প্রধানমন্ত্রী বললেন ভাষার সংগ্রামেই রচিত হয়েছিল স্বাধীনতার পথ

মায়ের ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে জাতির পিতা যে সংগ্রামের শুরু করেছিলেন তার মধ্য দিয়েই রচিত হয় স্বাধীনতার পথ।

|| সারাবেলা প্রতিবেদন ||

মায়ের ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে জাতির পিতা যে সংগ্রামের শুরু করেছিলেন তার মধ্য দিয়েই রচিত হয় স্বাধীনতার পথ। শনিবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে একুশে পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময়ে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে চলার প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা বাঙালি। বাংলা আমাদের দেশ। এই বাংলাদেশ বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবে, সম্মানের সাথে চলবে। কারো কাছে হাত পেতে নয়, আমরা নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আত্মমর্যাদা নিয়ে চলব।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সেই ঘোষণাটা পূর্ববঙ্গে আসার সাথে সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা তখন প্রতিবাদ জানায়। তখনকার যিনি মুখ্যমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রীও বলা হত, তার বাড়ির সামনে গিয়েও তারা সেখানে প্রতিবাদ জানিয়ে আসে। এরপর ১৯৪৮ সালে চৌঠা জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্রলীগ নামের সংগঠন গড়ে তোলেন। এবং তারই প্রস্তাবে এই ভাষা আন্দোলনের যাত্রা শুরু হয়।”

ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ- বাঙালির সংগ্রামের দীর্ঘ ইতিহাসের কথা মনে করিয়ে দিতে গিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “পাকিস্তানি শাসকরা যখন আমাদের উপর একটি বিজাতীয় ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করল, তখন ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বরে করাচিতে একটি শিক্ষা সম্মেলন হয়। সেখানেই ঘোষণা হয়েছিল ঊর্দু হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। কিন্তু ঊর্দু কোনো মাতৃভাষা না, আর পাকিস্তান নামে যে দেশটি হয়েছিল, তার জনসংখ্যার ৫৬ ভাগের উপরেই আমরা বাঙালি। আমাদের ভাষা বাংলা ভাষা। কিন্তু সেই বাংলা ভাষা বাদ দিয়ে বিজাতীয় ভাষা আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।”

১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মিছিলে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর নির্দেশে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান সালাম, রফিক, বরকত, শফিউরসহ নাম না জানা অনেকে। এরপর বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দেয় তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। ভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায়ই ১৯৭১ সালে সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের কাছ থেকে একুশে পদক গ্রহণ করছেন অভিনেত্রী সুজাতা। ছবি: পিআিইডি

১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর ইউনেস্কোর এক ঘোষণায় ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই সংগ্রামের মধ্য দিয়েই কিন্তু মূলত আমাদের স্বাধীনতা অর্জন। কারণ যারা আমাদের ভাষার উপর আঘাত করেছে, তাদের বিরুদ্ধেই তিনি প্রতিবাদ শুরু করেন।”

রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ‘গৌরবদীপ্ত অবদানের’ স্বীকৃতি হিসেবে ২১জন বিশিষ্ট নাগরিক ও তাদের প্রতিনিধিদের হাতে চলতি বছরের একুশে পদক তুলে দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক পদক তুলে দেন।

পদকপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যারা আমাদের বলতে গেলে রক্ত দিয়ে… শুধু মাতৃভাষায় কথা বলা না, আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের পথ তৈরি করে দিয়েছিল, আমরা তাদের প্রতি সম্মান জানাই। আপনারা আজকে আমাদের ভাষা শহীদ এবং ভাষা সৈনিকদের নামে পুরষ্কার পেয়েছেন। আমি আপনাদেরকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই, যারা সমাজের বিভিন্ন স্তরে বিশেষ অবদান রেখে আজকে এই পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছেন।”

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের কাছ থেকে একুশে পদক গ্রহণ করছেন অভিনেতা আসাদ। ছবি: পিআিইডি

দেশের শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞান, গবেষণা, সংস্কতি চর্চা, সমাজসেবাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য এ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি মনে করি, এটা শুধু আপনাদের সম্মাননা না, এটা জাতির জন্য সম্মাননা, দেশের মানুষের জন্য সম্মাননা।” 

আগে অল্প কয়েকজনকে এই সম্মাননা দেওয়া হলেও এখন সরকার ২১শে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে ২১ জনকে এই সম্মাননা দিচ্ছে এবং পুরষ্কারের অর্থের পরিমাণও বাড়ানো হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সঞ্চালনায় এ অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, সচিব মো. বদরুল আরেফীনসহ ঊর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সারাদিন