|| সারাবেলা প্রতিবেদন ||
ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। দেশজুড়ে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতা এবং এর প্রতিবাদে মানুষের সংক্ষোভ-বিক্ষোভের সাতদিনের মাথায় মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে সোমবার ১২ই অক্টোবর এ সংক্রান্ত সংশোধিত আইনটি চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। মঙ্গলবার ১৩ই অক্টোবর রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে এটি কার্যকর হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠকে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন’ সংশোধন করে অধ্যাদেশ আকারে জারির জন্য এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সভা শেষে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “সংসদ না চালু থাকায় এটি রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ আকারে জারি করতে পারবেন।”
![](https://i0.wp.com/www.sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/10/pm-samakal-5f8422b89c8d8.jpg?w=1200&ssl=1)
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বিদ্যমান নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এ সংশোধনী আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। ৮ নম্বর আইনের ৯(১) উপধারায় যেখানে ধর্ষণের সাজা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ছিল, সেখানে উপধারা (৪)-এর দফা (ক)-এর ‘যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে’র পরিবর্তে ‘মৃত্যুদণ্ড’ শব্দ সংযোজন করা হচ্ছে। ‘দায়ী’ শব্দের পরিবর্তে ‘দায়িত্বপ্রাপ্ত’ শব্দ সংযুক্ত হচ্ছে। এ ছাড়া ৮ নম্বর আইনের ধারা ১৯-এর উপধারা (১) ধারা ১১-এর দফা (গ)-তেও সংশোধন আসছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক অবশ্য বলেছেন, আগামীকাল (মঙ্গলবার) এটি অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হবে। অর্থাৎ কাল (মঙ্গলবার) থেকে এটি আইনে পরিণত হবে। এর আগে এটির আইনি যাচাই (ভেটিং) হবে। যেহেতু সংসদ অধিবেশন আপাতত চলমান নেই, তাই সরকার সংশোধিত আইনটি একটি অধ্যাদেশ হিসেবে জারি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেও জানান আইনমন্ত্রী।
বাংলাদেশের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন অনুযায়ী, ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। আর ধর্ষণের শিকার নারী বা শিশুর মৃত্যু হলে বা দলবেঁধে ধর্ষণের ঘটনায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। পাশাপাশি দুই ক্ষেত্রেই অর্থ দণ্ডের বিধান আছে।
এ আইনের মামলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সাত দিন থেকে এক মাস এবং মামলা নিষ্পত্তির জন্য একশত আশি দিন (ছয় মাস) সময় বেঁধে দেওয়া থাকলেও বাস্তবে ওই সময়ের মধ্যে রায় দেওয়া সম্ভব হয় না। তাছাড়া ধর্ষণ এবং নারী ও শিশু নির্যাতনের এক একটি ঘটনা কিছু দিন পর পর সারা দেশকে নাড়া দিয়ে গেলেও এসব ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও শাস্তির নজির কম।
![](https://i0.wp.com/www.sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/10/110447392_gettyimages-1192715177-700x394.jpg?resize=700%2C394&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/www.sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/10/110447392_gettyimages-1192715177-700x394.jpg?resize=700%2C394&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/www.sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/10/110447392_gettyimages-1192715177-700x394.jpg?resize=700%2C394&ssl=1)
ধর্ষণের বেশিরভাগ মামলা বিচারের দীর্ঘসূত্রতায় ধামা চাপা পড়ে যায়। তাছাড়া ঠিকমত ডাক্তারি পরীক্ষা না হওয়া, সামাজিক জড়তা, প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপসহ নানা কারণে বিচার পাওয়া কঠিন হয়ে যায়।
সম্প্রতি নোয়াখালীতে এক নারীকে নির্যাতনের ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর থেকে রাজধানীসহ দেশজুড়ে ধর্ষণবিরোধী সংক্ষোভ-বিক্ষোভের তীব্রতা বাড়তে থাকে। গেল সাতদিন ধরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে মানববন্ধন, বিক্ষোভসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেয় সাধারণ মানুষ।
এসব কর্মসূচি থেকে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি ‘মৃত্যুদণ্ডের’ দাবি ওঠে। এমন পরিস্থিতিতে সরকার আইন পরিবর্তনের এই পদক্ষেপ নিল। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ধর্ষণের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করার দাবি এসেছে, তাই সরকার তা বিবেচনায় নিয়েছে।
আটমাসে ধর্ষিতা ৮৮৯ আর মৃত্যু ৪১
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য বলছে, গত জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে দেশে ৮৮৯ জন নারী ধর্ষিতা হয়েছেন। তাদের মধ্যে ধর্ষণের পর মারা গেছে ৪১ জন। আর উল্লেখিত এই সময়ে ধর্ষণচেষ্টা ও যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ১৯২ জন নারী এবং ৯ জন নারী আত্মহত্যা করেছেন।
![](https://i0.wp.com/www.sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/10/000_8RH9PY.jpg?w=1200&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/www.sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/10/000_8RH9PY.jpg?w=1200&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/www.sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/10/000_8RH9PY.jpg?w=1200&ssl=1)
অধিকারকর্মীদের ধারণা, এই সংখ্যা আরো অনেক বেশী। কেননা অনেকেই শিকার হলেও সামাজিক ও অবস্থানগত কারণে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন না বা করতে পারেন না।
সরকারি তথ্য বলছে, গত ১৬ বছরে ধর্ষণের ঘটনায় ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টার থেকে মামলা হয়েছে ৪ হাজার ৫৪১টি। এর মধ্যে আসামির শাস্তি হয়েছে মাত্র ৬০টি ঘটনায়।
এদিকে শাস্তি বাড়ালেই এ ধরনের অপরাধ কমবে কি না, সেই প্রশ্নও আছে সমাজ বিশ্লেষকদের মধ্যে। তাদের ভাষ্য, সাক্ষ্য আইনের জটিলতা দূর করে বিচার পাওয়ার পথ সহজ করতে হবে। সেই সঙ্গে সামাজিকভাবে বিষয়টি মোকাবেলা করা জরুরি।