সেটা আরও প্রমাণ হয় বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর, তিনি রাষ্ট্রপতি… তাকে হত্যার পর সেখানে সংবিধান মানা হয়নি। ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজরুল ইসলাম সাহেব কিন্তু রাষ্ট্রপতি হননি। রাষ্ট্রপতি ঘোষিত হল খন্দকার মোশতাক। আর খন্দকার মোশতাক রাষ্ট্রপতি হয়েই জেনারেল জিয়াউর রহমানকে বানালো সেনাবাহিনীর প্রধান। জেনারেল জিয়াউর রহমান মোশতাকের সাথে যদি এই ষড়যন্ত্রে সম্পৃক্ত না থাকে তাহলে কেন মোশতাক তাকেই বেছে নেবে সেনাপ্রধান হিসেবে? ওই খুনিদের সব ধরনের মদদ দেওয়া…এটা তো জিয়াউর রহমানই দিয়েছিল। এখানেই তো তাদের শেষ না। মোশতাক..বেঈমানরা কখনও ক্ষমতায় থাকতে পারে না। মীর জাফরও পারেনি। মীর জাফরকে যারা ব্যবহার করেছিল সিরাজদ্দৌল্লাকে হত্যা করতে…মীর জাফর দুই মাসের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। ঠিক মোশতাকও পারেনি।”
খন্দকার মোশতাককে সরিয়ে জিয়াউর রহমান আইন লঙ্ঘন করে নিজেকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই খুনিরা যারা শুধু ১৫ই অগাস্টের হত্যাকাণ্ডই ঘটায়নি, ৩রা নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যারা হত্যাকাণ্ড ঘটায়, তাদেরকে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া, তাদের রাজনৈতিক আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা, ব্যাংকক হয়ে তাদেরকে লিবিয়াতে পাঠানো এবং সেখান থেকে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে…জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি হয়েই এই খুনিদেরকে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করে।”
জিয়াউর রহমান জাতির পিতার খুনিদের রক্ষায় ইনডেমনিটি আইন করেছিল বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ারও সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, “জিয়াউর রহমান যেটুকু করে গিয়েছেন তারপর তার স্ত্রী আসার পর তো আরও বেশি। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে কি করেছে? সকলে নিশ্চয়ই ভুলে যাননি।”
১৯৯৬ সালে ১৫ই ফেব্রুযারি ভোটারবিহীন নির্বাচনে কোনো দল অংশ নেয়নি জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, “নামকাওয়াস্তে কিছু দল জুড়ে দিয়ে একটা নির্বাচনের নামে প্রহসন করা হয়েছিল। সারা বাংলাদেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন করে সেই নির্বাচন করার চেষ্টা করা হয়েছিল। ভোটাররাও ভোট দিতে আসেনি। তারপর খালেদা জিয়া নিজেকে নির্বাচিত ঘোষণা দেন। আর সেই নির্বাচনে কর্নেল রশীদকে নির্বাচিত করা হলো, মেজর হুদাকে নির্বাচিত করা হলো। তাদেরকে পার্লামেন্টে বসানো হলো এবং সেই খুনি কর্নেল রশীদকে বিরোধীদলের আসনে বসানো হয়েছিল।”
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে এসে ইনডেমনিটি আইন বাতিল করে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “সেই খুনিদের তালিকায় যারা ছিল অনেকে বিদেশে। পাশা, সে মারা যায় বিদেশে। আর খায়রুজ্জামান সে চাকরি ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে যায়।”
খুনিদের প্রতি খালেদা জিয়ার এতো দরদ কেন প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাশা মারা গেলেও তাকে পদোন্নতি দেয়া এবং খায়রুজ্জামানকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চাকরিতে পুনর্বহাল করেন খালেদা জিয়া। বলেন, “তার স্বামী যা করেছে…জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারী…তাদের ইনডেমনিটি আর সে এসে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করে তাদের ইনডেমনিটি দিয়ে গেছে।”
ভিডিও কনফারেন্স মাধ্যমে অনুষ্ঠিত সভায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রান্তে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।