এইচ টি ইমাম আর নেই

|| সারাবেলা প্রতিবেদন ||

মুজিব নগর সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রখ্যাত আমলা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা হোসেন তৌফিক ইমাম আর নেই। যিনি এইচ টি ইমাম নামেই সমধিক পরিচিত। বৃহস্পতিবার ভোরে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) তিনি মারা গেছেন। রাত সোয়া ১টার দিকে চিকিৎসকরা এইচ টি ইমামকে মৃত ঘোষণা করেন। গেলো মাসখানেক ধরেই তার চিকিৎসা চলছিল। কিডনির জটিলতাসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।

১৯৭১ সালে পাকিস্তান সরকারের চাকরিতে থাকা অবস্থায় পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্য ছেড়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন এইচ টি ইমাম। মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সচিব থেকে শুরু করে স্বাধীন দেশের সামরিক বেসামরিক বিভিন্ন সরকারসময়ে আমলাতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন।

এইচ টি ইমামের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। শোক জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও।

আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া জানান,  এইচ টি ইমামের মরদেহ বৃহস্পতিবার সকালে হেলিকপ্টারে করে উল্লাপাড়ায় নেয়া হয়। সেখানে সকাল ১১টায় উল্লাপাড়া আকবর আলী সরকারি কলেজ মাঠে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

উল্লাপাড়ায় জানাজা শেষে কফিন আবার ঢাকায় নিয়ে আসা হবে। বেলা দেড়টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হবে সবার শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য। বাদ আছর গুলশানের আজাদ মসজিদে আরেক দফা জানাজার পর এইচটি ইমামের মরদেহ বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে।

এরআগে ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানো হবে এই মুক্তিযোদ্ধার প্রতি।

হোসেন তৌফিক ইমামের জন্ম ১৯৩৯ সালে, বাবার চাকরি সূত্রে তার শৈশব-কৈশোর কেটেছে বিভিন্ন জেলায়। ম্যাট্রিক পাস করেন ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে। ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে। রাজশাহী কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রি নিয়ে তিনি ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, অর্থনীতিতে এমএ ডিগ্রি নেন। তখন তিনি বাম ছাত্র সংগঠনে যুক্ত ছিলেন।

পড়াশোনা শেষে শিক্ষকতায় যোগ দিয়েছিলেন এইচ টি ইমাম। কাজ করনে রাজশাহী সরকারি কলেজে অর্থনীতির প্রভাষক হিসেবে। এরপর পাকিস্তানে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। সরকারি চাকরিতে থাকতেই লন্ডনের স্কুল অব ইকোনমিকস থেকে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা করেন ।

স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালের ২৬শে অগাস্ট পর্যন্ত তিনি মন্ত্রিপরিষদের সচিবের দায়িত্বে ছিলেন। এরপর ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৪ পর্যন্ত সাভারের লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি যোগাযোগ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিবও হন।

অবসর নেওয়ার পর আওয়ামী লীগে সক্রিয় হন এইচ টি ইমাম। দলের নির্বাচন পরিচালনার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তিনি। আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ছিলেন, যে কমিটির চেয়ারম্যান শেখ হাসিনা।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্ব দেন। পরে ২০১৪ সালে তাকে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা নিয়োগ করা হয়।

সংবাদ সারাদিন