সারাবেলা প্রতিবেদন, ঢাকা
করোনাভাইরাসে সংক্রমিত আরও একজনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ছয়জনে দাঁড়িয়েছে। গত একদিনে নতুন করে আরও তিনজন সংক্রমিত হওয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৪ জনে।
পয়লা এপ্রিল বুধবার সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট- আইইডিসিআরের নিয়মত অনলাইন ব্রিফিংয়ে যুক্ত হয়ে এসব তথ্য জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, দেশে আক্রান্তদের মধ্যে এ পর্যন্ত মোট ২৬ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
বাংলাদেশে গেল ৮ই মার্চ প্রথম তিনজনের শরীরে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে, যাদের মধ্যে দু’জন সংক্রমণ নিয়ে এসেছিলেন বিদেশ থেকে। এর দশদিনের মাথায় বাংলাদেশে প্রথম মৃত্যুর কথা জানায় আইইডিসিআর।
সংক্রমণ ও মৃত্যুর ঘটনা বাড়তে থাকায় সরকার ইতোমধ্যে সারা দেশে আগামি ৯ই এপ্রিল সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সবাইকে যার যার বাড়িতে থাকতে বলেছে, বন্ধ রাখা হয়েছে সব ধরনের যান চলাচল।
করোনাভাইরাসজনিত রোগ কোভিড-১৯ এর প্রাথমিক উপসর্গ জ্বর-কাশি হলেও পরে অনেকের শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়, তখন রোগীকে ভেন্টিলেশনে রাখারও প্রয়োজন হতে পারে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়ন করছে। ইতোমধ্যে সরকারি হাসপাতালে প্রায় ৫০০ ভেন্টিলেটর বসানোর কাজ চলছে। আমদানি পর্যায়ে রয়েছে আরও তিনশ ভেন্টিলেটর। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে রয়েছে ৭০০ ভেন্টিলেটর।
ইতোমধ্যে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালকে (কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য) প্রস্তুত করা হয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, সেখানে ভেন্টিলেটরও থাকবে। একইসঙ্গে ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা রেখে প্রস্তুত করা হয়েছে গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালকেও। এছাড়া বাংলাদেশ কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতাল আগে থেকেই কাজ চলছে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে আরও হাসপাতাল প্রস্তুত রয়েছে।
মন্ত্রী জানান, করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য আইইডিসিআরের বাইরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদালয়, মহাখালীর জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (আইপিএইচ) ও শিশু হাসপতালে ‘টেস্টিং ফেসিলিট ‘ চালু করা হয়েছে। দু’য়েক দিনের মধ্যে ঢাকা মেডিকেলেও চালু হয়ে যাবে।
ঢাকার বাইরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রংপুর মেডিকেল ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টেস্টিং ল্যাব স্থাপন করা হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, পর্যায়ক্রমে প্রতিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই পরীক্ষার ব্যবস্থা চালু করা হবে।”
তবে শুধু টেস্টিং ফ্যাসিলিটি থাকলে চলবে না জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “জনগণকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে গিয়ে পরীক্ষা করাতে হবে। জনগণ এগিয়ে আসুক, টেস্ট করুক। আমি চাচ্ছি না কোনো জনগণ টেস্টের বাইরে থাক। যারা সন্দেহজনক অবস্থায় আছেন, তারা টেস্ট করুন, নিজেরা ভালো থাকুন এবং পরিবারকে সুরক্ষিত রাখুন। বেশি বেশি টেস্ট করুন, নিজেকে সুরক্ষা করুন এবং সমাজকে নিরাপদে রাখুন।”
সবাইকে ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “আমরা লক্ষ্য করেছি পুরান ঢাকায় কিংবা ঢাকার কিছু কিছু এলাকায়, ঢাকার আশেপাশে, ইউনিয়নে, গ্রামে গঞ্জে মানুষজন ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ছেন, বাইরে ঘোরাফেরা করছেন, চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছেন। এসব করবেন না। এতে করে সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে যাবে।
“যারা ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে গেছেন তারা ঘোরা ফেরা করছেন। আপনারা এই কাজগুলো থেকে বিরত থাকুন। আমরা এখনও ভালো আছি বলে এভাবে ঘোরাফেরা করা যাবে না, এই অবস্থা ধরে রাখতে ঘোরাফেরা বন্ধ করতে হবে।”
দেশে অনেক বেসরকারি হাসপাতালের ভালো চিকিৎসা দেওয়ার সক্ষমতা থাকলেও দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে এখন সেই মাত্রায় সেবা পাওয়া যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “বেসরকারি ডাক্তাররা অনেকেই ভালো সেবা দিয়ে থাকেন। কিন্তু তাদের চেম্বারগুলি এখন বন্ধ রয়েছে বলে আমাদের কাছে খবর আসছে। হাসপাতালগুলির চিকিৎসা ব্যবস্থা একটু স্তিমিত হয়ে গেছে। আমি আশা করব আপনারা এগিয়ে আসবেন, দেশবাসীর পাশে থাকবেন।”
![](https://i0.wp.com/sangbadsaradin.net/wp-content/uploads/2021/08/Nazrul-04-1.jpg?fit=300%2C204&ssl=1)