কয়েকজন মিলে বললেই করতে হবে, তা কিন্তু নয়

“সমস্ত ঘটনাপ্রবাহ সাক্ষ্য দেয় মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে শুরু করে এবং পরবর্তী জিয়াউর রহমানের কর্মকাণ্ড সাক্ষ্য দেয়, তিনি আসলে মুক্তিযোদ্ধার ছদ্মবেশে পাকিস্তানিদের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন। সেই কারণেই জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের প্রসঙ্গ এসেছে।”

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল দাবি প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী

|| সারাবেলা প্রতিবেদন ||

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল দাবিতে নাগরিক সমাজের আল্টিমেটাম সম্পর্কে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, “বাংলাদেশে বহু নাগরিক আছে, শুধু কয়েকজন মিলে দাঁড়িয়ে বললে সেটিই করতে হবে- তা কিন্তু নয়।” বৃহস্পতিবার দুপুরে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী একথা বলেন।

কারাগারে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর প্রতিবাদ এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে বুধবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করে আগামী ২৬শে মার্চের মধ্যে নাগরিক সমাজের ব্যানারে এই আইন বাতিলের আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছে। সমাবেশশেষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা কর্মসূচি থেকে বলা হয়, ২৬শে মার্চের মধ্যে ওই ‘কালো ও নিবর্তনমূলক’ আইন বাতিল করা না হলে ‘কঠোর আন্দোলন’ গড়ে তোলা হবে।

সাংবাদিকরা এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “নাগরিক বলতে শুধু  কয়েকজন যারা বক্তৃতা করেছেন, যারা সব সময় সরকারের বিরুদ্ধে বক্তৃতা করেন- তাদেরকে বোঝায় না। বাংলাদেশে আর বহু সুশীল সমাজের প্রতিনিধি আছেন- হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ, আরও বহু নাগরিক আছেন।”

মানুষকে ডিজিটাল নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “যখন এই ডিজিটাল বিষয়টা ছিল না, তখন আইনের প্রয়োগও ছিল না। যখন ডিজিটাল বিষয়টা এসেছে, তখন ডিজিটাল নিরাপত্তার বিষয়টাও এসেছে।”

এ ধরনের আইন ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আছে জানিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, “এ আইনের বলে সেখানেও শাস্তি হচ্ছে এবং গ্রেফতার হচ্ছে। তবে এই আইনের যাতে অপপ্রয়োগ না হয়, সেজন্য আমরা সতর্ক আছি এবং থাকব।”

করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে গত বছরের ৬ই মে মুশতাককে তার লালমাটিয়ার বাসা থেকে গ্রেফতার করার পর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। পরে অভিযোগপত্র দেওয়া হলে সেখানেও তাকে আসামি করা হয়। গত দশ মাসে কয়েকবার আবেদন করেও জামিন পাননি মুশতাক।

এরই এক পর্যায়ে গত ২৫শে ফেব্রুয়ারি রাতে গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে মারা যান ৫৩ বছর বয়সী মুশতাক। তবে কীভাবে তার মৃত্যু হল, সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষের স্পষ্ট কোনো বক্তব্য না আসায় সন্দেহ প্রকাশ করেন অনেকে।

পেশায় ব্যবসায়ী মুশতাক অনলাইনে লেখালেখিতে বেশ সক্রিয় ছিলেন। তার সঙ্গে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, রাষ্ট্রচিন্তা সংগঠনের দিদারুল ভূইয়াও এ মামলার আসামি।

মুশতাকের মৃত্যুর পর থেকেই প্রতিবাদ হচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি নতুন করে জোরালো হয়ে উঠেছে।

কারাগারে বন্দি অবস্থায় মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনাকে ‘মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন’ হিসেবে বর্ণনা করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, “কোনো আইনের বলে যদি কেউ গ্রেফতার হয় এবং তিনি যদি কারাগারে কোনো কারণে মৃত্যুবরণ করেন, তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয় বা কোনো কারণে মৃত্যু হয়। আর সেই আইন যদি তাহলে বাতিল করতে হয়, তাহলে তো বাংলাদেশে সব আইন বাতিল করার কথা আসে। কারণ অন্যান্য আইনেও মানুষ গ্রেফতার হয় এবং কারাগারে নানা কারণে মৃত্যু হয়। তাহলে সেসমস্ত আইনও বাতিল করে দিতে হবে?”

জিয়াউর রহমানের ‘বীর উত্তম’ খেতাব বাতিলের উদ্যোগ নিয়ে আরেক প্রশ্নের উত্তরে তথ্যমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের সময় সেক্টর কমান্ডার ছিলেন বটে, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সময় তার ভূমিকা ‘রহস্যজনক’ ছিল। যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেছেন, তারা জানেন কোন মুক্তিযোদ্ধাকে কারো বাড়িতে পানি খাওয়ানো হয়েছে; সেই কারণে সেই বাড়ির উপরে নির্যাতন হয়েছে। কোনো মুক্তিযোদ্ধাকে এক বেলা ভাত খাওয়ানো হয়েছে কিংবা বাড়িতে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে, যখনই পাকিস্তানি বাহিনী,  তাদের দোসর রাজাকাররা এমন তথ্য পেয়েছে, সেই বাড়ির উপর নির্যাতন হয়েছে বাড়ির সদস্যদের ধরে নিয়ে গিয়েছে, হত্যা করেছে। জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের সময় একটি সেক্টরের কমান্ডার, আর উনার স্ত্রী আর পুত্ররা পাকিস্তানিদের ক্যান্টনম্যান্টে আশ্রয় পেলেন- এটা কিভাবে সম্ভব?”

বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গেও জিয়াউর রহমান ‘ওতপ্রোতভাবে যুক্ত ছিলেন’ বলে মন্তব্য করেন হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর হত্যাকারীদের ‘পুনর্বাসিত’ করেছেন জিয়া। যারা বাংলাদেশ চায়নি, পাকিস্তানিদের পক্ষ হয়ে গণহত্যা করেছে, তাদেরকে তিনি শুধু পুনর্বাসিত করেননি, তাদেরকে তিনি মন্ত্রীও বানিয়েছেন।”

তথ্যমন্ত্রী বলেন, “সমস্ত ঘটনাপ্রবাহ সাক্ষ্য দেয় মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে শুরু করে এবং পরবর্তী জিয়াউর রহমানের কর্মকাণ্ড সাক্ষ্য দেয়, তিনি আসলে মুক্তিযোদ্ধার ছদ্মবেশে পাকিস্তানিদের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন। সেই কারণেই জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের প্রসঙ্গ এসেছে।”

সংবাদ সারাদিন