|| আদালত প্রতিবেদক, সংবাদ সারাবেলা ||
বাসচাপায় পা হারিয়ে আরও ২০ লাখ টাকা পেল সেই রাসেল। রাজধানীর মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে ২০১৮ সালের ২৮শে এপ্রিল গ্রিন লাইন পরিবহনের ধাক্কায় ব্যক্তিগত গাড়িচালক রাসেল সরকারের বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার ক্ষতিপূরন দেবার আদেশ দেন। একইসঙ্গে আগামী ৩ মাসের মধ্যে এই পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করতে গ্রিনলাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষকে নিদেশ দেওয়া হয়েছে।
রায় ঘোষণার দিন আদালতে গ্রিনলাইন কর্তৃপক্ষের হয়ে আইনী লড়াইয়ে ছিলেন শাহ মঞ্জুরুল হক আর রিটকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খন্দকার শামসুল হক রেজা ও জহির উদ্দিন লিমন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার ও সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল এম সাইফুল আলম।
আদালত বেরিয়ে এসে গ্রিন লাইনের আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, “আদালত বললেন, আপনারা একটা সম্মত অর্থের পরিমাণ বলুন। আমি আদালতকে বললাম আগে প্রায় ১৩ লাখ ২৮ হাজার টাকা দিয়েছি। এর বাইরে আমি ১৫ লাখ টাকার কথা বলেছিলাম। তখন আদালত বললেন গ্রিনলাইনতো ১৫ লাখ টাকা দিতে রাজি। তাহলে এটার সঙ্গে আরও ৫ লাখ টাকা যোগ করে মোট ২০ লাখ টাকা দেবেন।”
“তিন মাসের মধ্যে আদালত এ টাকা দিতে বলেছেন। মোটামুটি একটা সম্মত রায়। মানবিক কারণে আমরাও সম্মত হয়েছি। যেহেতু সে পা হারিয়েছে। তাকে একটা ক্ষতিপূরণ দেওয়া দরকার।”
রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন কি না জানতে চাইলে শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, “আমরা আপিল করবো না। সম্মত জাজমেন্ট। আমরা রাজি হয়েছি। আমরা মানবিক কারণেই রাজি হয়েছি।”
রিটকারীরর আইনজীবী খন্দকার শামসুল হক রেজা বলেন, এরআগে গ্রিনলাইন কর্তৃপক্ষ ১০ লাখ টাকা দিয়েছে। চিকিৎসা খরচ দিয়েছে তিন লাখ ৪২ হাজার টাকা । করোনা পরিস্থিতিসহ অন্য সবদিক বিবেচনা করে, আাদলত আগামী ৩ মাসের মধ্যে সবশেষ নির্দেশিত ২০ লাখ টাকা পরিশোধ করতে বলেছেন।”
গ্রিনলাইন পরিবহনের আইনজীবীর অ্যাডমিশনের ভিত্তিতেই এটা হয়েছে বলেও জানান খন্দকার শামসুল হক।
এর আগে গত ৫ই মার্চ বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে হাইকোর্ট রায়ের জন্য ১৫ই এপ্রিল দিন ঠিক করেছিলেন। এর মধ্যে মহামারি করোনা আসায় আদালত বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া এ বেঞ্চও পুনর্গঠন করা হয়। পরে রায়ের জন্য এটি উক্ত বেঞ্চের কার্যাতালিকায় আসে। এরপর আদালত রায়ের জন্য ১লা অক্টোবর দিন ঠিক করেন।
উল্লেখ, রাজধানীর মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে ২০১৮ সালের ২৮শে এপ্রিল গ্রিন লাইন পরিবহনের ধাক্কায় ব্যক্তিগত গাড়িচালক রাসেল সরকারের বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ ঘটনায় গাইবান্ধা-৩ (সাদুল্যাপুর-পলাশবাড়ী) আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি রাসেলের পক্ষে ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিট আবেদন করেন। এটি আমলে নিয়ে হাইকোর্ট ওই বছরের ১৪ই মে রুল দেন। যেখানে কেন রাসেলকে এককোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়।
পরে আবেদন শুনানি করে হাইকোর্ট এক আদেশে রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেন। এই অর্থ প্রতিমাসে ৫ লাখ টাকা করে দিতে বলা হয়। এই নির্দেশের পর চিকিৎসাসহ এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ টাকা দিয়েছে গ্রিনলাইন কর্তৃপক্ষ। পরে গ্রিনলাইনের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত বছরের ১৩ই অক্টোবর রাসেল সরকারকে টাকা (পরিশোধের অর্থ বাদ যাবে) দেওয়ার আদেশ স্থগিত করেন আপিল বিভাগ। তবে পরিশোধের অর্থ বাদ দেওয়ার পর বাকি যা থাকবে তার ওপর হাইকোর্টের রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এ স্থগিতাদেশ থাকবে। এরপর হাইকোর্টে রুল শুনানি শুরু হয়।