স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন পাসপোর্টের মান ঠিক রাখতেই এমনটা
|| সারাবেলা প্রতিবেদন ||
কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকা আর ফিলিস্তিনীদের প্রতি সহিংস আচরণের অভিযোগে স্বাধীনতার পর থেকেই জায়নবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে কোন ধরণের সম্পর্ক করেনি বাংলাদেশ। যে কারণে গেলো পঞ্চাশ বছর ধরে বাংলাদেশের পাসপোর্টের প্রথম পৃষ্ঠায় ‘দিস পাসপোর্ট ইজ ভ্যালিড ফর অল কান্ট্রিজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড এক্সসেপ্ট ইসরাইল’ (বিশ্বের যেকোনো দেশের জন্য এই পাসপোর্ট কার্যকর থাকবে, শুধু ইসরাইল ছাড়া)। অর্থাৎ বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী কোনো ব্যক্তি শুধু ইসরাইল ব্যতিরেকে বিশ্বের যেকোনো দেশ ভ্রমণ করতে পারবেন। কিন্তু সম্প্রতি ইস্যূ করা পাসপোর্ট থেকে ‘এক্সসেপ্ট ইসরায়েল’ শব্দ দুটি উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। নতুন এসব পাসপোর্টে লেখা হচ্ছে ‘দিস পাসপোর্ট ইজ ভ্যালিড ফর অল কান্ট্রিজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড’।
নতুন এমন পাসপোর্ট যারা পেয়েছেন তাদের অনেকেই জানান, গেলো ঈদের পর ইস্যু করা নতুন ই-পাসপোর্টে লেখা রয়েছে ‘দিস পাসপোর্ট ইজ ভ্যালিড ফর অল কান্ট্রিজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড’। এখানে ‘এক্সসেপ্ট ইসরাইল’ শব্দ দুটি নেই। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
নতুন পাসপোর্ট পাওয়া একজন নাগরিক জানান, সম্প্রতি তিনি ও তার পরিবারের তিনজনের জন্য ই-পাসপোর্টের আবেদন করা হয়েছিল। এর মধ্যে ঈদের আগে তিনি নিজের পাসপোর্ট পান। আর ঈদের পরে তার মা ও ছোট ভাই পাসপোর্ট পেয়েছেন। তার পাসপোর্টে আগের মতোই ‘দিস পাসপোর্ট ইজ ভ্যালিড ফর অল কান্ট্রিজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড এক্সসেপ্ট ইসরাইল’ লেখা থাকলেও ঈদের পরে পাওয়া পাসপোর্ট দুটিতে ‘এক্সসেপ্ট ইসরাইল’ শব্দ দুটি নেই। তিনি এ বিষয়ে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গেও কথা বলেছেন। ঐ কর্মকর্তা তাকে জানিয়েছেন, পাসপোর্টে ‘এক্সসেপ্ট ইসরাইল’ না থাকলেও কোনো সমস্যা হবে না।
এদিকে পাসপোর্ট থেকে ইসরাইল ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি তুলে নেয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমের কাছে স্বীকার করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক আগে যেরকম ছিল এখনও তা-ই থাকবে। তবে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে আমরা পাসপোর্টে ’এক্সসেপ্ট ইসরাইল’ শব্দ দুটি তুলে দিয়েছে।’
প্রসঙ্গত, মুসলিম বিশ্বের দেশ হওয়ায় বাংলাদেশ অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) সদস্য রাষ্ট্র। আর মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইসরাইল ও ফিলিস্তিন ইস্যুটি এখনও অমীমাংসিত রয়েছে। তাই স্বাধীনতার পর থেকেই ফিলিস্তিনের পক্ষ নেয় বাংলাদেশ। এজন্য ইসরাইলের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। এতে ইসরাইলের সঙ্গে কোনো প্রকার বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কও নেই। দেশটির সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যও করতে পারেন না বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা।
এদিকে ফিলিস্তিনে সাধারণ মানুষের ওপর সাম্প্রতিক ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি ফিলিস্তিনের পক্ষে বাংলাদেশ তাদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে। সাম্প্রতিক এই ইসরায়েলি আগ্রাসনে কমপক্ষে অর্ধশত শিশুসহ তিনশ’র মতো ফিলিস্তিনীকে খুন করেছে ইসরায়েল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশ যেহেতু ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়নি, তাই পাসপোর্টে এ কথাটি লেখা হয়। তবে পাসপোর্ট ইস্যু করা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিষয়। কাজেই এক্সসেপ্ট ইসরাইল শব্দ দুটি কেন তুলে দেয়া হলো এ বিষয়ে তারাই ভালো বলতে পারবে।’
প্রসঙ্গত, ইসরাইলের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকায় ঢাকায় তাদের দূতাবাসও নেই। কিন্তু ফিলিস্তিনের পক্ষে থাকায় ঢাকায় ফিলিস্তিনের দূতাবাস স্থাপনের অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ। বর্তমানে ঢাকার ফিলিস্তিন দূতাবাসের হেড অব দ্য মিশন হচ্ছেন ইউসুফ সালেহ রমাদান।
ফিলিস্তিনের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের সূচনা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ইসরাইলের হামলায় আহত ফিলিস্তিনিদের সহায়তায় বাংলাদেশ চিকিৎসকদের একটি দল পাঠায় ১৯৭৩ সালে। সেই থেকে ফিলিস্তিনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের যাত্রা শুরু হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৪ সালে ওআইসির অধিবেশনের এক ফাঁকে বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাংলাদেশের পক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ফিলিস্তিনের পক্ষে ইয়াসির আরাফাত নেতৃত্ব দেন। ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দানকারী বিশ্বের ১৩৭টি রাষ্ট্রের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
