|| বার্তা সারাবেলা ||
দিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে নিতে আসছে দুই বছরের রোডম্যাপ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে প্রতিবেশীসূলভ সম্পর্কের পূনর্গঠন চাইলেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা।
বেশ কিছু বিষয় নিয়ে বিশেষ করে ভারতের নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন (সিএএ), ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেন, ও রোহিঙ্গা ইস্যূ এবং সর্বোপরি বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নখাতে চীনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি নিয়ে যখন কিনা দুই দেশের সম্পর্কের এক প্রকার টানাপড়েন চলছে ঠিক তথনই ভারতের দিক থেকে এমন চাওয়া জানানো হলো।
এরআগে দুই দেশের সচিব পর্যায়ের বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের যে কোন শীতলতা বা অস্বস্তি নাকচ করে দিয়ে বলা হয়েছে, এ ধরণের কোন আলোচনাই ঠিক নয়।
কথা হলো দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সাম্প্রতিক অস্বস্তি নিয়ে
গেল মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের ক্ষোভ-সংক্ষোভ নিয়েও কথা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার বৈঠকে।
উল্লেখ্য, করোনা সংক্রমণের কারণে শেষপর্যন্ত ঐ সফর বাতিল হলেও একে কেন্দ্র করে দুই দেশের জনসম্পর্কে যে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে তা নিয়েও কথা হয় দু’পক্ষের মধ্যে।
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের এমন টানাপড়েন কাটাতে ভারত অবশ্য ইতোমধ্যেই প্রকাশ্যে এবং দ্বিপক্ষীয় পর্যায়ে নিজেদের মধ্যে উন্নয়ন অংশীদারিত্বকে সামনে নিয়ে আসার প্রয়াস নিয়েছে।
ভারতের সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে বেশ কতক উন্নয়ন প্রকল্প নিয়েও কথা হয়েছে। যেগুলো আসছে বছরে শুরু হবে। দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি ও শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর ধারাবাহিকতায় দুই দেশের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠানের কথাও জানান ভারতীয় কর্মর্কর্তারা।
খুব শিগগিরই দুই দেশের যৌথ পরামর্শক কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে ভারতীয় কর্মকর্তারা এও জানান, ঐ বৈঠকের ফাঁকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবুল মোমেনের সঙ্গে কথা বলবেন।
প্রসঙ্গত, গেল কয়েক মাসের ব্যবধানে দুই দেশের অভ্যন্তরিন নৌ প্রটোকলে ত্রিপুরা রাজ্যকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। চালু করেছে কার্গো ফেরি সার্ভিস, বাংলাদেশকে দিয়েছে বেশ কয়েকটি রেল লোকোমোটিভ।
এছাড়াও প্রতিবেশীদের প্রতি ভারতের প্রতিশ্রুতির নজির হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে স্থগিত হয়ে থাকা ১৩২০ মে.ওয়াট খুলনা থার্মাল প্লান্ট ও আখাউড়া-আগরতলা রেল সংযোগ কার্যক্রম চূড়ান্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভারতের উন্নয়ন বাজেটের ২৮ শতাংশ বাংলাদেশের উন্নয়নে দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে ভারতীয় কর্মকর্তারা জানান, এই আর্থিক অঙ্কে এই পরিমান প্রায় দশ বিলিয়ন ডলার। এছাড়াও করোনা মহামারিতে বন্ধ হয়ে যাওয়া দুই দেশের মধ্যে বিমান চলাচল ফের শুরু করবার বিষয়ে শিগগিরই আলোচনা হবে বলেও জানান তারা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে শ্রিংলার বৈঠকে ভারতের সিএএ নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের ক্ষোভ-সংক্ষোভ কিংবা বাংলাদেশে চীনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতির বিশেষ করে তিস্তা প্রকল্পে চীনের অর্থায়নের মত স্পর্শকাতর বিষয়ে কোন কথা হয়নি নিশ্চিত করেন ভারতীয় কর্মকর্তারা। তারা এও জানান, নয়া দিল্লি ও ঢাকার মধ্যকার ‘দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক’ এতোটাই সৌহার্দ্যপূর্ণ যে, এতে অন্য কোন কারো সুবিধা নেবার জায়গা নেই।
সচিব পর্যায়ের বৈঠক
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলার সঙ্গে বৈঠক শেষে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, নানা আলোচনার বিপরীতে দুই দেশের ”ভাল সম্পর্কের” বিষয়টিকে মূলধারার সংবাদমাধ্যমে নিয়মিত তুলে ধরার ব্যাপারে তারা একমত হয়েছেন।
আর ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেছেন, দুই দেশের মধ্যে এখন যে সম্পর্ক রয়েছে তা আগের যে কোন সময়ের তুলনায় ভাল। তিনি বর্তমান সম্পর্ককে ”সোনালি অধ্যায়” হিসাবে বর্ণনা করেন।
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে ঢাকায় দুই দিনের আকস্মিক সফরে এসে শ্রিংলা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। তাকে পৌঁছে দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বার্তা। তবে সেই বার্তার ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি কোন তরফ থেকে।
তথ্যসূত্র: দ্য হিন্দু ও বিবিসি