|| সারাবেলা প্রতিবেদন, ঢাকা ||
বাংলাদেশের সরকার প্রধান ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ৭৪তম জন্মদিন আজ। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ১৯৪৭ সালের আজকের দিনে জন্ম নেন তিনি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের প্রথম সন্তান তিনি।
রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে ছাত্রজীবন থেকেই প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন শেখ হাসিনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক করা শেখ হাসিনা তার সময়ে ছাত্রলীগের অন্যতম নেতা ছিলেন।
পঁচাত্তর সালে বাবার হত্যার পর ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে দলীয় প্রধানের দায়িত্ব নেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। এরপর থেকে ৩৪ বছর ধরে নিজ রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও নেতৃত্বের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নের রাজনীতির মূল স্রোতধারার প্রধান নেতা হিসেবে নিজেকে বিশ্ব পরিমন্ডলে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি।
তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এবং অন্য রাজনৈতিক জোট ও দলগুলো ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে বিজয়ী হয়। ১৯৯৬ সালে তার নেতৃত্বেই তৎকালীন বিএনপি সরকারের পতন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বিজয় অর্জন করে আওয়ামী লীগ। গত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় প্রধান বিরোধী দলের নেতা হিসেবে তার নেতৃত্বে অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে প্রথমে ১৪ দলীয় জোট এবং পরে মহাজোট গড়ে ওঠে। ১৪ দল ও মহাজোটের তীব্র আন্দোলনের মুখে অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ২২শে জানুয়ারির একতরফা নির্বাচন করার চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
২০০৭ সালের ১১ই জানুয়ারি জরুরি অবস্থা জারি করে ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এলে ওই বছরের ১৬ই জুলাই চাঁদাবাজিসহ দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার হন শেখ হাসিনা। ওই সময় সংসদ ভবন চত্বরের বিশেষ কারাগারে দীর্ঘ প্রায় ১১ মাস বন্দি ছিলেন তিনি। গণতান্ত্রিক আন্দোলন করতে গিয়ে এর আগেও কয়েক দফা গৃহবন্দি হয়েছেন তিনি।
সরকারে তার নেতৃত্ব
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এ পর্যন্ত চার মেয়াদে ক্ষমতাসীন হয়েছে। ১৯৯৬ সালে তার নেতৃত্বে দীর্ঘ ২১ বছর পর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলটি। ওই বছরের ১২ই জুনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী হয়ে ২৩শে জুন সরকার গঠন করে তারা। এরপর ২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বরের ঐতিহাসিক নির্বাচনে চার-তৃতীয়াংশ আসনে বিশাল বিজয় অর্জনের মাধ্যমে ২০০৯ সালের ৬ই জানুয়ারি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠিত হয়। দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে বিজয়ের পর ১২ই জানুয়ারি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা দ্বিতীয় এবং ২০১৮-এর নির্বাচনের পর টানা তৃতীয়বার সরকার গঠিত হয়েছে।
এছাড়া ১৯৮৬ সালের তৃতীয়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম এবং ২০০১ সালের অষ্টম সংসদে অর্থাৎ মোট তিন দফা বিরোধী দলের নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
১৯৯৬-০১ সালে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করার সময়ে তার নেতৃত্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি ও গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তিকে আওয়ামী লীগ সরকারের অন্যতম সাফল্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বর্তমানে তার নেতৃত্বাধীন সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত ও মধ্যম আয়ের আধুনিক ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য পূরণে কাজ করে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এই অঞ্চলে গণতন্ত্র, শান্তি ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং নারী শিক্ষার বিস্তার, শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস ও দারিদ্র্য বিমোচনের সংগ্রামে অসামান্য ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি হিসেবে দেশি-বিদেশি বেশ কিছু পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন শেখ হাসিনা। এরমধ্যে সাউথ-সাউথ ভিশনারি পুরস্কার-২০১৪, শান্তিবৃক্ষ-২০১৪, জাতিসংঘ পুরস্কার-২০১৩ ও ২০১০, রোটারি শান্তি পুরস্কার-২০১৩, গোভি পুরস্কার-২০১২, সাউথ-সাউথ পুরস্কার-২০১১, ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার-২০১০, পার্ল এস. বার্ক পুরস্কার-২০০০, সিইআরইএস মেডাল-১৯৯৯, এম কে গান্ধী পুরস্কার-১৯৯৮, মাদার তেরেসা শান্তি পুরস্কার-১৯৯৮, ইউনেস্কোর ফেলিক্স হোফুয়েট-বোয়েগনি শান্তি পুরস্কার-১৯৯৮ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া পরিবেশ সংরক্ষণে অসামান্য অবদানের জন্য জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’ পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছেন শেখ হাসিনা।
এবার এক ভিন্ন প্রেক্ষাপটে জন্মদিন পালন হতে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধুকন্যার। গত কয়েক বছরে প্রতিবারই জন্মদিনের সময় তিনি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যোগদানের জন্য নিউ ইয়র্কে থাকতেন। কিন্তু এবার করোনার কারণে দেশেই অবস্থান করছেন। তারপরও সংক্ষিপ্ত আয়োজনে পালিত হবে তার এবারের জন্মদিন।
দলের সভাপতির জন্মদিন উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সোমবার ২৮শে সেপ্টেম্বর বিকাল সাড়ে ৩টায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সীমিত সংখ্যক নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণে বিশেষ দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
এদিন ২৮শে সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয়ভাবে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে বাদ জোহর এবং দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া সকাল ৯টায় আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহার (মেরুল বাড্ডা), সকাল ১০টায় খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (সিএবি) মিরপুর ব্যাপ্টিস চার্চ (২৯, সেনপাড়া, পর্বতা, মিরপুর-১০), সকাল ৬টায় তেজগাঁও জকমালা রাণীর গির্জা এবং সকাল ১১টায় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। একই দিনে ঢাকাসহ সারা দেশে সব সহযোগী সংগঠন আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল, বিশেষ প্রার্থনা ও আলোকচিত্র প্রদর্শনীসহ বিভিন্ন কর্মসূচি যথাযথ স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে পালন করবে।