|| সারাবেলা প্রতিনিধি, রাজশাহী ||
পুলিশের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে সাধারণ ডায়েরি করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) নয়জন শিক্ষক। নিজেদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা হতে পারে এই আশঙ্কা থেকে গত রোববার রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন তারা। বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএসএম সিদ্দিকুর রহমান।
শিক্ষকরা বলছেন, এরআগে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ প্রশাসনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করেছিলেন তারা। আসছে ১৭ ও ১৯শে সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) এই অভিযোগের শুনানি হওয়ার কথা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে নিজেদের ওপর হামলার আশঙ্কা থেকেই রাষ্ট্রের কাছে নিরাপত্তা চেয়েছেন তারা।
উপাচার্য ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগকারী নয় শিক্ষক হলেন: ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সৈয়দ মুহাম্মদ আলী রেজা, সংগীত বিভাগের অসিত রায়, মনোবিজ্ঞান বিভাগের মজিবুল হক আজাদ, প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিভাগের জাহাঙ্গীর আলম, রসায়ন বিভাগের তারিকুল হাসান, ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের মো. মিজানুর রহমান, নাট্যকলা বিভাগের এস এম ফারুক হোসাইন এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এস এম একরাম উল্যাহ।
উপরেল্লিখিত নয় শিক্ষক চলতি বছর ৪ঠা জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ কয়েকটি সরকারি দফতরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যসহ বর্তমান প্রশাসনের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির বেশকিছু সুনির্দ্রিষ্ট অভিযোগ জানান। এরই শুনানি হওয়ার কথা আসছে ১৭ ও ১৯শে সেপ্টেম্বর।
শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, শুনানিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে এবং তাদের নানাভাবে ঝুঁকিতে ফেলতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তোড়জোর শুরু হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে তাদের ওপর হামলাও করা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
প্রসঙ্গত, নিরাপত্তা চেয়ে জিডি করা ৯জন শিক্ষকই রাবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মিজানউদ্দিন পন্থী। তারা বর্তমান প্রশাসনের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে বর্তমান উপাচার্যের অপসারণ দাবি করে আসছিলেন। ‘দুর্নীতি বিরোধী শিক্ষক সমাজ’র ব্যানারে তারা বর্তমান প্রশাসনের ‘অনিয়মের’ বিচার চেয়ে আন্দোলন করছিলেন। এতে প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষক অংশ নেন। শিক্ষকদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ১৯শে সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনে রাবি উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়াকে তলব করা হয়েছে।
বিষয়টির পূর্বাপর জানতে চাইলে প্রক্টর মো. লুৎফর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্স মতো ক্যাম্পাসে যে কোন সভা, অনুষ্ঠান করতে হলে প্রক্টর দফতরকে জানাতে হবে। অভিযোগকারী শিক্ষকরা তাদের সভার বিষয়ে আমাদের কিছু জানায়নি। তবে তারা যেহেতু থানায় অভিযোগ করেছেন, আমরা তৎপর থাকবো কেউ যেন ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করতে পারে।
এদিকে সাধারণ ডায়েরিতে শিক্ষকরা উল্লেখ করেন, গত বৃহস্পতিবার ১০ই সেপ্টেম্বর দুপুরে কয়েকজন শিক্ষক স্বাস্থ্যবিধি মেনে ডিনস কমপ্লেক্সের শিক্ষক লাউঞ্জে সৌজন্য আলোচনা করছিলেন। এই অবস্থায় তাঁরা খবর পান, মামুন নামের এক বহিরাগত ও বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলের সহকারী শিক্ষক সাদ্দাম হোসেনের নেতৃত্বে কয়েকজন বহিরাগত ডিনস কমপ্লেক্সের সামনে রাখা গাড়ি ও এগুলোর নম্বরপ্লেট গোপনে মোবাইলে ছবি তুলছে ও ভিডিও ধারণ করছে।
জিডিতে উল্লেখ করা হয়েছে, খবর পেয়ে দ্রুত সেখানে গিয়ে তারা ঘটনার সত্যতা পান। ছবি ও ভিডিও ধারণের কারণ জানতে চাইলে বহিরাগতরা সেখান থেকে চলে যান। তবে যাওয়ার সময় তারা শিক্ষকদের দিকে আক্রমণাত্মক অঙ্গভঙ্গি ও অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করেন। এই ঘটনায় তাঁরা শঙ্কিত। এমন অবস্থায় তারা আশঙ্কা করছেন, তাঁদের ওপর হামলা হতে পারে এবং রাস্তাঘাটে তাঁদের গাড়িগুলোর ক্ষতি করা হতে পারে।
জিডিতে আরও বলা হয়েছে, ইতোপূর্বে এই মামুন নানাজনের প্ররোচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের সঙ্গে অসৌজন্য আচরণ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস বন্ধ থাকা সত্বেও এই ধরণের বহিরাগতরা ক্যাম্পাসে কীভাবে চলাচল করতে পারে, তা তাঁদের কাছে রহস্যময় মনে হচ্ছে। এই অবস্থায় তাঁরা ঘটনা তদন্ত করে পুলিশ প্রশাসনের কাছে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার দাবি জানান।
এদিকে অভিযোগের বিষয়ে রাবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলের শিক্ষক সাদ্দাম হোসেনের বক্তব্য জানতে চেয়ে একাধিকবার ফোন ও ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।
এ প্রসঙ্গে অভিযোগকারী রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এসএম একরাম উল্যাহ বলেন, ইউজিসিতে বর্তমান প্রশাসনের দুর্নীতি-অনিয়মের শুনানি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য এটা হতে পারে। এছাড়া যারা অভিযোগ করেছেন, তাঁদের ভয় দেখানোর একটা অপচেষ্টাও হতে পারে। কিংবা তাঁদের ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্যই হয়তো ছবি ও ভিডিও ধারণ করা হয়েছে। পুলিশ প্রশাসন তদন্ত করলেই বিষয়টি বেরিয়ে আসবে।