এসএসসি ও এইচএসসি নিয়ে এখনই কিছু বলতে পারছে না সরকার

করোনাকালের প্রায় দেড় বছরে শিক্ষার্থিদের স্কুলে যাওয়া হয়নি। ক্লাস চলছে সমর্থদের অনলাইনে ক্লাস আর এসাইনমেন্ট। পরীক্ষাও হচ্ছে। কিন্তু এসএসসি ও এইচএসসি পর্যায়ে নেয়া যাচ্ছে না স্বশরীরে পরীক্ষা। কেন নেয়া যাচ্ছে না তার উত্তর সবার জানা থাকলেও কারোরই জানা নেই।

|| সারাবেলা প্রতিবেদক ||

করোনার প্রভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আর না মেনে স্বাভাবিক চললেও শুধু থমকে আছে শিক্ষা ব্যবস্থা। এরইমধ্যে করোনাকালের প্রায় দেড় বছরে শিক্ষার্থিদের স্কুলে যাওয়া হয়নি। ক্লাস চলছে সমর্থদের অনলাইনে ক্লাস আর এসাইনমেন্ট। পরীক্ষাও হচ্ছে। কিন্তু এসএসসি ও এইচএসসি পর্যায়ে নেয়া যাচ্ছে না স্বশরীরে পরীক্ষা। কেন নেয়া যাচ্ছে না তার উত্তর সবার জানা থাকলেও কারোরই জানা নেই।

সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, এসএসসির প্রশ্নপত্র ছাপা হয়েছে। এইচএসসির প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হচ্ছে। পরীক্ষা অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুতিসহ অপেক্ষাও করছে শিক্ষাবোর্ডগুলো। এটাও চিন্তায় রয়েছে পরীক্ষা নেয়া সম্ভব না হলে বিকল্প মূল্যায়ন। যদিও বিকল্প মূল্যায়ন কি হতে পারে তা এখনো ঠিক হয়নি।

এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা গেলো ১৫ মাস ধরে শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করতে পারছে না। এসএসসির ফরম পূরণ শেষ পর্যায়ে থাকলেও এইচএসসিরটা শুরু হয়নি। এমনিতর অবস্থায় এই দুটো জাতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠান নিয়ে বাড়ছে অনিশ্চয়তা। তবে শিক্ষা বোর্ডগুলো এখনো সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচিতে পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষে। এ জন্য এসএসসির প্রশ্নপত্র ছাপা এবং ফরম পূরণের কাজও প্রায় শেষ। এইচএসসির প্রশ্নপত্র প্রণয়নের কাজও চলছে। এরপরেও যদি করোনার সার্বিক পরিস্থিতি পরীক্ষা না নেওয়ার মতো হয়, তাহলে বিকল্পভাবে মূল্যায়নের প্রাথমিক চিন্তাও আছে।

শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা, পরীক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, পরীক্ষা নেওয়ার জন্য প্রয়োজনে আরও অপেক্ষা করা উচিত। কারণ, পরীক্ষা ছাড়া মূল্যায়ন করলে শিক্ষার্থীদের ওপর সামাজিক প্রভাব যেমন পড়ে, তেমনি শিক্ষার্থীদের পরবর্তী সময়ে চাকরিসহ বিভিন্ন কাজেও সমস্যা হতে পারে।

সাধারণত প্রতিবছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এসএসসি এবং এপ্রিল মাসে এইচএসসি পরীক্ষা হয়। কিন্তু করোনার কারণে গত বছর থেকে পুরো শিক্ষাপঞ্জি এলোমেলো হয়ে গেছে। করোনা পরিস্থিতিতে গত বছরের ১৭ই মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি চলছে। সরকারের সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, ৩০শে জুন পর্যন্ত ছুটি আছে।

শিক্ষা বোর্ডগুলোর কর্মকর্তারা জানান, এখন পর্যন্ত পরিকল্পনা হলো, এ বছর সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে ৬০ দিন ক্লাস করিয়ে এসএসসি এবং ৮৪ দিন শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করিয়ে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়ার। কিন্তু এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন নির্ভর করছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ওপর। কারণ, পরিকল্পনায় রয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পর প্রথম দিকে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য সপ্তাহে ছয় দিন ক্লাস করিয়ে পাঠ্যসূচি শেষ করা। কিন্তু কবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে, তা নিশ্চিত নয়।

এ রকম পরিস্থিতিতে বিকল্প ভাবনা

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি মঙ্গলবার ঢাকার কেরানীগঞ্জে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, চলতি বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা হবে কি না, তা এ মুহূর্তে বলে দেওয়া যাচ্ছে না। এখনো চেষ্টা হচ্ছে। তবে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় পরীক্ষা না নিতে পারলে বিকল্প কী মূল্যায়ন হতে পারে, সেসব নিয়েও কাজ চলছে। পরীক্ষা নেওয়া বা না নেওয়ার বিষয়ে আরও কিছুদিন দেখতে হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, যদি একেবারেই সম্ভব না হয়, তাহলে বিকল্প অনেক কিছু চিন্তা করার আছে।

ঢাকা বোর্ডের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে জানান, এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে বিকল্প মূল্যায়নের জন্য বলা হয়নি। মৌখিকভাবে বলা হয়েছে, পরীক্ষার প্রস্তুতির পাশাপাশি বিকল্প কী হতে পারে তা দেখতে। কিন্তু এ নিয়ে এখনো কোনো সভা হয়নি। তবে বিকল্প নিয়ে ব্যক্তিগত পর্যায়ে কারও কারও বিভিন্ন মত আছে। এর মধ্যে দুই পরীক্ষাতেই অ্যাসাইনমেন্টের ওপর বেশি জোর দেওয়া, যেটি শুরু হয়েছে। এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার ফলকে বিবেচনা করার ভাবনাও আছে। এইচএসসির ক্ষেত্রে জেএসসি ও এসএসসির গড় ফলকে ভিত্তি করে মূল্যায়নের আলোচনাও আছে। আবারও কেউ কেউ মূল কয়েকটি বিষয়ের ওপর সংক্ষিপ্ত সময়ে পরীক্ষা নেওয়ার জন্যও বলছেন। তবে এগুলো একেবারেই ব্যক্তিগত পর্যায়ের প্রাথমিক চিন্তা। যদি অপরিহার্য হয়ে পড়ে, তখন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করে বিকল্প ঠিক করা হবে।

আবার কারও কারও ভাবনা হলো, প্রয়োজনে এক বছর অপেক্ষা করা। তবে সে ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে জন্য চাকরিতে প্রবেশের বয়স, উচ্চশিক্ষায় ভর্তিসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে এক বছর বাড়িয়ে দেওয়ার কথাও বলছেন তাঁরা। এই পক্ষের মত হলো, পরীক্ষা ছাড়া পাস করানো হলে শিক্ষার্থীদের ওপর সামাজিক প্রভাব পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে চাকরিতেও সমস্যা হতে পারে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার বড় অসুবিধা হলো, গত ১৫ মাসে তাদের শ্রেণিকক্ষে কোনো ক্লাস হয়নি। ওই দুই পরীক্ষা নিয়ে অবস্থান জানতে চাইলে শিক্ষা বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যানদের সংগঠনের প্রধান ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, ‘এখনো সিদ্ধান্ত হলো, সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচিতে পরীক্ষা নেওয়া। এ জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি। এরপরও যদি করোনা পরিস্থিতি একেবারে ভয়াবহ খারাপ হয়, তখন তো বিকল্প চিন্তা করতেই হবে।’

সংবাদ সারাদিন