|| বাসস, ঢাকা ||
মুজিব বর্ষ উপলক্ষে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ঢাকায় নির্মিত ফ্ল্যাট এবং বস্তিবাসীর জন্য মিরপুরে নির্মিত স্বল্প ভাড়াভিত্তিক ফ্ল্যাট উদ্বোধন ও হস্তান্তর করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ মঙ্গলবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি অংশ নেন সরকারপ্রধান।
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আজিমপুর সরকারি কলোনি, মিরপুর ৬ নম্বর সেকশন, মালিবাগ ও মতিঝিলে ২ হাজার ৪৭৪টি ফ্ল্যাট–সংবলিত ৫টি আবাসন প্রকল্প এবং বস্তিবাসীর জন্য মিরপুরে নির্মিত ৩০০টি ভাড়াভিত্তিক ফ্ল্যাট উদ্বোধন ও হস্তান্তর করা হয়। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে মাদারীপুরে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের নির্মিত সমন্বিত অফিস ভবনও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় মুজিব বর্ষে দেশের সব গৃহহীনকে অন্তত একটি ঘর প্রদানে তাঁর অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাংলাদেশ, যে দেশের প্রত্যেকটি মানুষ সুন্দর ও উন্নত জীবন পাবেন। কিন্তু, আমি জানি, জাতির পিতা বেঁচে থাকলে দেশ স্বাধীন হওয়ার ১০ বছরের মধ্যেই দেশের মানুষ উন্নত জীবন পেত। প্রত্যেকটি গ্রাম ও ওয়ার্ড-ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত উন্নত হতো। সে কাজটাই আমরা এখন করে যাচ্ছি।’
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে কয়েকজন বস্তিবাসীর মধ্যে ফ্ল্যাটের বরাদ্দপত্র হস্তান্তর করেন। তিনি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার স্বাগত ভাষণ দেন। অনুষ্ঠানে প্রকল্পগুলোর ওপর ভিডিওচিত্র পরিবেশিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী ঢাকা শহরে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসনব্যবস্থা মাত্র ৮ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশে উন্নীত করার জন্য নির্দেশনা দেন। যে কারণে ঢাকার আজিমপুর, মতিঝিল, মিরপুর, মালিবাগ এলাকায় ৩২টি ভবনে ২ হাজার ৪৭৪টি ফ্ল্যাট নতুনভাবে সরকারি আবাসনে যোগ হলো। ফলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসনব্যবস্থা ২৪ শতাংশে উন্নীত হলো।
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আজিমপুর সরকারি কলোনিতে রয়েছে ১৭টি ২০ তলা ভবনে ১ হাজার ২৯২টি ফ্ল্যাট, মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনে ২৮৮টি ফ্ল্যাট, মালিবাগে ৪টি ২০ তলা ভবনে ৪৫৬টি ফ্ল্যাট এবং মতিঝিলে ৫টি ২০ তলা ভবনে ৩৮০টি ফ্ল্যাট।
প্রতিটি এক হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাটে এবং ভবন এলাকায় মুক্ত বাতাস চলাচল নিশ্চিতকরণে ভেন্টিলেটরসহ ক্রস ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বাথরুম ও টয়লেট আলাদা নির্মাণ করে সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়েছে। অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থাসহ অগ্নি–দুর্ঘটনাকালে প্রতিটি ফ্ল্যাটের বারান্দায় গ্রিলে জরুরি নির্গমনব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
প্রায় ৭০ ভাগ উন্মুক্ত স্থানসংবলিত সরকারি এই হাউজিং প্রকল্পগুলোতে খেলার মাঠ, সবুজায়ন, ওয়াটার বডি বা পুকুর, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণব্যবস্থা ও সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের (এসটিপি) সংস্থান রাখা হয়েছে।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি হিসেবে সোলার প্যানেল ও বিদ্যুৎসাশ্রয়ী বৈদ্যুতিক ফিটিংস যন্ত্রপাতি লাগানো হয়েছে। প্রকল্পগুলো পরিবেশবান্ধব ও সবুজ প্রকল্প হিসেবে গড়ে উঠেছে।
