পিতার জন্মতিথি আর মুক্তির পঞ্চাশ উদযাপনে দেশরাষ্ট্র

’মুজিব চিরন্তন’ প্রতিপাদ্যে ১০ দিনের এই আয়োজনে বাঙালির অধিকার আদায়ের আন্দোলনের ধারাবাহিকতা তুলে ধরার পাশাপাশি সামনে আনা হচ্ছে গত ৫০ বছরের ’স্বপ্নযাত্রার’ গল্প।

|| সারাবেলা প্রতিবেদন ||

সীমিত পরিসরে বর্ণাঢ্য আয়োজনে নিজ ইতিহাসের দুই মাহেন্দ্রক্ষণ উদযাপন শুরু করেছে বাংলাদেশ। এর একটি হচ্ছে স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর তথা সুবর্ণ জয়ন্তী। আরেকটি হচ্ছে এই স্বাধীনতার স্রষ্টা বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী।

রাজধানীর জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টায় শিশুদের কণ্ঠে জাতীয় সংগীতের পরিবেশনার মধ্য দিয়ে ১০ দিনের রাষ্ট্রীয় এই আয়োজনের শুরু হয়।

বাংলাদেশের ইতিহাসের এই দুই মাহেন্দ্রক্ষণ উদযাপনের সঙ্গী হয়েছেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ এবং ফার্স্ট লেডি ফাজনা আহমেদ। অনুষ্ঠানস্থলে তাদের স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানা, রাষ্ট্রপতির স্ত্রী রাশিদা খানম এবং জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীও।

প্রসঙ্গত বছরজুড়ে এই আয়োজন বিস্তর পরিসরে শুরু হতে গিয়েও থমকে যায় করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে। প্রায় গত এক বছর এসব আয়োজনের যতটুকু করা হয়েছে তা হয়তো বা সীমিত পরিসরে, না হয় ভার্চ্যুয়ালি।

তবে করোনা মহামারি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসায় জাতি ও রাষ্ট্রের এই দুই বিশেষ উপলক্ষ ঘিরে বুধবার বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে শুরু হল জাতীয় পর্যায়ে দশ দিনের অনুষ্ঠানমালার, যা শেষ হবে ২৬শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির দিনে।

জাতীয় প্যারেন্ড গ্রাউন্ডে ১০ দিনের এই অনুষ্ঠানমালার পাঁচ দিনের আয়োজনে যোগ দেবেন প্রতিবেশী পাঁচ দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান।

মহামারীর কারণে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে ওই পাঁচ দিনের আয়োজনে সর্বোচ্চ পাঁচশ জন আমন্ত্রিত অতিথি অংশ নিতে পারবেন। অনুষ্ঠানে আসার আগে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে যে তিনি সংক্রমিত নন।

বাকি পাঁচ দিনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের কেউ জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে থাকবেন না। শিল্পীদের পরিবেশনা সেখানে থেকে টেলিভিশন আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।

বুধবারে শুরুর দিনে জাতীয় সংগীতে পর শত শিশুর কণ্ঠে কয়েকটি গান পরিবেশিত হয়। অতিথিরা মঞ্চে আসার পর পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ করা হয়। এরপর ‘মুজিব চিরন্তন’- এই থিমের ওপর তৈরি একটি অ্যানিমেশন দেখানো হয়। সেই প্রদর্শনী শেষে হলে পরিবেশিত হয় এ আয়োজনের ‘থিম সং’ এর মিউজিক ভিডিও। দেখানো হয় বিমানবাহিনীর ফ্লাই পাস্টের রেকর্ড করা ভিডিও।

এরপরই স্বাগত বক্তব্য দেন জাতীয় উদযাপন কমিটির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইউশিহিদে সুগার ধারণ করা ভিডিও বার্তাও পরিবেশিত হয় অনুষ্ঠানে।

চীনের রাষ্ট্রদূত তার দেশের উপহার হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বঙ্গবন্ধুর যে আবক্ষ ভাস্কর্য হস্তান্তর করেছেন, তারও একটি ভিডিও উপস্থাপন করা হয় জাতির সামনে।

আয়োজনের সম্মানিত অতিথি মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহর বক্তব্যের পর প্রধান অতিথির ভাষণ দেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এরপর অতিথিদের ‘মুজিব চিরন্তন’ শ্রদ্ধা-স্মারক উপহার দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শেষ হয় আলোচনা পর্ব। এরপর বিরতি দিয়ে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।

বর্ণিল আতশবাজি ও লেজার শোর মধ্য দিয়ে রাত ৮টায় শেষ হয় প্রথম দিনের আয়োজন।   

এরআগে এসব আয়োজন সম্পর্কে জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মেলবন্ধনে ’অনন্য সময়’ পার করছে বাংলাদেশে। বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্নের যাত্রা শুরু করেছিলেন, সোনার বাংলা গঠনের জন্য সেই স্বপ্নযাত্রার আরেকটি পর্যায়ের সঙ্গে মেলবন্ধন। এই মেলবন্ধন আমাদের শ্রদ্ধার, আমাদের ভালোবাসার মেলবন্ধন, আমাদের অগ্রগতির মেলবন্ধন। এভাবে ১০ দিনের যে প্রোগ্রামটা সাজানো হয়েছে, প্রতিদিনই বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম, তিনি বিভিন্ন সময়ে যে অবদান রেখেছেন, সেগুলো যতটুকু সম্ভব তুলে ধরা। কেননা এই মহাকাব্যিক জীবনকেতো আমরা ১০ দিনের মধ্যে তুলে ধরতে পারব না।”

বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার এই থিমে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ড এলাকায় গ্রামবাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তুলে ধরার পাশাপাশি উন্নয়নের নানা দিকও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন সময়ের ভাষণের উদ্ধৃতি ছাড়াও জাতির পিতার তর্জনীর ছবি কিংবা শিল্পকর্মের প্রাধান্য পেয়েছে ব্যানার, ফেস্টুন আর বিলবোর্ডে।

বিশেষ এই দুই উদযাপনকে ঘিরে প্যারেড গ্রাউন্ড ও সংসদ ভবন এলাকা সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে টানানো হয়েছে প্রচুর ব্যানার-ফেস্টুন। বিভিন্ন ভবনে হয়েছে আলোকসজ্জা।

’মুজিব চিরন্তন’ প্রতিপাদ্যে ১০ দিনের এই আয়োজনে বাঙালির অধিকার আদায়ের আন্দোলনের ধারাবাহিকতা তুলে ধরার পাশাপাশি সামনে আনা হচ্ছে গত ৫০ বছরের ’স্বপ্নযাত্রার’ গল্প।

সংবাদ সারাদিন