‘ছুটি’ বাড়ছে না অফিস ও গণ পরিবহন সীমিত পরিসরে চলবে ৩১শে মে থেকেই

|| সারাবেলা প্রতিবেদন, ঢাকা ||

করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে চলমান ‘সাধারণ ছুটি’ র মেয়াদ আর বাড়াবে না সরকার। দেশের অফিস আদালত আর গণ পরিবহন সবই খুলে দেওয়া হচ্ছে ৩১শে মে থেকেই। তবে তা অবশ্যই সীমিত পরিসরে। ৩১শে মে থেকে ১৫ই জুন পর্যন্ত সীমিত পরিসরে অফিস আদালত ও গণ পরিবহন চলাচলের অনুমতি দিয়ে সরকার দেখতে চাইছেন করোনারোধে নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি কতটা মেনে চলেন মানুষ।

বুধবার জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সরকারের এমন সিদ্ধান্ত জানিয়ে বলেন, “৩১শে মে থেকে ১৫ই জুন পর্যন্ত আমরা এসব নিয়মকানুন কতটুকু মানতে পারলাম সেটা দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

এরআগে সন্ধ্যায় প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সাধারণ ছুটির মেয়াদ আর বাড়ছে না। ৩১শে মে থেকে অফিস খুলবে সীমিত পরিসরে। তখন তিনি বলেছিলেন যে গণপরিবহণ আপাতত চালু হচ্ছে না, তা ১৫ই জুন পর্যন্ত বন্ধই থাকছে।

পরে রাতের দিকে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “৩১শে মে থেকে ১৫ই জুন পর্যন্ত সীমিত পরিসরে অফিস খোলা রাখাসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী যেসব সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন, পরে সেখানে প্রধানমন্ত্রী এটা যোগ করেছেন যে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে এবং সীমিত সংখ্যক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চলতে পারবে।”

ঢাকাসহ সারা দেশেই গণপরিবহন চলতে পারবে কি না জানতে চাইলে ফরহাদ হোসেন বলেন, “হ্যাঁ, সারা দেশেই চলাচল করতে পারে। কারণ অনেক মানুষেরই ব্যক্তিগত গাড়ি নেই, তাদেরও যাতায়াত করা প্রয়োজন। সেজন্য ১৫ দিনের জন্য সীমিত পরিসরে গণপরিবহন চালু করা হবে।”

এছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিমান কর্তৃপক্ষ নিজ ব্যবস্থাপনায় বিমান চালাতে পারবে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন দেওয়া এ সংক্রান্ত ফাইল তারা হাতে পেয়েছেন। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

খুলছে অফিস সীমিত আকারে

নতুন করে ‘সাধারণ ছুটি’র মেয়াদ না বাড়িয়ে ৩১শে মে থেকে ১৫ই জুন পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধিসহ বেশ কয়েকটি শর্ত মেনে সীমিত পরিসরে অফিস চালুর বিষয় অনুমোদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার সন্ধ্যায় এ তথ্য জানিয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, আগামী ১৫ই জুন পর্যন্ত সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নিজ নিজ ব্যবস্থাপনায় সীমিত আকারে চলবে। বয়স্ক, অসুস্থ ও সন্তান সম্ভবাদের এ সময় অফিসে আসতে হবে না।

নাগরিক জীবনের সুরক্ষার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন,“ আমরা কিন্তু সব ওপেন করে দিচ্ছি না, সীমিত পরিসরে চলবে।”

অফিস খুললেও এই সময় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থল ছাড়া যাবে না বলে জানান জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ। বলেন, “নাগরিকদের চলাফেরায় আগের মতোই বিধি-নিষেধ থাকবে।”

প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আগের মতোই রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা সবাইকে ঘরে থাকতে হবে। এই সময় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হওয়া যাবে না। হাট-বাজার এবং দোকানপাটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বেচাবিক্রি চলবে।”

এক জেলা থেকে অন্য জেলায় চলাচলে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “প্রতিটি জেলার প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে চেক পোস্টের ব্যবস্থা থাকবে। জেলা প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় এটা বাস্তবায়ন করবে।”

সভা-সমাবেশ, গণজমায়েত ও অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে জানিয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, “মসজিদ ও ধর্মীয় উপসনালয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রার্থনা চলবে।”

এবারে আর ছুটি না বাড়ায় দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরু থেকে টানা ৬৬ দিনের ‘সাধারণ ছুটি’র মেয়াদ আপাতত শেষ হচ্ছে।
ছোঁয়াচে এই রোগের বিস্তার ঠেকানোর লক্ষ্যে সবাইকে ঘরে রাখতে গণপরিবহন বন্ধ করে গত ২৬শে মার্চ থেকে শুরু হয় ‘সাধারণ ছুটি’, যা অনেকটা অন্য দেশগুলোর জারি করা লকডাউনের মতো।

দফায় দফায় ‘সাধারণ ছুটি’ বাড়ানোর পাশাপাশি গেল এপ্রিলে খুলে দেওয়া হয় পোশাক কারখানা। মে মাসে ঈদের আগে শিথিল করা হয় আরও কিছু বিধি-নিষেধ। সরকারের এসব পদক্ষেপে মানুষ যে যার মত জীবিকার প্রয়োজনে নানা ভোগান্তি মেনেই যাতায়াত শুরু করে এ জেলা থেকে আরেক জেলায়। বিশেষ করে রাজধানীতে আসা আর রাজধানী ছেড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে সবথেকে বেশী। আর মানুষের এমন বেসামাল চলাফেরার শুরু থেকে প্রতিদিনই বাড়ছে কোভিড-১৯ সংক্রমণ।

এই অবস্থায় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অনেকে আরও কিছু দিন কঠোর লকডাউনের সুপারিশ করলেও অর্থনীতিবিদদের অনেকে আবার স্থবির অর্থনীতি চালু করতে সীমিত আকারে সব কিছু খোলার পক্ষে মত জানিয়ে আসছিলেন।

প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ এর আগে বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবার সঙ্গে আলোচনা করে লকডাউন নিয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন। তবে এরইমধ্যে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ঈদভাষনে প্রধানমন্ত্রী ‘সাধারণ ছুটি’ আর না বাড়ানোর ইঙ্গিত দেন। তিনি বলেছিলেন, “ঝড়-ঝঞ্ছা-মহামারী আসবে। সেগুলো মোকাবেলা করেই আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে।”

স্কুল কলেজ বন্ধই থাকছে

এদিকে অফিস আদালত ও গণপরিবহন সীমিত পরিসরে খুললেও খুলছে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ফলে এগুলো ১৫ই জুন পর্যন্ত বন্ধই থাকছে। দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার ১৭ই মার্চ থেকেই বন্ধ রাখা হয়েছে। ১লা এপ্রিল থেকে নির্ধারিত এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও স্থগিত হয়ে গেছে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে।

প্রতিমন্ত্রী জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ১৫ই জুন পর্যন্ত বন্ধ থাকবে, তবে অনলাইন বা ভার্চুয়াল ক্লাস চলবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন