|| সারাবেলা প্রতিবেদন ||
মানুষ পাচার আর অর্থ পাচারের অভিযোগে কুয়েতের আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত লক্ষ্মীপুরের সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের রায় পর্যালোচনা শুরু করেছে জাতীয় সংসদ কর্তৃপক্ষ। কুয়েতের আদালতের রায়ের কপি বৃহস্পতিবার সংসদে পৌঁছেছে জানিয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। এরআগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন রাজধানীর একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, সাজাপ্রাপ্ত সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের মামলার রায়ের কপি সরকারের কাছে পৌঁছেছে।
বৃহস্পতিবার রায়ের কপি পাওয়ার কথা জানিয়ে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, “রায়ের কপি আমাদের কাছে পৌঁছেছে। এটা পর্যালোচনা করে সংবিধান ও কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” কবে নাগাদ সিদ্ধান্ত জানা যাবে জানতে চাইলে স্পিকার বলেন, “সিদ্ধান্ত নিলে আপনারা জানতেই পারবেন।”
প্রসঙ্গত বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো আইনপ্রণেতা নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য হবেন না এবং মুক্তি পাওয়ার পর পাঁচ বছর পর্যন্ত তিনি আর সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্য বিবেচিত হন না। ওই অনুচ্ছেদেই বলা আছে, কোন বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব নিলে কিংবা কোন বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করলে আর এমপি হিসেবে থাকতে পারবেন না।
অর্থ ও মানুষ পাচার এবং ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে গত বছর জুনে কুয়েতে গ্রেফতার হন লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য পাপুল। গত ২৮শে জানুয়ারি তাকে চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির একটি আদালত। বাংলাদেশের কোনো আইনপ্রণেতার এভাবে বিদেশে দণ্ডিত হওয়ার এটাই প্রথম ঘটনা।
সংবিধান ও আইন সংশ্লিষ্টরা এ প্রসঙ্গে বলছেন, “সংবিধানে যা বলা হয়েছে, সে ব্যাপারে সংসদকে ব্যবস্থা নিতে হবে। সংসদের কাছে রেকর্ড পৌঁছলে ৬৬ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদ আসন শূন্য ঘোষণা করবে।”
রাষ্ট্রিক বিধান বলছে, কোনো আইনপ্রণেতা গ্রেফতার, আটক বা আদালতের রায়ে সাজা পেলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তা স্পিকারকে জানাতে হয়। পাপুল গ্রেফতার এবং সাজা পাওয়ার পর তা নিয়ম অনুযায়ী স্পিকারকে না জানানোয় সংসদ এতদিন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
পাপুলের বিষয়ে কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে সংসদ সচিব জাফর আহমেদ খান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “মামলার রায়ের কপি সংসদ পেয়েছে। এ বিষয়ে কাজও শুরু হয়েছে। স্পিকার মহোদয় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।”
সাধারণ শ্রমিক হিসাবে কুয়েত গিয়ে বিশাল সাম্রাজ্য পড়ে তুলেছিলেন পাপুল। তার মালিকানাধীন মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানি পরিচ্ছন্নতাকর্মী নেওয়ার কাজ করলেও কুয়েতে অন্যান্য ব্যবসার কাজও বাগিয়েছিলেন তিনি। কুয়েতে তার বসবাসের অনুমতি রয়েছে। ২০১৮ সালে লক্ষ্মীপুর-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন পাপুল। শুধু তাই নয়, নিজের স্ত্রী সেলিনা ইসলামকেও সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য করে আনেন তিনি।
পাচারের শিকার পাঁচ বাংলাদেশির অভিযোগের ভিত্তিতে গত বছর ৬ই জুন রাতে কুয়েতের মুশরিফ এলাকা থেকে পাপুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে মানবপাচার, অর্থপাচার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগ আনে কুয়েতি প্রসিকিউশন। সেই অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়ে দণ্ডিত হয়েছেন তিনি।