|| আদালত প্রতিবেদক, ঢাকা ||
ভার্চুয়াল আদালত নিয়ে আপত্তিকর এবং অবমাননাকর ফেসবুক পোস্ট দেয়ার অভিযোগে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সিনিয়র এক আইনজীবীকে দুসপ্তাহের জন্য নিষিদ্ধ করেছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। আগামী ১১ই অক্টোবর রোববার তাকে আপিল বিভাগে হাজির হতেও বলা হয়েছে। শুধু তাই নয়, আপিল বিভাগ সিনিয়র এই আইনজীবীর ফেসবুক একাউন্টও ব্লক করে দেয়ার জন্যটেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
![](https://i0.wp.com/www.sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/09/114634004_yunusaliakand.jpg?resize=297%2C331&ssl=1)
রোববার ২৭শে সেপ্টেম্বর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ এসব আদেশ দেন। আদেশে বলা হয়েছে, এই দুই সপ্তাহ আপিল বিভাগের সিনিয়র আইনজীবী ইউনুস আলী আকন্দ সুপ্রিম কোর্টে কোনো ধরনের মামলা পরিচালনা করতে পারবেন না।
উল্লেখ্য, ইউনুছ আলী আকন্দের ফেসবুক পোস্টটি আদালতের নজরে আনেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা।
বাংলাদেশে কারও ফেসবুক একাউন্ট ব্লক করে দেয়ার জন্য আদালতের নির্দেশ দেয়ার ঘটনা এটাই প্রথম বলে মনে করা হচ্ছে।
কেন আদালত তার বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নিয়েছে?
সিনিয়র আইনজীবী ইউনুস আলী আকন্দের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগটি করা হয়েছে এটর্নি জেনারেলের অফিস থেকে। অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা রোববার আপিল বিভাগের ভার্চুয়াল আদালতে মিস্টার আকন্দের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তোলেন। করোনাভাইরাস মহামারি শুরু হওয়ার পর অন্য অনেক দেশের মতোই বাংলাদেশেও আদালতের অনেক কার্যক্রম এখন অনলাইনে, অর্থাৎ ভার্চুয়াল আদালতে করা হচ্ছে। সেখানে বিচারক এবং আইনজীবীরা অনলাইনেই হাজির হচ্ছেন।
অতিরিক্ত এটর্নি মুরাদ রেজা গনমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ইউনুস আলি আকন্দ ফেসবুকে এমন অনেক পোস্ট দিয়েছেন, যাকে তারা আদালতের অবমাননা বলে মনে করছেন। মুরাদ রেজা বলেন, “ মিস্টার আকন্দ একটি-দুটি নয়, গত কয়েকদিনে ফেসবুকে অনেকগুলো পোস্ট দিয়েছেন। এসব পোস্টে তিনি বাংলাদেশে এখন যে ভার্চুয়াল আদালত বসছে, সে সম্পর্কে খুবই গুরুতর কিছু কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, এই ভার্চুয়াল আদালতে আসলে কারও লাভ হচ্ছে না, সরকারের স্বার্থসিদ্ধির জন্য এই ভার্চুয়াল কোর্ট বসানো হয়েছে। এই ভার্চুয়াল কোর্টের ব্যাপারে তিনি তদন্তেরও দাবি জানান। এটর্নি জেনারেলের অফিস মনে করছে, এগুলো খুবই আপত্তিকর পোস্ট,আদালতের জন্য অবমাননাকর। সেজন্যেই আমরা আজ এ বিষয়ে আপিল বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করি।”
মুরাদ রেজা জানান, এরপর আদালত ইউনুস আলী আকন্দকে দু সপ্তাহের জন্য আইনজীবী হিসেবে নিষিদ্ধ করেছে, অর্থাৎ তিনি এই দুই সপ্তাহ কোন প্র্যকটিস করতে পারবে না। একই সঙ্গে তার ফেসবুক পোস্টগুলো সরিয়ে নেয়ার নির্দেশই শুধু নয়, আদালত একই সঙ্গে ফেসবুক একাউন্টটি ব্লক করে দেয়ার জন্য বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ, বিটিআরসিকে নির্দেশ দিয়েছে।
মুরাদ রেজা এও বলেন, “ইউনুস আলী আকন্দ বেশ প্রবীন এবং সিনিয়র একজন আইনজীবী। কী বললে আদালতের অবমাননা হয়, কী বললে হয় না, সেটা উনার বেশ ভালো করে জানা থাকার কথা।”
এ ব্যাপারে ইউনুস আলী আকন্দ আকন্দ বলেছেন, ভার্চুয়াল আদালতের রোববারে দেওয়া আপিল বিভাগের নির্দেশ সম্পর্কে তিনি কয়েকটি নিউজ সাইটের রিপোর্ট দেখে প্রথম জানতে পারেন। তার বিরুদ্ধে যে এরকম অভিযোগ আনা হয়েছে, সেটা তার আগে জানা ছিল না। ফেসবুকে আদালতের অবমাননা হয়, এমন কোন পোস্ট দেওয়ার কথাও অস্বীকার করছেন তিনি।
আকন্দ দাবি করছেন, করোনাভাইরাস মহামারির আগে পর্যন্ত তার কোন ফেসবুক একাউন্ট ছিল না, এমনকি কোন স্মার্টফোনও ছিল না। এখন যেহেতু ভার্চুয়াল আদালত চালু হয়েছে, তাই তিনি একটি স্মার্টফোন নিয়েছেন এবং কয়েকমাস আগে একটি ফেসবুক একাউন্টও খুলেছেন। সেখানে তিনি মাঝে মধ্যে নানা পোস্ট দিয়েছেন, কিন্তু সেখানে আদালত অবমাননার মতো কিছু ছিল বলে তিনি মনে করতে পারছেন না।
তবে, তিনি জানিয়েছেন, তিনি বরং বাংলাদেশে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং আইনের শাসনের জন্যই সোচ্চার ছিলেন। আকন্দ এও জানিয়েছেন, তিনি আদালতে যাবেন, এবং সেখানে গিয়ে তার বক্তব্য তুলে ধরবেন।