এবার গণমাধ্যমে কথা বলতে মানা বিএসএমএমইউ’র চিকিৎসক-শিক্ষকদের

|| সারাবেলা প্রতিবেদন, ঢাকা ||

করোনা দুর্যোগের এই সময়ে দেশের সর্বোচ্চ চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন চিকিৎসক ও শিক্ষক গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না।
বিএসএমএমইউ প্রশাসন এক প্রজ্ঞাপনে বলেছে, এখন থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলা যাবে না। একইসঙ্গে সোশাল মিডিয়ায় স্ট্যাটাস না দিতেও চিকিৎসক শিক্ষকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ।

শনিবার বিএসএমএমইউর রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এ বি এম আব্দুল হান্নান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, “বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের এখন থেকে কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমোদন ছাড়া স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে গণমাধ্যমে বক্তব্য ও বিবৃতি প্রদান না করার জন্য অনুরোধ করা হল।”

একইসঙ্গে কোনো টেলিভিশন টকশোতে অংশগ্রহণ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস/শেয়ার প্রদান করার ক্ষেত্রে সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি যেন ক্ষুন্ন না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকাতেও অনুরোধ করা হয়েছে ঐ প্রজ্ঞাপনে।

বিএসএমএমইউর ল্যাবে বর্তমানে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ পরীক্ষা চলছে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উদ্ভাবিত বহুল আলোচিত কোভিড-১৯ শনাক্ত করণ কিটের কার্যকারিতা যাচাইয়ের পরীক্ষাটিও চলছে বিএসএমএমইউতে।

এর মধ্যেই কথা বলতে বারণের প্রজ্ঞাপনের বিষয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনককান্তি বড়ুয়া বলেন, “এটা নতুন কিছু না। চাকরির বিধিমালা শিক্ষকদের স্মরণ করিয়ে দেওয়া হল মাত্র। আমাদের চাকরির শৃঙ্খলাবিধিতে যে বিষয়গুলো আছে, সেটাই এখানে উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

কোনো শিক্ষকের কোনো বক্তব্যে সরকার বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এখনও এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। ভবিষ্যতে যাতে না হয় সেজন্য শিক্ষকদের মনে করিয়ে দেওয়া। শিক্ষকদের অনেকের তো বিষয়টি মনে থাকে না।”

নার্সদেরও গণমাধ্যমে কথা বলতে মানা

এরআগে গেল ১৭ই এপ্রিল দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে কর্তব্যরত নার্সদের গণমাধ্যমে কথা বলতে বারণ করে অফিস আদেশ জারি করে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতর। কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য নির্ধা‌রিত কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে খাবার সঙ্কটের কথা নার্সের মাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর তা নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের প্রেক্ষাপটে শুক্রবার এই নির্দেশনা দেয় অধিদফতর।

নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সিদ্দিকা আক্তার স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বলা হয়েছে, “নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের আওতাধীন সকল সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে সরকারি চাকুরি বিধি অনুযায়ী ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে জনসম্মুখে, সংবাদপত্রে বা অন্য কোনো গণমাধ্যমের কোনো প্রকার আলোচনা, বিবৃতি বা মতামত প্রদান না করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হল।”

গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর কোভিড-১৯ আক্রান্ত হাসপাতালে নার্সদের খাবার সঙ্কটের বিষয়টি নিয়ে তোপের মুখে পড়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনলাইন বুলেটিনে আর কোন প্রশ্ন নয়

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদ গেল ৭ই এপ্রিল প্রতিষ্ঠানটির করোনা নিয়ে সবশেষ তথ্য জানানোর অনলাইন ব্রিফিংয়ে যুক্ত হয়ে জানান, এখন থেকে ব্রিফিংয়ে কোন আলোচনা ও সাংবাদিকদের কাছ থেকে আর প্রশ্ন নেওয়া হবে না।

তিনি বলেন, “নীতিনির্ধারণী মহল, সংবাদকর্মী সকলের সাথে আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এটাকে মিডিয়া ব্রিফিং হিসেবে প্রচার না করে আমরা দৈনন্দিন স্বাস্থ্য বুলেটিন হিসেবে প্রচার করব।

তিনি বলেন, “আমরা এখানে চেষ্টা করব, কি (মূল) ইনফরমেশনগুলো আমরা বুলেটিনের মাধ্যমে শেয়ার করব। পরবর্তীতে আমরা যে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেই, সে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আমরা বিস্তারিত বিভিন্ন তথ্য দেব। আমাদের যে সহকর্মী আছেন তাদের সাথে আলাপ করেও পরবর্তীতে জানতে পারবেন। “এর ফলে এই যে আমরা আপনাদের অবহিত করছি, বুলেটিনের মাধ্যমে। এর পরে আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর এটা আর হবে না,” বলেন আবুল কালাম আজাদ।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআরের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সর্বশেষ পরিসংখ্যান তুলে ধরার পর এদিন সংবাদ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ৬ই এপ্রিল সোমবার দুপুরে একটি অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক আগেভাগেই নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সর্বশেষ পরিসংখ্যান তুলে ধরার পর সেই তথ্য পরে সংশোধন করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার মৃত্যুর পরিসংখ্যান জানাতে গিয়ে মন্ত্রী সেদিন ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে জানালেও আইইডিসিআরের পরিচালক জানান, প্রকৃতপক্ষে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সমন্বয়হীনতার প্রশ্নে সাংবাদিকরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে ছেঁকে ধরেন সোমবার। পরে আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছিলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে যে তথ্য দিয়েছিলেন, তাতে গড়মিল রয়েছে।

তথ্যের গড়মিলে সংবাদ সম্মেলনে সমালোচনার মুখে পড়ার একদিন পরেই এল তথ্য সংকোচনের এমন সিদ্ধান্ত।

গত ৮ই মার্চ থেকে দেশে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমন নিয়ে নিয়মিত ব্রিফিং করছিল আইইডিসিআর। পরে তা স্থানান্তরিত করা হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে। ব্রিফিংয়ে যুক্ত হন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম শাখার প্রধান হাবিবুর রহমান। গত ২রা এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ভুলভাবে উপস্থাপন করার পর নিয়মিত ব্রিফিংয়ে তথ্য উপস্থাপনের কাজ থেকে তাকে বিরত রাখে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ৩রা এপ্রিল থেকে যুক্ত হন মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন