পাটকল আধুনিক করে পাটের বৈশ্বিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে চায় সরকার

|| সারাবেলা প্রতিবেদন, ঢাকা ||

দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোকে সময়োপযোগী ও আধুনিক করবার মধ্য দিয়ে পাটের বৈশ্বিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে চায় সরকার। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তৃতায় একথা জানান সরকার প্রধান শেখ হাসিনা। চাকরিহারানো শ্রমিকদের আশ্বস্ত করে বলেন, নতুন আঙ্গিকে পাটকলগুলো চালু হলে অভিজ্ঞকর্মীদেরই সেখানে চাকরি হবে, এজন্য তাদেরকে আধুনিক প্রযুক্তির ওপর প্রশিক্ষণও দেয়া হবে।

স্বাধীনতার আগে লাভজনক থাকলেও নতুন দেশের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় দ্রুতই এই খাতে তৈরি হয় নজিরবিহীন অব্যবস্থাপনা আর দূর্নীতির সংস্কৃতি। সেইসঙ্গে যুক্ত হয় বিশ্বব্যাংকের মত ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের শর্তসংস্কৃতির দেশবিরুদ্ধ ব্যবস্থাপত্র। এসব মানতে ও মানাতে গিয়ে গেল কয়েক দশকে রাষ্ট্রীয় পাটকলগুলোর কপালে জোটে ‌‘লোকসান’ এর অপবাদ। অব্যাহত এই ‘লোকসান’ সামাল দিতে গিয়ে ফি বছর রাষ্ট্রের কোষাগার থেকে দিয়ে আসা হয় হাজার কোটি টাকার ‘ভর্তুকি’।

জাতীয় সংসদে বৃহস্পতিবার বাজেট অধিবেশনের সমাপনী ভাষনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডি

‘৭৫ পরবর্তি বেসরকারিকরণ প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যেই ব্যক্তিমালিকদের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে অনেক পাটকল। সবশেষ যে ৩২টি পাট ও পাটসংশ্লিষ্ট কারখানা অবশিষ্ট ছিল সেগুলোর মধ্যে ২৬টি মিল বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এসব পাটকলের প্রায় ২৫ হাজার স্থায়ী শ্রমিকের শতভাগ পাওনা মিটিয়ে দিয়ে তাদের চাকরি অবসায়ন করা হবে বলেও জানানো হয়েছে সরকারের তরফ থেকে। ইতোমধ্যে শ্রমিকদের জুন মাসের বেতনভাতা পরিশোধ করতে ৫৮ কোটি টাকা বরাদ্দও দেওয়া হয়েছে।

তবে এসব পাটকল বন্ধ করা হবে না জানিয়ে পাট মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এগুলোকে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব বা পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) মাধ্যমে আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন করে আবারো চালুর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

|| পুরনো ছবি ||

সরকারের এই পরিকল্পনা সম্পর্কে বৃহস্পতিবার সংসদের অধিবেশনে শেখ হাসিনা বলেন, “পরিবেশ রক্ষার জন্য যেহেতু সিনথেটিক থেকে সকলেই এখন মুক্তি চায় সেখানে পাট হচ্ছে একটা বিকল্প। সেখানে আমাদের একটা বিশাল সম্ভাবনা বিশ্বব্যপী রয়ে গেছে। কিন্তু আমাদের ইন্ডাস্ট্রিগুলোকে সময়োপযোগী করতে হবে, আধুনিক করতে হবে, নতুন করতে হবে।”

শেখ হাসিনা এও বলেন, “আমরা এটাকে নতুনভাবে করব, এখানে যারা আগ্রহী তাদেরকে আমরা আবার ট্রেনিং দেব। ট্রেনিং দিয়ে আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন করে তাদেরকে তৈরি করব। পাটকল চালু হলে অভিজ্ঞতা যাদের আছে, তারাই নতুন করে চাকরি পাবে।”

আপাতত বন্ধ করে দেওয়া পাটকলগুলোর শ্রমিকদের পাওনা-দেনা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলে, “আমরা আমাদের পাটের যারা শ্রমিক, তাদের যে মজুরির টাকা পাওনা-দেনা যা ছিল, সব মিটিয়ে… আমরা একবারে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা তাদের জন্য…সেখানে সব টাকা তাদের হাতে দেব না। কারণ নগদ টাকা দিয়ে দিলে তখন দেখা যাবে মেয়ের জামাই, ভাই, ভাতিজা, আত্মীয়-স্বজন সব এসে হুমড়ি খেয়ে পড়বে এবং ভাগ চাইবে।”

|| পুরনো ছবি ||

কোন প্রক্রিয়ায় শ্রমিকদের পাওনা মেটানো হবে সেটা জানাতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী জানান, “আমি বলেছি অর্ধেকটা সঞ্চয়পত্র করে দেব। পারিবারিক সঞ্চয়পত্র, যেখানে তারা ১১ শতাংশের মতো পাবে। সেখানে ভালো টাকা প্রতি তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক পাবে, যা প্রতিদিন সে কাজ করে মাসে মজুরি পেত, তার চেয়ে বেশি টাকাই পাবে। সেটা আমরা হিসেব করছি, যা পাওনা ছিল সেটা আমরা সব শোধ করে দেব।”

বাংলাদেশ পাটের জন্মরহস্য উন্মোচন, গবেষণার মাধ্যমে বিভিন্ন পাটজাত পণ্য আবিষ্কারের কথা উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, “সেগুলো আমাদের উৎপাদন করতে হবে। সেগুলো আমাদের দেশের কাজে লাগবে, বিদেশে রপ্তানি হবে।”

বিশ্বে বাংলাদেশের পাট ও পাটপণ্যের বাজার ধরে রাখার ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, “এই ইন্ডাস্ট্রিগুলো হচ্ছে সব থেকে পুরনো। সেই ষাটের দশকে, পঞ্চশের দশকে করা। এই ইন্ডাস্ট্রি দিয়ে আসলে লাভ করা সম্ভবও না। সেজন্য আমরা চাচ্ছি এটাকে আবার নতুনভাবে তৈরি করতে। কারণ পাটের একটা উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রয়েছে। পাট আমাদের অর্থকরী ফসল। পাট একদিকে যেমন কৃষিপণ্য অপরদিকে ইন্ডাস্ট্রি, দুটোই।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন