|| সারাবেলা প্রতিবেদন, ঢাকা ||
এবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনের পেছনের শক্তি ও এর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য খুঁজে বের করতে কমিশন করতে যাচ্ছে সরকার। গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেছেন, পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্টের রাতের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত সেনাসদস্যদের বিচার হলেও এর পেছনে কারা ছিল, কি ছিল এর পেছনের রাজনীতি, এবং কীভাবে হয়েছিল সেই ষড়যন্ত্র–এসব খুঁজতেই এই কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
তবে সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ক্ষমতার বাইরে থাকা বড় দল বিএনপির নেতারা বলেছেন, তাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে লক্ষ্যে রেখেই প্রধানত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই কমিশন করা হচ্ছে কিনা- এমন প্রশ্ন তাদের রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “এতদিন পরে আবার এই ইস্যুটাকে আনা হচ্ছে, যেটার বিচার হয়ে গেছে এবং সাজা হয়েছে। সেটাকে আবার নিয়ে এসে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সাহেবকে দায়ী করে কথা বলা হচ্ছে এবং সেটা নির্বাহী বিভাগের প্রধানের কাছ থেকেই বক্তব্য আসছে। এটা দেশ পরিচালনায় এবং সর্বশেষ কোভিড-১৯ পরিস্থিতি সামলাতে তাদের যে ব্যর্থতা, তা থেকে মানুষের দৃষ্টি অন্য দিকে সরাতে তারা এসব কমিশনের বিষয় আনছে।”
প্রসঙ্গত, পঁচাত্তর সালের ১৫ই আগস্ট সে সময়ের রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের বেশীর ভাগ সদস্যকে হত্যা করা হলেও পরবর্তি সরকার খুনিদের রক্ষা করতে জারি করে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ। তবে ঘটনার প্রায় ৩৫ বছর পর ২০১০ সালে সেই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত সাবেক সেনা সদস্যদের মৃত্যুদন্ড হয়। আদালতের রায়েও অবশ্য হত্যাকাণ্ডের পেছনের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করা হয়। কিন্তু তাতে বিস্তারিত কিছু উল্লেখ করা হয়নি।
এমন পরিস্থিতিতে গেল কয়েকবছর ধরে ইতিহাসের জঘন্যতম এই হত্যাকান্ডের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য এবং এর পেছনের শক্তি খুঁজে বের করার দাবি করে আসছিল আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগি সংগঠনগুলো।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক অবশ্য বলেছেন, “ইতিহাসের স্বার্থেই এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারা ছিল, কি তাদের পরিচয় এসব খুঁজে বের করা দরকার। আর এমন প্রয়োজন থেকেই এখন আমরা কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
কমিশন গঠনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বলতে গিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, “কমিশন হবে এই কারণে যে, এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে কারা ছিল-সমাজে এবং রাষ্ট্রে তাদের মুখোশ যদি উন্মোচন করা না হয়, তাদের অনুসারীরা হয়তো ভবিষ্যতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিপন্ন করতে পারে এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার যে স্বপ্ন আমাদেরও আছে, সেই স্বপ্নও নষ্ট করতে পারে।”
এটা কোন উইচ হান্টিং নয় জানিয়ে আনিসুল হক বলেন, “বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার জননেত্রী শেখ হাসিনা করেছেন। এর পরের অধ্যায় হচ্ছে, নেপথ্যে কারা ছিল, এই ষড়যন্ত্রের মধ্যে কারা ছিল-তাদেরকে চিহ্নিত করা। এবং চিহ্নিত করে ইতিহাসটা ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে রেখে যাওয়া। সে জন্যই কমিশন গঠন করা।”
রাজনৈতিকভাবে কাউকে টার্গেট করে সরকার এমন পদক্ষেপ নিচ্ছে না এবং কমিশন নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করবে বলে আশ্বস্ত করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। বলেন, “যারা এই ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিলেন, তারা ভয় পেতে পারেন। যারা জড়িত ছিলেন না, তাদের ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই।”