করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির মধ্যেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে দেশের সংসদীয় দুই আসনে উপনির্বাচন। দুটি আসনেই আজ কেন্দ্রগুলোতে কম ভোটার উপস্থিতি দেখা গেছে। তবে কারচুপি ঠেকাতে ভোট নেওয়া হচ্ছে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন ইভিএম। আসন দুটি হচ্ছে রাজধানীর ডেমরা, যাত্রাবাড়ী ও কদমতলীর খানিকটা এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-৫ এবং রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলা নিয়ে গঠিত নওগা-৬। একটানা ভোট নেওয়া হবে বিকাল ৫টা পর্যন্ত।
ঢাকা-৫ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপিসহ পাঁচটি রাজনৈতিক দল। নওগাঁ-৬ আসনে জনপ্রতিনিধি হওয়ার এই ভোটদৌড়ে অংশ নিয়েছে তিন দলের প্রার্থী। তবে ভোট নিয়ে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দল ও তাদের একনিষ্ঠ সমর্থকদের মধ্যে তৎপরতা থাকেলেও যারা নির্বাচন করবেন সেই ভোটারদের নেই তেমন কোন আগ্রহ।
তবে নির্বাচন কমিশন বলছে, করোনা ঝুঁকি এড়াতে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ভোট নেওয়ার যাবতীয় ব্যবস্থা তারা করেছেন। শুক্রবারই কেন্দ্রে কেন্দ্রে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন এবং অন্যান্য সরঞ্জাম পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
কারচুপি ও ভোট জালিয়াতি ঠেকাতে প্রতিটি ভোটকক্ষে রয়েছে একটি করে ইভিএম। আর সেটি দেখভার করবার জন্য থাকছে কারিগরি দল। করোনাভাইরাস সুরক্ষাতো থাকছেই। সুরক্ষার বার্তাসমেত ব্যানারও টাঙানো হয়েছে কেন্দ্রের বাইরে। ভোট সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে যথারীতি রয়েছে আইন শৃংখলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা।
ঢাকার উপ নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা জি এম সাহতাবউদ্দিন বলেন, “ভোটের জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। শেষ মুহূর্তে কারো কাছ থেকে লিখিত কোনো অভিযোগ পাইনি। আইন শৃঙ্খলাবাহিনী মাঠে রয়েছে। আশা করি, শান্তিপূর্ণ ভোট হবে।”
আর নওগাঁর উপ নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান বলেন, “স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভোটের সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ভোটকক্ষের জন্য অতিরিক্ত ইভিএমও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কোনোভাবে কেনো কক্ষে ত্রুটি বা সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে তা রিপ্লেস করা বা ত্রুটিমুক্ত রাখার বিষয়ে প্রস্তুতি রয়েছে আমাদের।”
আইনশৃংখলা ও নিরাপত্তা
আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে ঢাকা-৫ নির্বাচনে ১৫ অক্টোবর থেকে দুজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ১৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আগামী ১৯ অক্টোবর ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন।
একই সময়ে একই সংখ্যক জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন নওগাঁ-৬ উপনির্বাচনে। ২ আসনেই বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচার শেষ হয়েছে। শুক্রবার মধ্যরাত থেকে শনিবার মধ্যরাত পর্যন্ত কিছু গণপরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। মোতায়েন করা হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাড়তি সদস্য।
নির্বাচন কমিশন সূত্রের দাবি গত ২১শে মার্চ ঢাকা-১০ আসনের উপ নির্বাচনে ভোট পড়েছিল মাত্র ৫ শতাংশ। তবে মহামারীর মধ্যে হয়ে যাওয়া এরআগে অনুষ্ঠিত ঢাকার বাইরে প্রচলিত পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত উপ নির্বাচনে ৫৫ থেকে ৬৫ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে দাবি কমিশনের। সে কারণে এবার দুই উপ নির্বাচনে ইভিএমে ভোটের হার কেমন হয় তা নিয়ে নজর থাকবে পর্যবেক্ষকদের।
ভোটার উপস্থিতি কম হওয়া প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা বলেছেন, সাত মাস আগে অনুষ্ঠিত ভোটে ইসির ‘যথেষ্ট প্রস্তুতি’ ছিল। কিন্তু করোনা নিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ও নেতিবাচক প্রভাবের কারণে উপস্থিতি কম হয়। এবারে অবশ্য পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক থাকায় ভোটাররা কেন্দ্রে আসবেন বলেই আশা করছেন তিনি।
যদিও নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়াতে অংশগ্রহনকারী দলগুলোর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রতিযোগিতা থাকাকে অন্যতম শর্ত জাানিয়ে সিইসি বলেন, “মাঠে ব্যাপকভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন না হলেই ভোটাররা তাতে আগ্রহ দেখায় না।” ভোটারদের কেন্দ্রে না আসার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকেই দায়ী করেছেন তিনি।
