|| সারাবেলা প্রতিবেদন, ঢাকা ||
করোনা নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই নিজেদের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সেই ব্যাংকক চলে গেলেন সিকদার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রন হক সিকদার ও তার ভাই দিপু হক সিকদার।
নাম জানাতে অসম্মত একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, শীর্ষ স্থানীয় দুই ব্যাংক কর্মকর্তাকে মারধর ও গুলি করে হত্যার হুমকি দেওয়ায় অভিযুক্ত এই দুই ভাই ‘মুমূর্ষু রোগী’ হিসেবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়েই তারা গেল ২৫শে মে দেশ ছাড়েন।
অভিবাসন কর্মকর্তারা তাদের পরিচয় প্রকাশ রাজী না হলেও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, গেল ২৫শে মে দুইজন যাত্রী এয়ার আ্যাম্বুলেন্সে করে থাইল্যান্ডের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়েছেন।
এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি সিকদার গ্রুপের সিস্টার কনসার্ন আর এন্ড আর অ্যাভিয়েশন লিমিটেডের মালিকানাধীন বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বেবিচকের বিমানবন্দর পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ এইচ এম তৌহিদ-উল আহসান। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, “দুইজন যাত্রী নিয়ে সরকার অনুমোদিত এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি ২৫শে মে সকাল ৯টা ১৩ মিনিটে ব্যাংককের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়ে যায়।”
তবে আর এন্ড আর অ্যাভিয়েশন লিমিটেডের হটলাইল নম্বরে আগে থেকে রেকর্ড করা “পরিচালন কার্যক্রম এখন স্থগিত রয়েছে এবং আগামী ৩১শে মে থেকে কার্যক্রম ফের শুরু হবে” এখনো প্রচার করা হচ্ছে।
যাত্রীদের পরিচয় জানতে চাইলে বেবিচক পরিচালক তৌহিদ-উল আহসান অভিবাসন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। তবে ফোনে যোগাযোগ করা হলে এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজী হননি বিমান বন্দরের ইমিগ্রেশন ডেস্ক। অনেক চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি সিকদার গ্রুপের সংশ্লিষ্ট কারো সঙ্গে।
গেল ১৯শে মে মঙ্গলবার এই দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা করে এক্সিম ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ এই দুইভাই ব্যাংকটির দুই শীর্ষ কর্মকর্তাকে মারধর এমনকি গুলি করে হত্যার চেষ্টা করে। এরপরই আলোচনায় আসে বিষয়টি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স থাইল্যান্ডে অবতরণের অনুমতি দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে গত ২৩ মে সেখানকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে একটি চিঠি দেয় থাইল্যান্ডে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাস। ওই দিনই অনুমোদন মিললে ঢাকায় অবস্থিত থাই দূতাবাসে একটি চিঠি দেওয়া হয়। যেখানে দুই জনকে মেডিকেল ভিসা দেওয়ার অনুরোধ করা হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২৪শে মে ভিসা ইস্যু করা হয় এবং পরের দিন ২৫শে মে তারা ব্যাংককের উদ্দেশে রওনা দেয়।
থাইল্যান্ডে বাংলাদেশি দূতাবাসে দুই বার ফোন করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এমনকি দূতাবাসে পাঠানো কোনো ই-মেইলের জবাবও দেয়নি সেখানকার কর্মকর্তারা।
গত ২৬ মার্চ থেকে বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ।
এক্সিম ব্যাংক কর্তৃপক্ষের দায়ের করা মামলা প্রসঙ্গে সিকদার গ্রুপের মালিকানাধীন ন্যাশনাল ব্যাংকের পক্ষ থেকে আব্দুল বাছেত মজুমদার স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়, সিকদার গ্রুপের এমডি রন হক সিকদারকে সামাজিকভাবে হেয় করার উদ্দেশ্যে এই মামলা করা হয়েছে। যোগাযোগ করা হলে আব্দুল বাছেত মজুমদার বলেন, ‘জয়নুল হক সিকদারের নির্দেশনা অনুযায়ী আমি এই ব্যাখ্যা (বিবৃতি) দিয়েছি।’
রন হক সিকদারের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি চেয়ারম্যান জয়নুল হক সিকদারের সঙ্গে কথা বলেছি।’
ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান ডিভিশনের উপকমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘আমরা মামলাটির তদন্ত করছি এবং ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
সংবাদসূত্র: দ্য ডেইলি স্টার