এ ছাড়া উদ্বোধনের তালিকায় ছিল রাজধানীর তেজগাঁওয়ে আটতলার দুটি আবাসিক ভবন। এগুলো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
রাজধানীর মিরপুরে বস্তিবাসীর জন্য ১৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে বহুতল ভবনে ৫৩৩টি আধুনিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। আজ যার ৩০০টি ফ্ল্যাট হস্তান্তর করা হলো।
বস্তির ঝুপড়িঘরের সমান বা তার চেয়েও কম ভাড়ায় এসব আধুনিক ফ্ল্যাটে থাকতে পারবে বস্তিবাসী। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী ২০১৭ সালের ২৬ অক্টোবর বস্তিবাসীর জন্য ভাড়াভিত্তিক আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেন। সে অনুযায়ী, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের নিজস্ব অর্থায়নে মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনের বাউনিয়া বেড়িবাঁধ এলাকায় ছয় বিঘা জমির ওপর বস্তিবাসীর জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত ১৪তলাবিশিষ্ট ৩টি ভবনে ভাড়াভিত্তিক ৩০০টি ফ্ল্যাটের নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এখানে অন্য ২টি ভবনে আরও ২৩৩টি ফ্ল্যাটের নির্মাণকাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
প্রতিটি ভবনে রয়েছে কমিউনিটি হল, দুটি লিফট ও প্রশস্ত সিঁড়ি, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা, ৪০ কেভিএ জেনারেটর, ২৫০ কেভিএ সাবস্টেশন, প্রশস্ত ওয়াকওয়ে ও সৌন্দর্যবর্ধনের লাইটিংসহ আধুনিক সুবিধা।
প্রতিটি ৬২০ থেকে ৭১৯ বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাটে রয়েছে দুটি করে বেডরুম, একটি বারান্দা, একটি ড্রয়িং রুম, বেসিন, রান্নাঘর ও দুটি বাথরুম। ফ্ল্যাটের দুই পাশে ফাঁকা জায়গা। ফ্ল্যাটগুলো টাইলস করা।
প্রতিটি ভবনের নিচতলা বরাদ্দপ্রাপ্তদের সাধারণ ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। এ প্রকল্পে সবুজায়ন ও শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার জন্য ভবনের সামনে ফাঁকা জায়গা রাখা হয়েছে।
এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বস্তিবাসীরা যুক্তিসংগত ভাড়ায় একটি আধুনিক ফ্ল্যাটে বসবাসের সুযোগ পাবে। এতে স্থানীয় পরিবেশসহ তাদের জীবনমানের উন্নতি ঘটবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করছেন। এসব ফ্ল্যাটে মাসিক, সাপ্তাহিক এমনকি দৈনিক স্বল্প ভাড়ায় বাসিন্দারা থাকার সুযোগ পাবেন।
ক্রমহ্রাসমান কৃষিজমির কথা বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী বহুতলবিশিষ্ট সমন্বিত সরকারি অফিস ভবন নির্মাণের ধারণা দেন, যাতে জেলা শহরগুলোতে একই ছাদের নিচে দ্রুততম সময়ে সরকারি সেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। সে অনুযায়ী মাদারীপুরে আজকে উদ্বোধন হওয়া একটি ১০তলা ভবন ছাড়াও গণপূর্ত অধিদপ্তর গোপালগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ জেলায় এমন সমন্বিত অফিস ভবন নির্মাণ করছে।
১৯৯৭ সালে আশ্রয়ণ প্রকল্প শুরু হওয়ার পর হতে ২০২১ সালের জুন মাস পর্যন্ত (মুজিব বর্ষের গৃহসহ) ৪ লাখ ৪২ হাজার ৬০৮টি ভূমিহীন-গৃহহীন-ছিন্নমূল-অসহায় পরিবারকে গৃহ দেয়া হয়েছে। আর ১৯৯৬ সাল থেকে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সরকার এ পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ পরিবারকে বাসস্থানের ব্যবস্থা করেছে।