|| সারাবেলা প্রতিবেদন, ঢাকা ||
করোনাসংক্রমণ ঝুঁকিতে বাসে মোট আসনসংখ্যার অর্ধেক যাত্রী তুলতে হবে বলে ক্ষতিতে পড়বে মালিক। আর সেই ক্ষতি পুষিয়ে দিতে সব ধরণের বাসভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়ালোর সরকার। বাড়তি এই ভাড়া আন্ত:জেলা, দূরপাল্লা এবং নগর পরিবহনের বাস ও মিনিবাস নির্বিশেষে সবক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে।
রোববার সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে ভিডিও কনফারেন্স যুক্ত হয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, “এ মুহূর্তে জনগণের আর্থিক সক্ষমতা বিবেচনায় নিয়েই সরকার প্রস্তাবিত ভাড়ার হার কমিয়ে যৌক্তিক পর্যায়ে সমন্বয় করছে।” একইসঙ্গে যানবাহনে যাত্রী, গাড়িচালক, সহকারী, কাউন্টার কর্মীসহ সবাইকে স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা মেনে চলতে এবং মাস্ক পরার আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের রোববার জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, নতুন এই ভাড়ার হার কার্যকর হবে সোমবার থেকেই। আর বাসগুলোও রাস্তায় নামবে কাল সোমবার থেকেই। সরকারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাসের ভাড়া ৮০ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করা হলেও ভোক্তা অধিকার ও নাগরিক সংগঠনগুলোর আপত্তিতে তা কমিয়ে ৬০ শতাংশ করা হয়েছে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির দাবি
করোনার আর্থিক অভিঘাতে বিপর্যস্ত জনমানুষ বাড়তি এই ভাড়া বইতে পারবে না জানিয়ে ভাড়া না বাড়ানোর দাবি করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেছেন, এই ভাড়া জনমানুষ দিতে পারবে না। তাই তাদের কথা চিন্তা করে রাষ্ট্রের উচিত জ্বালানি তেলের দাম কমানো এবং রাষ্ট্রিয় ভর্তুকি দিয়ে গণপরিবহনের ভাড়া জনমানুষের সাধ্যের মধ্যে রাখা।
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাস সংক্রমণ বিস্তৃতি ঠেকাতে টানা ৬৬ দিনের ঘরবন্দিত্ব শেষে রোববার থেকে সারাদেশে বাস, ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল শুরুর সিদ্ধান্ত দেন সরকার। তবে ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত বাস নামাতে অস্বীকৃতি জানায় পরিবহন মালিক সমিতি তথা বাসমালিকরা। শেষ পর্যন্ত ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়িয়ে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ায় সোমবার থেকে বাস চালু করতে যাচ্ছে মালিকরা।
এদিকে ভাড়া পুনর্নির্ধারণের জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, “কোভিড-১৯ এর বিস্তার রোধে শর্তসাপেক্ষে সীমিত পরিসরে নির্দিষ্ট সংখ্যক যাত্রী নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার চলাচলকারী (ঢাকা মহানগর ও এর পাশ্ববর্তী এলাকা এবং চট্টগ্রাম মহানগর) বাস ও মিনিবাসের ভাড়া পুনঃনির্ধারণ করা হল।”
প্রজ্ঞাপনে এও বলা হয়, বিদ্যমান হারে প্রচলিত ভাড়ার চার্টে যে ভাড়া আছে, তার সঙ্গে এবারের বৃদ্ধির হার যোগ করে নতুন ভাড়া নির্ধারিত হবে। তবে অনুমোদিত ভাড়ার হার করোনাভাইরাসের এই সংকটের সময়ই প্রযোজ্য হবে। এ সংকট কেটে গেলে আগের ভাড়ার হার প্রযোজ্য হবে।
প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া হচ্ছে কমবেশী তিন টাকা
দেশে গণপরিবহনের ভাড়া সবশেষ পুনর্নির্ধারিত হয় ২০১৬ সালে। সে বছরের মে মাসে আন্ত:জেলা ও দূরপাল্লার ডিজেল চালিত বাসের সর্বোচ্চ ভাড়া ছিল প্রতি কিলোমিটার এক টাকা ৪২ পয়সা। এখন এর সঙ্গে বাড়তি ৬০ শতাংশ যোগ করে জনমানুষকে ভাড়া গুণতে হবে কিলোমিটার প্রতি দুই টাকা ২৭ পয়সা।
অন্যদিকে ২০১৬ সালের অক্টোবরে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে চলাচলকারী বড় বাসের সর্বোচ্চ ভাড়া নির্ধারন করে দেওয়া হয় কিলোমিটার প্রতি এক টাকা ৬০ পয়সা। সেই হিসাবের সঙ্গে নতুন ৬০ শতাংশ যোগ করলে এই দুই মহানগরীতে চলাচলকারী বড় বাসের নতুন ভাড়া দাঁড়ালো দুই টাকা ৫৬ পয়সা। আর সবশেষ নির্ধারিত এক টাকা ৭০ পয়সার সঙ্গে বর্তমানের ৬০ শতাংশ যোগ করায় মিনি বাসের ভাড়া দাঁড়াচ্ছে দুই টাকা ৭২ পয়সা।
এছাড়া ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কোঅর্ডিনেশন অথরিটির (ডিটিসিএ) আওতাধীন জেলা তথা নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ ও ঢাকা জেলা অভ্যন্তরে চলাচলকারী বাস ও মিনিবাসের ভাড়া আগে ছিল প্রতি কিলোমিটারে এক টাকা ৬০ পয়সা। এখন তা ৬০ শতাংশ বেড়ে হলো ২ টাকা ৫৬ পয়সা।
যাত্রী ও মালিকদের যেসব স্বাস্থ্যবিধি মানতে বলেছে সরকার
একজন যাত্রীকে বাস/মিনিবাসের পাশাপাশি দুইটি আসনের একটি আসনে বসিয়ে অন্য আসনটি অবশ্যই ফাঁকা রাখতে হবে।
স্বাস্থ্যবিধি অনুসারে শারীরিক ও সামাজিক দূরুত্ব বজার রাখতে হবে।
কোনোভাবেই সংশ্লিষ্ট মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেটে উল্লেখিত মোট আসন সংখ্যার অর্ধেকের বেশি যাত্রী বহন করা যাবে না এবং দাড়িয়ে কোনো যাত্রী বহন করা যাবে না।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করে বাস ও মিনিবাস চালাতে হবে।