|| সারাবেলা প্রতিবেদন, ঢাকা ||
করোনা দুর্যোগের মধ্যে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে ঘূর্ণিঝড় আমফান। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চয় করে ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান প্রবণতা বজায় থাকলে এ ঝড়ের উপকূলের কাছাকাছি পৌঁছাতে দিন দুয়েক সময় লাগতে পারে। তবে সোমবারই অতি ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে আমফান। সেই সঙ্গে আছড়ে পড়তে পারে হাতিয়া সন্দীপের মত উপকূলীয় জেলায়।
আবহাওয়াবিদ আফতাব উদ্দিন জানান, ঘূর্ণিঝড় আমফান রোববার রাত ৯টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে; কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১২২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে; মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১২১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১১৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
ওই সময় ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছিল।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর বিক্ষুব্ধ থাকায় বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আফতাব উদ্দিন আরো বলেন, “সোমবার ঝড়ের সর্বশেষ পরিস্থিতি পযবেক্ষণ করে আরো সুনির্দিষ্ট তথ্য আপডেট করা হবে। সতর্ক সঙ্কেতের বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদেক্ষপ নেওয়া হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, সোমবার নাগাদ আমফান উত্তর-পূর্ব দিকে দ্রুত গতিতে এগোতে শুরু করবে। বুধবার দুপুরে ঘূর্ণিঝড়টি সাগরদ্বীপ এবং বাংলাদেশের হাতিয়া দ্বীপের কাছে আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এটি ঠিক কোথায় কখন আছড়ে পড়বে তা আগামী ২৪ ঘণ্টাতেই স্পষ্ট হয়ে যাবে। কারণ ওই সময়ের মধ্যেই মধ্যে ঝড়টি নিজের গতিপথ বদলাতে পারে। তাঁদের মতে, ঘূর্ণিঝড়ের জেরে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উপকূলবর্তী এলাকায় মঙ্গল এবং বুধবার প্রচুর বৃষ্টি হবে।
দুর্যোগ মোকাবেলায় রাষ্ট্রের প্রস্তুতি
কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যেই প্রাকৃতিক এই দুর্যোগ মোকাবেলার প্রস্তুতিও নিতে হচ্ছে সরকারকে। অতিপ্রবল এই ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশে আঘাত হানার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে উপকূলীয় অঞ্চলের লোকজনদের রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এজন্য আশ্রয় কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়াতে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান। ঘূর্ণিঝড় আম্পান মোকাবেলায় সরকারের প্রস্তুতি নিয়ে রোববার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ভার্চুয়াল সভা শেষে সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে প্রতিমন্ত্রী একথা জানান।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ আরও উত্তর-পশ্চিমে এগিয়ে আসায় বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরগুলোকে সতর্কতার মাত্রা বাড়িয়ে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সঙ্কেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যালোচনা অনুযায়ী যদি ঘূর্ণিঝড়টি তার গতি ও দিক পরিবর্তন না করে, তাহলে আগামী ১৯ মে দিবাগত রাতে বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে আঘাত হানতে পারে। ঘূর্ণিঝড় আম্পান মোকাবেলায় সরকারের প্রস্তুতি রয়েছে। উপকূলীয় জেলাগুলোতে সাইক্লোন শেল্টারগুলো প্রস্তুত রাখতে জন্য ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতিতে সবাইকে সামাজিক দূরত্ব কীভাবে বজায় রাখা হবে জানতে চাইলে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, “সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে যেন মানুষজনকে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা যায় সে লক্ষ্যে এবার আশ্রয় কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উপকূলীয় জেলাগুলোর জেলা প্রশাসকদের ইতোমধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থানকালে যাতে কারও খাবারের অভাব না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় শুকনো খাবার এবং গো-খাদ্যের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। জেলা প্রশাসনের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনে আরও বরাদ্দ দেওয়া হবে জানিয়ে এনামুর বলেন, দুর্যোগকালীন বিদ্যুৎ না থাকলে তার বিকল্প ব্যবস্থা রাখতে জেলা প্রশাসনগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় আম্পান মোকাবেলায় পূর্ব প্রস্তুতি ও করণীয় নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সচিব এবং উপকূলীয় জেলাগুলোর জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল সভা করেন ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী।
সারাদেশে ভ্যাপসা গরম
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দেশের বিভিন্নস্থানে ভ্যাপসা গরম অনুভূত হচ্ছে। আবহাওয়াবিদ আফতাব উদ্দিন বলেন, “কিছু এলাকায় মৃদু তাপপ্রবাহ যাচ্ছে। এমন সময়ে ঘূর্ণিঝড়ের বাতাস ধাবিত হচ্ছে, প্রচুর জলীয় বাষ্পের কারণে ভ্যাপসা গরম আবহাওয়া বিরাজ করছে।”
১৯শে মে রাত থেকে বৃষ্টির আভাস দিয়ে তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় উপকূলের কাছাকাছি এলে বৃষ্টি ঝরিয়ে দুর্বল হওয়ার সময় ওইসব অঞ্চলে বর্ষণ বাড়বে।
উল্লেখ্য, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি শনিবার রাত ৯টার দিকে ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নেয়। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার সাইক্লোন সংক্রান্ত আঞ্চলিক সংস্থা এসকাপের নির্ধারিত তালিকা থেকে তখন এর নাম দেওয়া হয় ‘আম্পান’। এটি থাইল্যান্ডের দেওয়া নাম।