|| সারাবেলা প্রতিনিধি, ভালুকা(ময়মনসিংহ) ||
ময়মনসিংহের ভালুকায় পঞ্চম শ্রেণীর স্কুল ছাত্রীকে নিজ বাসগৃহে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মৃত খোরশেদ আলমের ছেলে মো. সফি মিয়া (৪০) নামে এক মাছ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় বুধবার (৩ জুন) স্কুল ছাত্রীর মামা মো. লিটন (৩০) নিজে বাদী হয়ে ভালুকা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলা সূত্রে জানাযায়, গত সোমবার ১৮মে সকাল ৯:৩০টার দিকে ভালুকা উপজেলার ডাকাতিয়া ইউনিয়নের হিজুলীপাড়া নিজ বসত বাড়ীতে বাদীর ভাগনী মোছাঃ নদী আক্তার (১১) কে বিবাহের প্রলোভন দেখিয়ে স্থানীয় মাছ ব্যাবসায়ী সফি মিয়া(৪০) জুরপূর্বক ধর্ষণ করে।
বাদীর দেয়া তথ্যমতে আরও জানা যায়, বাদী স্থানীয় মৃত আমছর আলীর ছেলে মোঃ লিটন (৩০) টাঙ্গাইল জেলার কালীহাতী থাকিয়া শাড়ীর কাজ করে। বাদীর বোনের বিবাহ হয়েছিল ময়মনসিংহ জেলার চূরখাই এলাকায়। আনুমানিক ৯বছর পূর্বে তার বোন হেলেনা মারা যাওয়ার পর তার মায়ের কাছে একমাত্র ভাগনী নদী আক্তার থাকতো।
বাদী বাড়ীতে না থাকার সুযোগে ধর্ষণকারী গত ১বছর যাবৎ বিভিন্ন সময়ে নানীর জন্য কিছু মাছ ও নদীর জন্য মুখরুচক খাবার নিয়া এসে মন ভুলানোর প্রলোভন দেখিয়ে প্রথম দিকে ধর্ষণের চেষ্টা করতো। পরে ঐ বাড়িতে থেকে গভীর রাতে ধর্ষণ করত এবং মেয়েটির কান্নার আওয়াজ প্রায়ই এলাকার কিছু লোক শুনতে পেত কিন্তু প্রথমে তারা ঘটনা বুঝে উঠতে পারেনি।
কিন্তু পরবর্তীতে নদীর হঠাৎ তিন মাসের অন্ত্বসত্তা হওয়ার সংবাদ এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে লোকমুখে কানাঘোষা শুরু হয়। এবং অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি হঠাৎ নদীর বমি শুরু হলে নদীর নানী তাকে স্থানীয় হিজুলী পাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়ে গেলে ক্লিনিকের কর্তব্যরত ডাক্তার প্রথমে বুঝতে পেরে স্থানীয়দের অবহিত করেন।
স্থানীয় জয়াহের আলী, হায়দার আলী, ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম জানান, নদী তিন মাসের গর্বভতী ছিল এ বিষয়টি পুরু এলাকায় লোকমুখে আলাপচারীতা শুরু হয়েছে এবং সফি স্থানীয় ২ নং ওয়ার্ড মেম্বার আব্দুল হাইকে ৭০ হাজার টাকা দিয়ে তার সহযোগীতায় নদী ও তার নানীকেও টাকার প্রলোভন দেখিয়ে প্রথমে নদীর বাবার বাড়ী চূরখাই নিয়ে যায় বিষয়টি আড়ালে সমাধান করার জন্য।
বাদী আরও জানায়, চূরখাইয়ের স্থানীয় মেম্বার নয়ন মিয়া বিষয়টি সমাধান না করে ২০ হাজার টাকা সফির কাছ থেকে নিয়ে তাকে পালাতে সহযোগিতা করে। তবে এ বিষয়টি মেম্বার অস্বীকার করেন। পরে তিনি তার ভাগনী ও মাকে ভালুকা মডেল থানায় নিয়ে এসে ঘটনার বিবরণ থানায় লিখিত অভিযোগের মাধ্যমে অবহিত করেন।
ডাকাতিয়া ইউনিয়নের ১,২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার লাইলী বেগম বলেন, ঘটনার সময় তিনি তিন দিন বাড়িতে ছিলেন না। বাড়িতে এসে সফি ও নদীর বিষয়টি এলাকায় লোকজনের কাছে শুনে ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামকে অবহিত করেন। পরে জানতে পারেন আব্দুল হাই মেম্বার বিষয়টি সমাধানের জন্য শফিকুলের পরিবার থেকে ৭০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছে।
এ ব্যাপারে ডাকাতিয়া ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম জানান, তিনি বিষয়টি জানার পর প্রথমে নদীর মামা ও পরে ভালুকা মডেল থানায় অবহিত করে নদী ও তার নানীকে উদ্ধার করে থানায় মামলা করার সহযোগিতা করেন। মেয়েটি বর্তমানে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসারত আছে বলে জনান।
ডাকাতিয়া সামালিয়া পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জুবাইদা খাতুন বলেন, নদী তাদের বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী, এবং তিনি বিষয়টি অবহিত আছেন।
এ ব্যাপারে ধর্ষণকারীর পরিবারের সাথে কথা বললে, ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন।
ভালুকা মডেল থানা অফিসার ইন চার্জ মাহমুদুল ইসলাম জানান, ধর্ষণ করার অপরাধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৯(১) ধারায় ৫/২৫৬ নং মামলা হয়েছে এবং আসামি গ্রেফতার করে কোর্টে প্রেরণ করা হয়েছে।
এবং ভিকটিমের ধর্ষণের আলামত ও প্রেগন্যান্সি পরীক্ষা সহ মেডিকেলের রিপোর্ট আসলে মামলার চার্জশিট দাখিল করা হবে।