পুলিশের হস্তক্ষেপে প্রেমিকাকে বিয়ে করতে বাধ্য হলেন কলেজ শিক্ষক

মিডিয়া উইং প্রাথমিকভাবে তার পাশে থাকার আশ্বাস দেয়। তাকে ইতিবাচক চিন্তা করতে উৎসাহ দেয়। নানাভাবে তাকে কাউন্সেলিংও দেয়া হয়। পাশাপাশি কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রওশন কবিরকে নির্দেশনা দেয়া হয় বিষয়টি ভালোভাবে তদন্ত করতে।

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, কুড়িগ্রাম ||

পুলিশের হস্তক্ষেপে প্রেমিকাকে বিয়ে করতে বাধ্য হলেন এক কলেজ শিক্ষক। তরুণীর বাড়ি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে। সম্প্রতি এই তরুণী পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইংয়ে অভিযোগ জানান, তার প্রেমিক কলেজ শিক্ষকের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। সম্পর্কের এক পর্যায়ে শিক্ষকের বিয়ের আশ্বাসে তারা অনেক গভীরভাবে মিশেছেন এবং গর্ভপাত করাতেও বাধ্য হয়েছেন। এরপর শিক্ষক তাকে বিয়ে করতে অস্বীকার করেন। এলাকায় বিচার না পেয়ে তিনি আত্মহত্যাও করতে চেয়েছিলেন।

শুক্রবার ২৮শে মে বিকেলে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স) মো. সোহেল রানার পাঠানো এক বার্তায় এসব তথ্য জানা গেছে। পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইং জানায়, ভুক্তভোগী তরুণী ও কলেজ শিক্ষকের সম্পর্কের বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হয়। ছেলেটি তাকে বিয়ে করতে অস্বীকার করে। এলাকার গন্যমান্য অনেকের শরনাপন্ন হয়েছেন ভুক্তভোগী তরুণী। প্রভাবশালী হওয়ায় ছেলের পরিবার কাউকে পাত্তা দেয়নি। স্থানীয় সব উপায়ের শরনাপন্ন হয়েও কোনো সমাধান বা বিচার না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েন তিনি। এরপর আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন। এই সময়েই এক পরিচিতজনের পরামর্শে মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইংকে ভুক্তভোগী তরুণী তার সমস্যার কথা লেখেন। তরুণী জানান, তিনি বাঁচতে চান এবং সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে চান।

মিডিয়া উইং প্রাথমিকভাবে তার পাশে থাকার আশ্বাস দেয়। তাকে ইতিবাচক চিন্তা করতে উৎসাহ দেয়। নানাভাবে তাকে কাউন্সেলিংও দেয়া হয়। পাশাপাশি কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রওশন কবিরকে নির্দেশনা দেয়া হয় বিষয়টি ভালোভাবে তদন্ত করতে।

অভিযোগের সত্যতা পেলে ভুক্তভোগী তরুণীকে যথাযথ আইনি সহায়তা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। সার্কেল এএসপি মো. সুমন রেজাকে বিষয়টি তদারকি করতে পরামর্শ দেয়া হয়। নাগেশ্বরী থানার ওসির ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও সার্কেল এএসপির তত্ত্বাবধানে বিষয়টি দ্রুত সমাধানের দিকে যায়। এলাকার চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধি ও গন্যমান্য ব্যক্তিদের উদ্যোগে ও উপস্থিতিতে একটি উৎসবমুখর পরিবেশে বিয়ে হয় ওই তরুণী এবং কলেজ শিক্ষকের।

পুলিশ সদর দফতরের এআইজি সোহেল রানা জানান, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইং সতর্ক এবং সচেষ্ট ছিল যেন উভয় পক্ষের মধ্যে সব ধরনের ভুল বুঝাবুঝি দূর করে একটি আত্মোপলদ্ধি ও সুসম্পর্কের মধ্য দিয়ে বিয়ে সম্পন্ন হয়। পুরো প্রক্রিয়ায় এসপি কুড়িগ্রাম সার্বিকভাবে পাশে ছিলেন।

এদিকে, বিয়ের পর ওই তরুণী (নববধূ) পুলিশকে লেখেন, ‘মহান আল্লাহর দরবারে শতকোটি শুকরিয়া। আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে। আমরা এখন স্বামী-স্ত্রী। ভাবতেই খুশিতে পাগল হয়ে যাচ্ছি আমি। স্যার, আল্লাহ আমার সঙ্গে কোনো অন্যায় হতে দেননি। আর এতকিছু সব সম্ভব হয়েছে শুধু আপনাদের জন্য। আপনাদেরকে ধন্যবাদ জানানোর ভাষা আমার জানা নেই। তবে আমি সারা জীবন আপনাদের জন্য দোয়া করবো। আল্লাহ আপনাদেরকে ফেরেশতা করে আমার কাছে পাঠিয়েছেন। আমাদের জন্য দোয়া করবেন, আমরা যেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত একসঙ্গে সুখে সংসার করতে পারি।’

সংবাদ সারাদিন