ঢাকা-৫ উপ নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার জি এম সাহতাবউদ্দিনেরও বিশ্বাস, শনিবারের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ‘তুলনামূলকভাবে বাড়বে’। ভোটারদের কেন্দ্রে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “উৎসবমুখ পরিবেশে ভোট দেবেন। নিরাপত্তা বলয় সাজিয়েছি। আইনানুগ, গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। কেন্দ্রে আসবেন, পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বিঘ্নে বাসায় ফিরে যাবেন।”
ঢাকা-৫ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের কাজী মনিরুল ইসলাম, বিএনপির সালাহউদ্দিন আহমেদ ও জাতীয় পার্টির মীর আব্দুস সবুর। অন্যদিকে নওগাঁ-৬ আসনের উপ নির্বাচনে (বাঁ থেকে) আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ মো. রেজাউল ইসলাম ও বিএনপির মো. আনোয়ার হোসেন হেলাল।
সংসদীয় আসন ঢাকা-৫
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪৮, ৪৯, ৫০, ৬০, ৬১, ৬২, ৬৩, ৬৪, ৬৫, ৬৬, ৬৭, ৬৮, ৬৯ ও ৭০ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এ আসন সাংসদ হাবিবুর রহমান মোল্লার মৃত্যুতে শূন্য হয়। এতে ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৭১ হাজার ১২৯ জন। ভোটকেন্দ্র ১৮৭, ভোটকক্ষ ৮৬৪টি।
সংসদীয় আসন নওগা-৬
রাণীনগর উপজেলা ও আত্রাই উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসন সাংসদ ইসরাফিল আলমের মৃত্যুতে শূন্য হয়। এই আসনটিতে ভোটার ৩ লাখ ৬ হাজার ৭২৫ জন। ভোটকেন্দ্রে- ১০৪, ভোটকক্ষ ৭২১
প্রাথীরা যা বলছেন
ঢাকা-৫ আসনের উপ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কাজী মনিরুল ইসলাম বলেন, “আমি সব ভোটারের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেছি, আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করার আহ্বান জানিয়েছি। আশা করি আমি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হব।”
তবে বিএনপির প্রার্থী সালাউদ্দিন আহমেদে ইতোমধ্যে ইসিতে গিয়ে তার প্রচারে বাধার অভিযোগ এবং ভোটের দিন দলীয় এজেন্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “প্রচার চালাতে গিয়ে বারবার হামলা, গাড়ি ভাংচুর, নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে হামলাসহ নানারকম বাধাবিপত্তির মুখোমুখি হতে হয়েছে। লিখিত ও মৌখিকভাবে জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি।”
নিজ নির্বাচনী এলাকার ভোটার না হওয়ায় শনিবার ভোট দিতে পারছেন না বিএনপির প্রার্থী সালাউদ্দিন আহমেদ। তবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী কাজী মনিরুল ইসলাম সকালেই আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে নিজের ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন।
রিটার্নিং অফিসার সাহতাব উদ্দিন প্রার্থীদের সব ধরনের অভিযোগ আমলে নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন। দনিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজে ঢাকা-৫ আসনের রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে ফল ঘোষণা করা হবে।
যানবাহন চলাচলে কড়াকড়ি
ইসির জনসংযোগ পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান জানান, ভোট ঘিরে যানবাহন চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ করে ইতোমধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে শনিবার রাত ১২টা পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি শুক্রবার রাত ১২টা থেকে শনিবার রাত ১২টা পর্যন্ত ট্রাক ও পিকআপ চলাচল করতে পারবে না।এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার জন্য জেলা প্রশাসক এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্তৃপক্ষকে ক্ষমতা দিয়েছে ইসি। তবে রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতি সাপেক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী/তাদের নির্বাচনী এজেন্ট এবং দেশি/বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ক্ষেত্রে এ কড়াকড়ি শিথিল করা যাবে।
এছাড়া নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত সাংবাদিক, ভোটের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, নির্বাচনের বৈধ পরিদর্শক এবং অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ডাক, টেলিযোগাযোগের যানবাহন নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে না। জাতীয় মহাসড়কে চলাচলরত এবং বন্দর ও জরুরি পণ্য সরবরাহে নিয়োজিত যানবাহনের ক্ষেত্রেও প্রয়োজনে এ নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা যাবে।