করোনায় সেশনজট বাড়ার শঙ্কায় ঢাবিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থিরা

|| হাসান তামিম, ঢাকা কলেজ থেকে ||

করোনা অভিঘাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সেশনজটের আশঙ্কা করছেন শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা। প্রাণঘাতি এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বন্ধ রয়েছে দেশের সকল স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান৷ করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এই বন্ধ অবস্থা আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এমন অবস্থায় সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় রয়েছে দেশের সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। কেননা আগে থেকেই কমবেশি সেশনজটে নাকাল দেশের বেশীর ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা৷ তবে এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শঙ্কায় রয়েছে আগে থেকেই সেশনজটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজ। করোনা পরিস্থিতি দীর্ঘ হলে তীব্র সেশনজটের আশঙ্কা করছেন সাত কলেজের প্রায় আড়াই লাখ শিক্ষার্থী৷

কবি নজরুল সরকারি কলেজের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী পল্লব হাসান সিনহা বলেন, ‘চলমান করোনা পরিস্থিতির কারনে যদি এই অচলাবস্থা চলতে থাকে তাহলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিতে পড়বো আমরা সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা৷ আমরা এমনিতেই দীর্ঘ সেশনজটে আছি। এভাবে চলতে থাকলে সেশনজট দীর্ঘ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে৷’

সরকারী বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থী তৈয়ব মিয়া বলেন, ‘আমাদের নতুন শিক্ষাবর্ষে সেশনজট না থাকলেও দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকলে নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে৷ এভাবে চলতে থাকলে আগের মতই সেশনজটে পড়তে হবে আমাদেরক৷’

তবে এরই মধ্যে করোনা অভিঘাতে বন্ধ হয়ে গেছে ২০১৭ সালের মাস্টার্স পরীক্ষা। ঢাকা কলেজের মাস্টার্স ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী রিওয়াজ হাবিব বলেন, ‘আমাদের ২০১৭ সালের পরীক্ষা ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। করোনাভাইরাসের কারনে দুটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হয়ে গেছে। সেশনজটের কারনে আমাদের সরকারি চাকরির বয়সও শেষ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।’

বর্তমান পরিস্থিতিতে সেশনজট সহ অন্যান্য সমস্যার বিবেচনায় শিক্ষার্থীদের জন্য কোন উদ্যোগ নেওয়া হবে কিনা? জানতে চাইলে কবি নজরুল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ও সাত কলেজের সমন্বয়ক (ফোকাল পয়েন্ট) প্রফেসর আই কে সেলিম উল্ল্যাহ খন্দকার বলেন, ‘আমরা তো সেশনজটের সমস্যাগুলো প্রায়ই কাটিয়ে উঠছিলাম। এখন সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে তাহলে সমস্যা বাড়বে। দেখি আগামী ৫ই মে’র পর অফিস খুললে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে মিটিং করে কি সিন্ধান্ত নেওয়া যায় এবং কলেজ খুললে অবশ্যই আমরা ক্রাশ প্রোগ্রামে যাবো ।’

করোনাভাইরাসের কারনে আটকে থাকা ফলাফল প্রকাশের ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহলুল হক চৌধুরী বলেন, ‘ফলাফল প্রকাশে আমাদের কতগুলো ধাপ পার করতে হয়। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি যেনো দ্রুততম সময়ে ফলাফল প্রকাশ করতে পারি ‘

এদিকে অনলাইনে সাত কলেজের সমন্বিত ক্লাস নেওয়া যায় কিনা জানতে চাইলে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, ‘সাত কলেজের বিষয় তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সম্পর্কিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও এখনো অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছে না৷ আমাদেরকেও কোন নির্দেশনা দেয় নি। তবে ফেইসবুকে পেজের মাধ্যমে ডিপার্টমেন্ট ভিত্তিক ক্লাস নেওয়া যায় কিনা সেটা আমরা বিবেচনা করে দেখবো।

প্রসঙ্গত, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারি নির্দেশনায় গত ১৮ই মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের সকল ধরণের শিক্ষা কার্যক্রম৷ এরপর সর্বশেষ গত ১০ই এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত এক বার্তায় অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের সকল পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ৷#

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন