জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় অর্থের যোগান নিশ্চিত করার তাগিদ প্রধানমন্ত্রীর

জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান নিশ্চিত করতে উন্নত বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের সরকার প্রধান শেখ হাসিনা।

|| সারাবেলা প্রতিবেদন ||

জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান নিশ্চিত করতে উন্নত বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের সরকার প্রধান শেখ হাসিনা। গেলো পাঁচ বছরেও প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য অর্জনের কাছাকাছিও পৌঁছতে না পারার কথা জানিয়ে শনিবার এক ভার্চ্যুয়াল সামিটে অংশ নিয়ে এই আহ্বান জানান তিনি।

প্যারিস জলবায়ু চুক্তির পাঁচ বছর পূর্তি উপলক্ষে অনুষ্ঠিত সামিটে দেয়া এক ভিডিও বার্তায় শেখ হাসিনা বলেন, “আজ আমরা ঐতিহাসিক প্যারিস চুক্তির পঞ্চম বার্ষিকী উদযাপন করছি। দুর্ভাগ্যক্রমে আমরা এই চুক্তির অধীনে আমাদের নির্ধারিত লক্ষ্যগুলোর কাছাকাছিও পৌঁছাতে পারিনি। বাস্তবতা হল, আমরা বসে থাকলেই জলবায়ু পরিবর্তন বিরতি দেবে না বা তার বিরূপ প্রভাব থেকে আমাদের রেহাই দেবে না।”

বৈশ্বিক উষ্ণতা যেভাবে বাড়ছে তাতে বিপর্যয় এড়ানোর জন্য আর বেশি সময় হাতে নেই বলে সতর্ক করে দিয়ে বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমণের কারণে পৃথিবীর উষ্ণতা বাড়তে থাকায় সাগর পৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে; ঝড়, বন্যা এবং খরার মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ পাচ্ছে নতুন মাত্রা। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এভাবে বাড়তে থাকলে এই শতকের মাঝামাঝি সময়েই পৃথিবীর নিচু এলাকাগুলোর শত কোটি মানুষকে বাস্তুহারা হতে হবে।

ভয়ঙ্কর সেই পরিণতি থেকে পৃথিবীকে বাঁচাতে ২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে চুক্তিবদ্ধ হয় বিশ্ব নেতৃবৃন্দ।

বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হার প্রাক শিল্পায়ন যুগের চেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি যেন না হতে পারে, সেজন্য নিঃসরণের মাত্রা সম্মিলিতভাবে কমিয়ে আনার অঙ্গীকার করা হয় সেই চুক্তিতে। এ পর্যন্ত বিশ্বের ১৮৯টি দেশ ওই চুক্তিতে অনুস্বাক্ষর করেছে।

বিশ্বে যে দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে, বাংলাদেশ রয়েছে সেই তালিকার একেবারে সামনের সারিতে। আর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের প্রধান।

ভার্চুয়াল সামিটে দেওয়া ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, “অনেক প্রতিবন্ধকতা নিয়েও অভিযোজন ব্যবস্থার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বনেতা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এক্ষেত্রে আমি সবাইকে মনে করিয়ে দিতে চাই যে, অভিযোজনের সীমাবদ্ধতা রয়েছে।”

ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাংলাদেশে সিভিএফ ‘মিডনাইট সারভাইভাল ডেডলাইন ফর দ্য ক্লাইমেট’ চালুর কথা তুলে ধরে প্রতিটি দেশকে ৩১শে ডিসেম্বর মধ্যরাতের মধ্যে বর্ধিত প্রতিশ্রুতির ঘোষণা দেওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে দেশব্যাপী ১ কোটি ১৫ লাখ চারা রোপণ করছি এবং সুরক্ষিত টেকসই ভবিষ্যতের জন্য সম্পদের যোগান দিতে মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যান নামে একটি কর্মসূচিও চালু করেছি। আমাদের প্রতিশ্রুতি ও অভিযোজন লক্ষ্যমাত্রা যথেষ্ট পরিমাণে বাড়াতে, আমরা প্রশমন প্রক্রিয়ায় বিদ্যমান বিদ্যুৎ, শিল্প ও পরিবহন খাত ছাড়াও আরও কয়েকটি সম্ভাব্য খাতকে অন্তর্ভুক্ত করেছি। আমাদের জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনাও চূড়ান্ত করছি।”

শেখ হাসিনা বলেন, “প্রতি বছর আমরা জলবায়ু পরিবর্তন সংবেদনশীল প্রকল্পের জন্য ২০০ কোটি ডলার ও অভিযোজন ব্যবস্থার জন্য ৩০০ কোটি তিন ডলার ব্যয় করছি।”

জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক যে তহবিল এ পর্যন্ত পাওয়া গেছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। তাছাড়া আরো উচ্চাভিলাষী নতুন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা কার্যকর করা যাবে না যদি বড় দেশগুলো এগিয়ে না আসে, বিশ্বমানের প্রযুক্তি আর এ পর্যন্ত হওয়া যুগান্তকারী গবেষণাগুলোর সুফল যদি সবার হাতে না পৌঁছায়।

সেজন্য জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে থাকা দেশগুলোর জন্য আন্তর্জাতিক তহবিলের পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব নতুন প্রযুক্তি হস্তান্তরের ওপর জোর দিয়ে আসছে বাংলাদেশ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন